নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘ ৪৮ বছর ধরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর বিমানবন্দর আবার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।শমশেরনগর বিমানবন্দরটি ফের চালুর উদ্যোগের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
তিনি বলেন, সরকার ইতিমধ্যে শমশেরনগর বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বিমানবন্দরটি ফের চালু হওয়ার খবর শুনে সিলেট অঞ্চলের মানুষের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। অনেকেই ইতিমধ্যে নতুন করে বিমানবন্দরের আশপাশে স্থাপনা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। এলাকায় জায়গার দামও বাড়ছে কয়েক গুণ।
বিমানবন্দরটি চালু হলে সিলেটের শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের পাশাপাশি পর্যটন শিল্প বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
জানা যায়, দেশে তিনটি আন্তর্জাতিক ও ১২টি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর রয়েছে। এই অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে চলমান রয়েছে মাত্র পাঁচটি। বাকিগুলো রয়েছে বন্ধ। জরুরি অবতরণের জন্য দেশের তিনটি বিমানবন্দরের মধ্যে কেবল চালু রয়েছে তেজগাঁও বিমানবন্দর। অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ও বগুড়া বিমানবন্দরটি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় অভিযান চালানোর জন্য ব্রিটিশ সরকার মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর চা বাগানের ৬২২ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে একটি বিমানবন্দর গড়ে তোলে।
ব্রিটিশ আমলে ওই বিমানবন্দরটি ‘দিলজান্দ বন্দর’ নামেই পরিচিত ছিল। বিমানবন্দরটিতে ৬ হাজার ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭৫ ফুট প্রশস্ত রানওয়ে রয়েছে। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর বিমানবন্দরটির নতুন নামকরণ করা হয় ‘শমশেরনগর বিমানবন্দর’। প্রশস্ত রানওয়ে, বিশাল পরিসর, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা ও সব ধরনের অবকাঠামোগত সুবিধা থাকা এ বিমানবন্দরে স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত বিমান ওঠানামা করত। পরবর্তীতে বিমানবন্দরটিতে যাত্রীবাহী বিমান ওঠানামা বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৭৫ সালে শমশেরনগর বিমানবন্দরে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ ইউনিট খোলা হয়। বর্তমানে বিমানবন্দরের অবহেলিত ও পতিত ভূমি ব্যবহার করে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল কৃষিখামার। এখানে বিমানবাহিনীর রিক্রুটমেন্ট অফিসও খোলা হয়েছে। সংস্কার করা হয়েছে রানওয়ের অল্প কিছু অংশ। ২০১২ সালে বিএএফ শাহীন কলেজের কার্যক্রম শুরু করা হয়।
বিমানবন্দরটিতে প্রতিবছর বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর জাতীয় ক্যাডেট কোর বিমান শাখার সদস্যদের অগ্নিনির্বাপণ, প্রাথমিক চিকিৎসা, রাডার নিরাপত্তা, ফায়ারিংসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে শমশেরনগর বিমানবন্দর থেকে এ্যারোবেঙ্গল এয়ার সার্ভিসের ফ্লাইট চালু করা হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে এ ফ্লাইট সার্ভিসটি যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে পারেনি। পরে এ প্রক্রিয়াও এক সময় মুখ থুবড়ে পড়ে।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা সায়রা মহসিন বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করা যায় কিছু দিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে।
এ বিষয়ে জানতে মৌলভীবাজার ব্যাংক অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আবু তাহের সরকারের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, এটি ছিল মৌলভীবাজারবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। বিমানবন্দর চালুর মাধ্যমে ব্যবসা, বিনিয়োগ ও পর্যটন দিক দিয়ে এ অঞ্চল অনেক এগিয়ে যাবে।