ডেস্ক রিপোর্ট : নিজের বেদনাদায়ক ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরতে লজ্জা ও অপরাধবোধ করছিলেন লরেন চোপেক। যৌন পাচার থেকে বেঁচে ফেরায় নিস্তব্ধ থাকাকেই পছন্দ করেছিলেন তিনি। তার মনে হয় যদি কোনভাবে নিরবে-নিভৃতে বাকি জীবনটা পার করা যেত সেটাই ভাল হত। সিএনএন
চোপেক চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলছিল, ‘সবকিছুর জন্য আমি নিজেকে দায়ী করতাম। তবে আমার সঙ্গে যা করা হয়েছে আমি চাইব না তা অন্য কারোর সঙ্গে করা হোক। আমি নোংরা। এটা আমার ত্রুটি।’
চোপেক অবশেষে মুখ খোলেন তার ভয়ঙ্কর যৌন জীবন নিয়ে। দূরে ঠেলে দেন লজ্জা ও অপরাধ বোধকে। কারণ সে জানে তার চুপ থাকার পরিবর্তে অপরাধীদের সম্পর্কে ধারণা দেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
চোপেক পল্লী গ্রাম ম্যানিতোবার একটি নিরাময় কেন্দ্রের কক্ষে বেশ শান্তভাবেই বসে রয়েছেন। আর এখন তার ব্যাপকভাবে প্রয়োজন ভালবাসা ও সুরক্ষা। তিনি বলেন, ‘এখন আমি দেখি, তখন আমি কেবলই একটি শিশু ছিলাম মাত্র।’
বর্তমানে লরেনের বয়ষ ১৯ বছর। যখন তাকে যৌন নির্যাতন করা হয় এবং যৌনতার জন্য জন্মস্থান উইনিংপেগ থেকে পাচার করা হয় তখন বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর।
কানাডায় আদিবাসী জনসংখ্যা খুবই কম। মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪ শতাংশ আদিবাসী। কানাডায় সব ধরনের যৌন পাচারের ভুক্তভোগীর অর্ধেকেরও বেশি আদিবাসী সম্প্রদায়ের। তাই চোপেকের এমন কাহিনী সেখানে বিরল কোন ঘটনা নয়। আর পেছনের কারণ বেশ জটিল ও বিচিত্র। তবে সর্বোপরি এর মূলে রয়েছে দারিদ্র্য, বর্ণবাদ ও নির্যাতন। আদিবাসী নারীদের ১ থেকে ২ হাজার মার্কিন ডলারে বিক্রি করা হয় যৌনদাসী হিসেবে।
চোপেক ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আমি একটি কারণে মূলত এসব খারাপ পছন্দ তৈরি করেছি। তুমি জান যখন তুমি যৌন নির্যাতনের শিকার হবে এটা তোমাকে প্রকৃতই দ্বিধাদ্ব›েদ্ব ফেলবে। তুমি কখনই জান না এটা তোমার ত্রæটি নাকি তাদের।
‘মা মাবি চি ইতাতা সেন্টার’ পরিচালনা করেন ডায়ান রেডস্কি। এ প্রতিষ্ঠানটি আদিবাসী নারী ও শিশুদের বিশেষত যৌন পাচারের ভুক্তভোগীদের পক্ষে কাজ করে। তার প্রতিষ্ঠান গ্রামের এ নিরাময় কেন্দ্রটি পরিচালনা করে। যেখানে বর্তমানে চোপেক অবস্থান করছেন। এছাড়া নিরাপদ আবাস, পুনর্বাসন ও ম্যানিতোবা জুড়ে প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে এটি।
রেডস্কি জানান, কানাডার আদিবাসীদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদি আচরণের ইতিহাস অনেক পুরনো। তাদের এ আচরণই আদিবাসীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও শোষণ চক্রকে পুষে রেখেছে। তিনি বলেন, যেখানে আদিবাসী নারীদের বিশেষত যৌন নির্যাতনের জন্য পুরো সমাজ টার্গেট করে থাকে, তখন তার বিরুদ্ধে লড়াই করা বাস্তবিকপক্ষেই কঠিন।
নির্যাতন কতটা প্রতারণাপূর্ণ হতে পারে তা দেখা গেছে ট্যানি লিটলের ঘটনায়। লিটলের পরিবারের বাসার সামনের রাস্তায় ফেলে তাকে যৌন নির্যাতন করা হয়। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১১। সে জানায়, তার চেয়ে বয়স্ক এক নারী তার বন্ধু সাজে। প্রথমে তাকে মাদকদ্রব্য সেবন করায়। অত:পর তাকে যৌন পাচার করে।
লিটল বলেন, আমার এখনও ওই সময়ের কথা মনে পড়ে। সে আমাকে একটি রুমে ঢুকিয়ে দেয়। অত:পর দুটি ছেলে রুমে আসে। তারা এক সঙ্গে না এসে একে একে এসে যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য করল। এরপর আরও অনেকে এসে যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য করে।
এসময় কারোর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে অস্বীকৃতি জানালে কি ধরনের শাস্তি পেতে হবে সে সম্পর্কে তার ধারণা খুব কমই ছিল। লিটল বলেন, আপনি যদি যৌন সম্পর্কে সম্মত না হোন তাহলে পেটানো হবে। আর কয়েকজন একসাথে মিলে ধর্ষণ করবে।
কানাডার ও স্বতন্ত্র এক সমীক্ষায় দেখা যায়, সেখানে সহিংস পরিস্থিতিতে আদিবাসী নারী ও মেয়েরা অ-আদিবাসীদের চেয়ে পাঁচগুন বেশি মরতে পছন্দ করে।
রেডস্কি বলেন, ‘আমরা এখনও এমন এক সমাজে বসবাস করছি যেখানে আদিবাসী নারীদের টার্গেট করা হচ্ছে। এখানে একটি আদিবাসী মেয়েদের মার্কেটও আছে। একটি সমাজ আদিবাসী নারীদের এতটা নিচু মনে করলে সেটি কোন দিকে যেতে পারে। আসলেই এখানে কোন মানবিক মূল্যবোধ নেই।’