শুক্রবার, ১২ই অক্টোবর, ২০১৮ ইং ২৭শে আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

পল্লি বিদ্যুতের ভৌতিক বিলের ছড়াছড়ি

ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি : মো. ফারুক হোসেন পেশায় একজন গার্মেন্টকর্মী। স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকেন রাজধানী ঢাকায়। বাড়ি পিরাজপুর জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার চরবলেশ্বর গ্রামে।

এই উপজেলায় চলতি বছরজুড়ে চলছে শতভাগ বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম। তাই এলাকায় বিদ্যুতের নতুন সংযোগ দে‌ওয়ায় নিজ বসতঘরে একটি মিটার নামিয়ে রাখেন ফারুক হোসেন।

ঢাকায় থাকার সুবাধে মিটারটি সচল থাকলেও এক ইউনিট বিদ্যুৎও ব্যবহার করেননি ফারুক হোসেন। অথচ সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর নামের মিটারে (নম্বর ৮৮১৭০৩৩৫৫৭৭১) ১০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার দেখিয়ে বিল করা হয়েছে ৪৯৫ টাকা।

একই গ্রামের স্বাস্থ্যকর্মী জাহিদুল ইসলামের নির্মাণাধীন ভবনের নতুন মিটারে (নম্বর ৮৮১৭০৩৩৫৫৭৬৮) গত সেপ্টেম্বর মাসে ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার দেখিয়ে বিদ্যুৎ বিল তৈরি করা হয়েছে ১০৬৭ টাকা। অথচ এখন পর্যন্ত তিনি ওই নতুন ভবনে বসবাসই শুরু করেননি। বর্তমানে তিনি যে কাঠের ঘরে বসবাস করেন সেখানে দুইটি বাতি ও একটি ফ্যান চলছে। এতেই তাঁর বিল এসেছে হাজার টাকার ওপরে।

একইভাবে ওই গ্রামের সুমন হাওলাদারের (নম্বর ৮৮৭০২২৫৯৩৮৪) মিটারে সেপ্টেম্বর মাসে ১৮০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার দেখিয়ে বিল করা হয়েছে ৯৫২ টাকা। অথচ বাড়ির মালিক মাসের বেশিরভাগ সময়ই ছিলেন মেয়ে জামাই’র বাড়িতে।

আগস্ট মাসে ওই গ্রামের ভ্যানচালক দুলাল ফরাজীর বিদ্যুৎ বিল ছিল ৩৫০ টাকা। সেপ্টেম্বরের বিলের কাগজে তা পাঁচগুণ ছাড়িয়ে ১৮০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের ভৌতিক বিল দেখে হতবাক তিনি।

বালিপাড়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক জামাল হোসেনের (নম্বর ২৭৫২২৩) মিটারে গত আগস্ট মাসে বিদ্যুৎ বিল ছিল ২৮৫ ইউনিটে ১৬০২ টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর বিল এসেছে ৪০০ ইউনিটে ২৩২৪ টাকা। আগস্ট মাসে তার বাসায় আরো দুইজন ভাড়াটিয়া ছিলেন। সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর এক ভাড়াটিয়া বাসা ছেড়ে চলে যান। অথচ পরবর্তী মাসে ৭০০ টাকা বিল বেশি ধরা হয়েছে।

সেপ্টেম্বর মাসে বালিপাড়া হাই স্কুলের কেরানি শ্যামল চন্দ্রের বিদ্যুৎ বিল এসেছে ১৬৩২ টাকা। এত টাকা বিদ্যুৎ বিল এর আগে তাঁর কখনো আসেনি।

উপজেলা আাওয়ামী লীগ নেতা বালিাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হিরু খানের আগস্ট মাসে ৬৫০ বিদ্যুৎ বিল আসলেও সেপ্টেম্বরে ১১০০ টাকা করা হয়েছে। তাঁর হিসেবে গত মাসে বিদ্যুৎ ব্যবহার আরো কম হয়েছে।

পল্লি বিদ্যুতের এ রকম ভৌতিক বিলের কারণে ইন্দুরকানীতে গ্রাহকদের অসন্তোষ চরম পর্যায় পৌঁছেছে। মিটার রিডারদের অসচেতনতা আর মনগড়া বিলের কারণে প্রতিমাসে এভাবে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের গুণতে হচ্ছে দ্বিগুণ টাকা।

সেপ্টেম্বর মাসে বিলের কাগজ হাতে পাওয়ার পর ভৌতিক বিল দেখে অসংখ্য গ্রাহক স্থানীয় বালিপাড়া পল্লি বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ জানান। কেউ কেউ এখানে সুরাহা না পেয়ে পিরাজপুর পল্লি বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ নিয়ে হাজির হন।

এমন শত শত গ্রাহক পল্লি বিদ্যুতের মনগড়া বিলের কারণে মাসের পর হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ জন্য বিলম্ব ফিসহ সেপ্টেম্বর মাসের বিদ্যুৎ বিল ১২ অক্টোবরের মধ্যে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও অনেকের অতিরিক্ত বিলের কারণে তা এখনো অনেকে জমা দেননি বলে জানা গেছে।

পিরোজপুর পল্লি বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ নিয়ে আসা উপজেলার চরবলেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা স্বাস্থ্য সহকারী দেলোয়ার হোসেন বলেন, নতুন সংযাগ দেওয়ায় আমার বড় ভাই তাঁর বসতঘরের জন্য একটি মিটার নামিয়ে রাখেন। এক ইউনিটও বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়নি। অথচ ১০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার দেখিয়ে ৪৯৫ টাকা বিল করা হয়েছে।

এ নিয়ে আমি বিদ্যুৎ অফিসে চ্যালেঞ্জ করায় পর তা কমিয়ে মিটার সচল থাকার জন্য মাসিক মিনিমাম চার্জ বাবদ ১৫৬ টাকা বিল করা হয়। তিনি বলেন, ওই মিটার রিডার নাকি না জেনেই ১০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার দেখিয়েছিলেন।

তবে শুধু ফারুকই নন, এভাবে জাহিদুল ইসলাম, সুমন, দেলোয়ার হোসেনের বিদ্যুৎ বিল তৈরি হয়েছে মিটার না দেখে বাইরে থেকে ভবন দেখে অনুমানের ওপর নির্ভর করে। বিষয়টি এক মিটার রিডার অকপটে স্বীকার করেন। তবে মিটারের ডিসপ্লেতে সমস্যা ছিল বলে এমনটি হয়েছে বলে তিনি জানান।

ভ্যানচালক দুলাল অভিযোগ করেন, ‘আমার গত মাসে ১৮০০ টাকা বিল হয়েছে। এত পরিমাণ টাকা এর আগে কোনো মাসেই আসেনি। কীভাবে এতগুলো টাকা দেব বুঝতে পারছি না।’

ইন্দুরকানীর বালিপাড়া পল্লি বিদ্যুৎ অফিসের ইনচার্জ মো. ইসলাম হোসেন বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসায় আমাদের এখানে অনেক গ্রাহক বিলের কাগজ নিয়ে অভিযোগ জানাতে এসেছিল। তবে মিটার রিডাররা বিল প্রস্তুত করায় আমাদের এ বিষয়ে হাত নেই বলে তিনি জানান। এসব বিষয় নিয়ে তিনি পিরোজপুর জেলা পল্লি বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। কালের কণ্ঠ