হিলারি ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে তার সঙ্গে যারা ব্যক্তিগত কারণে দেখা করেছেন, তাদের অর্ধেক ব্যক্তি নিজে বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে অনুদান দিয়েছেন বলে বার্তা অ্যাসেসিয়েট প্রেস জানতে পেরেছে।
অ্যাসোসিয়েট প্রেস বলছে, এই তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশের নোবেল জয়ী মুহাম্মদ ইউনুসও।
নতুন এই তথ্যের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্ট হিসাবে হিলারি ক্লিনটনের নীতিকথার বিষয়টি আবার প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকা কালে হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে তিনবার দেখা করেছেন বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুস এবং টেলিফোনে কয়েকবার কথা বলেছেন।
এ সময় বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকের দায়িত্ব থেকে মুহাম্মদ ইউনুসকে পদত্যাগে দেশটির সরকার চাপ দিচ্ছিল। সে কারণে হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে দেখা করে সাহায্য চেয়েছিলেন মুহাম্মদ ইউনুস। তাকে সাহায্য করার কোন পন্থা খুঁজে বের করতে সহকারীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটন।
এপি বলছে, এ সময় গ্রামীণ আমেরিকা, যে সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন মি. ইউনুস, ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে এক লাখ থেকে আড়াই লাখ ডলার অনুদান দিয়েছে। গ্রামীণ রিসার্চ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান, যেটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও রয়েছেন মি. ইউনুস, সেই প্রতিষ্ঠান থেকেও ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার ডলার অনুদান দেয়া হয়েছে।
তবে ব্যাংকের মুখপাত্র বেকি অ্যাশ বলছেন, ওই ফাউন্ডেশনের ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ সম্মেলনে অংশগ্রহণের ফি হিসাবে ওই ডলার দেয়া হয়েছে।
অ্যাসোসিয়েট প্রেস বলছে, অনুদান দাতাদের তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশের নোবেল জয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের নামও।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত কারণে হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে দেখা করা বা ফোনে আলাপ করা ১৫৪ জন ব্যক্তির মধ্যে ৮৫ জনই তাদের পারিবারিক ফাউন্ডেশনে অনুদান দিয়েছেন। তাদের মোট অনুদানের পরিমাণ ১৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তবে এই ১৫৬ জনের তালিকায় মার্কিন ফেডারেল কর্মকর্তা বা বিদেশী সরকারের কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
এপি জানতে পেরেছে যে, হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে যারা সরাসরি বা ফোনে ব্যক্তিগত কারণে আলাপ করেছেন আর যারা ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে অনুদান দিয়েছেন, তাদের মধ্যে যেন একটি যোগসূত্র রয়েছে।
যদিও এর ফলে মার্কিন কোন আইন ভঙ্গ হয়নি। কিন্তু পুরো ব্যাপারটার মধ্যে একটি ইঙ্গিত রয়েছে যেন, তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সাক্ষাতের বিনিময়েই তারা ওই অনুদান দিয়েছেন।
সম্প্রতি হিলারি ক্লিনটনের যেসব ব্যক্তিগত ইমেইল এবং প্রকাশ হয়েছ, সেখানেও দেখা যাচ্ছে যে শীর্ষ অনুদান দাতাদের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।
তবে এপির ওই বিশ্লেষণকে ত্রুটিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন হিলারি ক্লিনটনের মুখপাত্র ব্রায়ান ফ্যালোন। তিনি বলছেন, হিলারি ক্লিনটনের বৈঠকগুলোকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং তাকে একপাক্ষিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে তার দায়িত্ব পালনের প্রথম অর্ধেকটা সময় এখানে উল্লেখ করা হয়েছে, পুরো সময়টা নয়।
এদিকে এই ঘটনার জেরে সমালোচনা মুখর হয়ে উঠেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলছেন, এখন এটা বোঝা খুবই কঠিন যে, কোথায় ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের শেষ আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শুরু। কারণ হিলারি ক্লিনটন পাবলিক অফিস ব্যবহার করে ব্যবসা শুরু করেছিলেন।
২০০০ সাল থেকে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরুর পর এ পর্যন্ত ৬ হাজার দাতা ২ হাজার কোটি ডলার দান করেছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ভবিষ্যতে অনুদান ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছেন হিলারি ক্লিনটন।
কিন্তু কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ ডগলাস হোয়াইট মনে করেন, এটা হয়তো খুব সহজ হবে না। কারণ এই ৬ হাজার দাতাতে এড়িয়ে যাওয়াটা তার জন্যে সহজ হবে না।
বিবিসি বাংলা থেকে নেয়া.