অস্তিত্বের লড়াইয়ে সেই ডাক
একসময় ছিল যখন ঘর থেকে দূরে দেশে বা দেশের বাইরের থাকা প্রিয় মানুষ বা নিকট আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় হাতে লেখা চিঠিই একমাত্র ভরসা। প্রিয় মানুষের সেই চিঠির প্রতি ছিল অন্যরকমের এক ভালোলাগা। কিন্তু আধুনিক সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাতে লেখা চিঠির সেই গুরুত্ব এখন তেমন আর নেই। যোগাযোগের জন্য মানুষের হাতে হাতে এখন স্মার্ট ফোন। কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম মানুষের মধ্যে যোগাযোগকে সহজ করে তুলেছে। অন্যদিকে একস্থান থেকে অন্যস্থানে টাকা পৌঁছানোর জন্যও চালু হয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি সেবা।
এ অবস্থায় দেশের ডাক বিভাগ তার রুগ্ন সেবা ও স্বল্প জনবল দিয়ে নিজ অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করছে। টিকে থাকতে গত কয়েক বছর ধরে আধুনিক সেবা দিয়ে সেবাগ্রহীতাদের আস্থায় আনতে চাচ্ছে বিভাগটি। আর প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে ডিজিটাল হওয়া ছাড়া ডাক বিভাগের কাছে আর কোনো উপায়ও নেই। এই অবস্থায় আজ দেশব্যাপী পালিত হবে বিশ্ব ডাক দিবস। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ নিয়ে মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন। জনবলের অভাব, দেরিতে চিঠি পৌঁছানোসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এই বিভাগটি। তবে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নিজেদের নানা সমস্যা কাটিয়ে আধুনিক রূপে সাজাতে বিভাগটি এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ডাক বিভাগকে আধুনিক করতে বর্তমান আওয়ামী সরকার ক্ষমতার প্রথম মেয়াদে সংসদে ‘পোস্ট অফিস অ্যাক্ট ১৮৯৮’ এই পুরনো আইনটি পরিবর্তন করে। পাস করা হয় নতুন পোস্ট অফিস আইন।
ডাক বিভাগ কর্তৃপক্ষ জানান, দুই দশক আগেও ডাক বিভাগ বছরে ২২ কোটি চিঠি পরিবহন করত। অথচ ২০১০ সালে এই সংখ্যা কমে ১৫-১৬ কোটিতে দাঁড়ায়। আর এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে এবং ডাক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিক করার লক্ষ্যে ডাক বিভাগকে তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে আধুনিক করা হচ্ছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসের সঙ্গে জনপ্রিয়তায় টিকতে এবং সড়কপথে উন্নত সেবা দিতে বর্তমানে দেশে ১৯টি মেইল গাড়ি ব্যবহার করা করা হচ্ছে। এ জন্য ১১৮টি গাড়িসহ মোট ২০০টি পরিবহন ক্রয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে ডাক বিভাগ। এ ছাড়া দেশের ৮৩৮টি ডাকঘরে পোস্টাল ক্যাশ কার্ড সার্ভিস প্রদান করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে স্থানীয় সরকার বিভাগ ১৪ হাজার ১২৭টি অতি দরিদ্র পরিবারকে পোস্টাল ক্যাশ কার্ডের মাধ্যমে ভাতা পরিশোধ করা হচ্ছে। আট হাজারটি গ্রামীণ পোস্ট অফিস এবং ৫০০টি উপজেলা ডাকঘরকে ই-সেন্টার হিসেবে রূপান্তরের কাজও এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। ‘পোস্ট ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’ প্রকল্পের আওতায় মোট আট হাজার ৩০০টি অফিসে ই-সেন্টার চালু করা হয়েছে। এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাম-ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থিত ডাকঘরে কম্পিউটার কম্পোজ, প্রিন্ট, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, স্ক্যানিং, ছবিতোলা, অনলাইনে কথা বলা ও ভিডিও কনফারেন্সের সুবিধা পাওয়া যাবে।
এ ছাড়া ডাক বিভাগের উদ্যোগে ইতিমধ্যে চালুকৃত পোস্টাল ক্যাশ কার্ডের মাধ্যমে সঞ্চয় ব্যাংকের সাধারণ হিসাব পরিচালনার ক্ষেত্রে মুনাফা নির্ধারণ, সঠিক সময়ে মুনাফা না পাওয়া বা মুনাফা কম বেশি হওয়ার সমস্যা দূর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর ডাক জীবন বীমার দাফতরিক কার্যপ্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়করণ প্রকল্পের মাধ্যমে ডাক জীবন বীমার পলিসি আবেদন প্রক্রিয়াও সহজ হবে।