নিজস্ব প্রতিবেদক : অরক্ষিত হয়ে পড়েছে যশোর-বেনাপোল রেলপথ। এ রুটে ৩৯টি ক্রসিংয়ের মধ্যে গেটম্যান নেই ৩১টি ক্রসিংয়ে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ক্রসিংগুলো। এত প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, হতাহত হচ্ছেন পথচারীরা। কিন্তু এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারি নেই।
রেল বিভাগ বলছে, এসব ক্রসিং এক সময় স্থানীয় মানুষের বরাদ্দকৃত অর্থে পরিচালিত হতো। কিন্তু এখন আর তারা রেল বিভাগের ফান্ডে টাকা জমা দেন না। ফলে ক্রসিংগুলোতে গেটম্যান রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ক্রসিংগুলো। এতে তাদের কিছু করার নেই।
বেনাপোল স্থলবন্দর এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, এই সড়কে রেলক্রসিং পার হয়ে প্রতিদিন অন্তত দুই হাজার আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ট্রাক যাতায়াত করছে। এছাড়া স্থানীয় যানবাহনতো চলছেই। চলাচল করছে শিশু শিক্ষার্থীদের বহনকারী স্কুলভ্যান। চলছে বেনাপোল থেকে খুলনা পর্যন্ত যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী রেল। সব সময় ব্যস্ত থাকে সড়কটি।
দিনে-রাতে অধিকাংশ সময় যানজটে রেল ক্রসিংয়ের ওপর আটকে পড়ে বিভিন্ন যানবাহন। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। এর আগেও ট্রেন ও পণ্যবাহী ট্রাকের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় অনেকে হতাহত হয়েছেন।
শার্শার বুরুজবাগান মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোমিন উদ্দিন জানান, গত বছর তার স্কুলের দুই ছাত্রী স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় নাভারণ কুন্দিপুর রেলক্রসিংয়ে দুর্টঘনায় প্রাণ হারায়। ঘটনাস্থলে গেট ও গেটম্যানের দাবিতে অনেক আন্দোলন করেও কোনো কাজ হয়নি।
শার্শা বাজারের পাশে রেলক্রসিংয়ে ফুটপাতের চা বিক্রেতা শিপন হোসেন জানান, রেলক্রসিংয়ে কোনো গেট ও গেটম্যান না থাকায় অনেককে দুর্ঘটনায় জীবন হারাতে দেখেছেন। অনেক সময় বেচা-কেনা না থাকলেও পথচারীদের সতর্ক করতে দোকান খুলে বসে থাকেন তিনি।
খুলনা রেলওয়ে থানার ওসি মোল্লা আফজাল হোসেন জানান, ২০১৫ সালের ৩১ জুন থেকে ২০১৬ সালের জুলাই পর্যন্ত যশোর-বেনাপোল রেলরুটে গেটম্যান বিহীন ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১০ জন। এর মধ্যে পাঁচ পুরুষ, চার নারী ও একটি শিশু রয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অনেকে।
বেনাপোল রেলস্টেশন মাস্টার আজিজুর রহমান দুর্ঘটনার আশঙ্কার কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি অনেকবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তারা না দেখলে আমার কিছু করার নেই।
যশোর রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী বদিউজ্জামান বলেন, যশোর-বেনাপোল রেলপথের ৩৪ কিলোমিটার রাস্তায় ৩৯টি ক্রসিংয়ের মধ্যে আটটি ক্রসিংয়ে অস্থায়ী গেটম্যান রয়েছে। এক সময় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে খরচ নিয়ে বন্দর এলাকার রেল ক্রসিংগুলোতে নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দেয়া হতো। এখন তারা খরচ বহন না করায় সেখানে রেলওয়ের কোনো তত্ত্বাবধান নেই। এতে ক্রসিংগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলে জানিয়েছি।