মঙ্গলবার, ৯ই অক্টোবর, ২০১৮ ইং ২৪শে আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

ঘরে বসে মোবাইলে ভোট দেওয়া যাবে

স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের ভোট প্রদান প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজ করার পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এটি বাস্তবায়ন হলে ভোটাররা মোবাইলে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে অসুস্থ এবং প্রবাসীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তারা জানান, সবার ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকারের সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউপি ভোট মোবাইলের ম্যাধ্যেমে নেওয়ার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। পরিকল্পনাটি কমিশন সভায় উঠানো হবে। সেখানে কশিমন অনুমোদন দিলে পরবর্তিতে এটি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবে ইসি। সেক্ষেত্রে একটি নতুন প্রকল্প নেওয়া হতে পারে।

সূত্র জানায়, বর্তমান ভোট প্রদান ব্যবস্থায় দেশের প্রায় ২০ হতে ৩০ ভাগ ভোটার তাদের ভোট প্রদান করতে পারে না। অর্থাৎ চলমান পদ্ধতির কারণে ২০ হতে ৩০ শতাংশ ভোটার তাদের নাগরিক অধিকার হতে বঞ্চিত হয়। দেশের আপমর ভোটার (সংখ্যালঘু ও অসুস্থ ভোটার) যাতে নির্বিঘ্নে তাদের ভোট প্রদান করতে পারে সে লক্ষে কাজ করবে ইসি।

তাছাড়া এ পদ্ধতির মাধ্যেমে একদিকে যেমন সকল ভোটার তাদের ভোট প্রয়োগ করতে পারবে তেমন আরও অনেক সুবিধা সৃষ্টি হবে। এটি প্রথমে স্থানীয় নির্বাচনে ব্যবহারে সফল হলে পরবর্তিতে জাতীয় নির্বাচনেও ব্যবহার হবে।

জানা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ব্যালট এবং ইভিএম দুটি ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ইভিএম ডিজিটাল পদ্ধতি হলেও কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে হয়। তাছাড়া ফলাফল কাগজে ম্যাধ্যমে উপজেলায় পাঠাতে হয়। নতুন পদ্ধতিতে কেন্দ্রে যেতে হবে না ভোটাররা ঘরে বসে মোবাইলে ভোট দিতে পারবেন। দেশে এগিয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল হচ্ছে। এ কারণে ইসি ভোট গ্রহণ ব্যবস্থাকে ডিজিটাল ও যোগ উপযোগী করার পরিকল্পনা করছে।

এদিকে গত বুধবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এ যুগে বিজ্ঞান সব কিছু সহজ করে দিয়েছে। মোবাইল ফোন থেকে টাকা পাঠানো যাচ্ছে। টাকা যেমন মানুষের প্রিয়, ভোটও প্রিয়। তাই ভোটও যেন মোবাইল থেকে দেওয়া যায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আগে ইভিএম হোক পরে মোবাইল ফোন থেকেও যেন ভোট দেওয়া যায় সেটি নিশ্চিত করতে ভাবতে হবে।

তিনি বলেন, এখন তো ডিজিটাল যুগ। তাই আমি ইভিএমে কোনো সমস্যা দেখি না। তবে, আগে ইভিএম হোক। আমরা এটি কেনার জন্য একনেকে পাস করে দিয়েছি। ইভিএম হোক এটি নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। এটা জনগণের ভোটের বিষয়কে সহজ করে দিয়েছে।

ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে এবং ভোট প্রক্রিয়া ডিজিটাল করতে ইসির পরিকল্পনায় যেসব বিষয় আনা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে:

১. রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ভোট প্রদানের জন্য সরকারিভাবে দশ আঙ্গুলের ছাপ ও আইরিশ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে সংগতি রেখে এক ব্যক্তির নামে শুধুমাত্র ভোট প্রদানের জন্য নির্বাচন কমিশনের সার্বিক তত্বাবধানে যে কোন একটি কোম্পানির সিমের মাধ্যম ভোটারদের রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

সেক্ষেত্রে সুবিধা হবে, ভোটগ্রহণে নিয়োজিত কর্মকর্তাসহ সকল নাগরিকের এবং প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত হবে। ভোট গ্রহণ কালে প্রাণহানীরর সম্ভনা থেকে বেরিয়ে আসা যেতে পারে। কেন্দ্র দখলের প্রবণতা দূর করা যাবে।

২. নির্বাচনের পূর্বে যে সকল ভোটার মোবাইলের মধ্যেমে ভোট দিতে চান তাদের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা হবে। ভোটারগণ ইসি সচিবালয় থেকে নির্দেশিত নাম্বারে (১২৩) এসএমএস প্রদান করবেন। এনআইডি শাখার বিপরীতে ১ টি ডাইলগ বক্স প্রেরণ করবেন (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বার, নাম ও জন্ম তারিখ) ভোটার ডাইলগ বক্স পূরণ করে এনআইডি শাখার নম্বারে এসএমএস প্রদানের পর এনআইডি শাখা অটমেটিক ভোটারদের একটি রেজিস্ট্রেশন নাম্বার প্রদান করবে যা ভোটারগণ ভোট গ্রহণের দিন ভোট প্রদানে ব্যবহার করবে।

এক্ষেত্রে সুবিধা হবে, বর্তমান বাস্তব জগতে ভোট দেওয়ার জন্য আর লাইনে দাড়িয়ে থেকে ভোট প্রদানের কষ্ট করতে হবে না। প্রবাসী ভোটরদের নির্বাচনে ভোটদানের সুবিধা হবে। চাকরিজীবীরা রেজিস্ট্রেশনের মধ্যমে ভোট প্রদান করলে নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটির প্রয়োজন হবে না।
ভোট গ্রহণ কর্মকর্তরা তাদের ভোট প্রদানের অধিকার হতে বঞ্চিত হবে না। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ভোট প্রদানে অসুবিধা হবে না।

৩. নির্বাচন কমিশন রেজিস্ট্রেশনের জন্য একটি টাইম লাইন প্রদান করবেন। টাইম লাইনের মধ্যে যে সকল ভোটার রেজিস্টেশন করবেন তাদের নাম বাদ দিয়ে রেজিস্ট্রেশন অফিসার কর্তৃক ভোটকেন্দ্রে ব্যবহারে জন্য ভোটার তালিকা মুদ্রণ করবেন। কোন কারণে মোবাইল কাজ না করলে রেজিস্ট্রেশনকৃত ভোটারদের জন্য একটি আলাদা তালিকাও মুদ্রণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সুবিধা হবে, রেজিস্ট্রেশনকৃত ভোটারগণ বিকেল ৩.৩০ ঘটিকার মধ্যে তাদের ভোট প্রদান করবেন এবং নির্ধারিত সময়ের পর সার্ভারটি অটোমেটিক ভোট গ্রহণ হতে বিরত থাকবে। সার্ভারে প্রাপ্ত ফলাফল প্রার্থীদের সম্মুখে প্রিন্ট করতে হবে এবং পিন্ট কপি সকল প্রার্থীকে দিতে হবে।

৪. ভোটরগণ রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বার উল্লেখ করে পছন্দকৃত প্রতীকে ভোট প্রদান করবেন। সার্ভারটি উপজেলা অফিসের হলরুমে থাকবে। এই হল রুমে সকল প্রার্থী প্রথমে নিজ নিজ ভোট প্রদান করবে এবং ভোটার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করবেন।
উপজেলা অফিসার বিকেল ৪টায় প্রার্থীদের ফলাফল হাতে দিবেন। এক্ষেত্রে সুবিধা হবে, ভোট গ্রহণের দিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী উপজেলা সদরে অবস্থান কারায় কেন্দ্র বিশৃঙ্খলা হবার সম্ভবনা কম। ভোটকেন্দ্রের ফলাফলই চুড়ান্ত ফলাফল না হওয়ায় কোন প্রার্থী ব্যালট পেপার চুরি বা দখলের চেষ্টা করবে না।

৫. কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ভোটকেন্দ্রের প্রাথীদের কর্তৃক অবশ্য নিয়োগকৃত নির্বাচনী এজেন্টের নিকট ম্যানুয়েল ভাবে প্রাপ্ত ভোটার ফলাফল বিবরণী প্রদান করবেন। পিজাইডিং অফিসার কর্তৃক কেন্দ্রের ফলাফল রিটার্নিং অফিসারের নিকট হস্তান্তর করা হবে।

সূত্র: বিডি২৪লাইভ