নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন মানিকনগর এলাকার একটি ভবনেই বেসরকারি বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।সোমবার ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যান। এ সময় গেটে ঠুকতেই এক কর্মকর্তা বললেন, আজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাপ্তাহিক ছুটি সোম ও মঙ্গলবার’! ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান জবাব শুনে বিস্ময়ে থ হয়ে যান তিনি।
জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, যা দেখে এসেছি তাতে এটাকে বিশ্ববিদ্যালয় বলা মুশকিল। বড় জোর কোচিং সেন্টার বলা যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় মানের পড়াশোনার পরিবেশ সেখানে নেই। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, সোম ও মঙ্গলবার বাংলাদেশে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকতে পারে, এমনটা আগে কখনও শুনিনি। আবাসিক ভবনের পাশে ক্লাসরুম। তারা বলছে, ৪ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে, এটি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না।
পরিদর্শনে উপস্থিত ছিলেন ইউজিসির এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো পূর্ণকালীন শিক্ষার্থী নেই। সবাই খণ্ডকালীন। চাকরি, ব্যবসা ও অন্যান্য কাজের পাশাপাশি তারা এখানে বিভিন্ন বিষয়ে ডিগ্রি নিচ্ছেন। তারা শুক্রবার শুধু ক্লাস করেন। এভাবে আদৌ উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা যায় কি-না তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে। অপর এক কর্মকর্তা জানান, পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটি ভীষণ নোংরা। সোফার কুশন ও জানালার পর্দাগুলো ছেঁড়া এবং অপরিষ্কার। প্রতিটি ক্লাসরুমের দেয়ালগুলো লেখায় (নকলে) ভরা। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার আগেই দেয়ালে সব লিখে রাখেন। কর্তৃপক্ষ যেন এসব দেখেও দেখে না।
ইউজিসি সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সংশ্লিষ্ট ট্রাস্টেরও সরকারি অনুমোদন নেই। জামায়াতে ইসলামী ঘরানার কিছু ব্যক্তি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন জামায়াতঘেঁষা ইসলামী ব্যক্তিত্ব মাওলানা কামাল উদ্দিন জাফরী। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। ২০০২ সালের ২৩ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলে রাতের আঁধারে ছাত্রদল ও প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে পুলিশ বর্বর হামলা চালিয়ে ১৮ ছাত্রীকে গ্রেফতার করে। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের ৭৮ দিন অব্যাহত আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করেছিলেন আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী।
ইউজিসির ঝটিকা অভিযানে গতকাল ইউজিসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে আরও অংশ নেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের উপ-পরিচালক জেসমিন পারভীন, ইউজিসির উপ-সচিব শাহীন সিরাজ ও ডিলিং অফিসার আমিনুল ইসলাম শেখ।
এ অভিযান সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. ইউসুফ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে তারা সোম ও মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখেন। কারণ, তাদের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী নিয়মিত চাকরিজীবী। তারা শুক্র ও শনিবার ক্লাস করেন। তাই ওই দুই দিন বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রাখা হয়। তিনি জানান, তাদের সিন্ডিকেটের এ সিদ্ধান্তের রেজুলেশন তারা ইউজিসিকে জানিয়েছেন। তাই পরিদর্শনে এসে তাদের বিস্ময় প্রকাশ করা সমীচীন নয়। ট্রাস্টের অনুমোদন কেন নেই জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনুমোদন আছে। পাঁচ মাস আগেই তারা তা ইউজিসিকে অবহিত করেছেন। বিডি২৪লাইভ