বৃহস্পতিবার চার প্রকল্প উদ্বোধন করবেন শেখ হাসিনা-মোদি
---
নবনির্মিত দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস রেলসেতুতে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেতু দুটির উদ্বোধন করবেন। একই সঙ্গে খুলনা-কলকাতা রুটে চালু হবে ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ নামে নতুন একটি ট্রেন সার্ভিস। একই দিন থেকে ঢাকা-কলকাতা রুটের মৈত্রী এক্সপ্রেসও চলবে ‘বিনা বাধায়’।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় ঢাকায় শেখ হাসিনা ও দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদি নিজ নিজ কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই চার প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। তাদের সঙ্গে এই উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কলকাতা থেকে যুক্ত হবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাদেশের রেল মন্ত্রণালয় ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
রেল মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিদ্যমান ভৈরব ও তিতাস সেতুর পাশে ভারতীয় ঋণ সহায়তায় (এলওসি) নতুন দুটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। পুরনো সেতু দুটি নির্মাণ করা হয় ১৯৩৭ সালে। নতুন সেতু নির্মাণের ফলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে রেল যোগাযোগ আরও সহজ হবে। যাতায়াতে সময় কমবে। গত ৮০ বছর ধরে সেতু পারাপারের বিপরীতমুখী ট্রেনগুলোকে ‘ক্রসিংয়ে’ আটকে থাকতে হতো।
২০১০ সালের ৯ নভেম্বর সেতু দুটির নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক। এক হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পে ভারত ঋণ দিয়েছে ৮২৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। বাকি টাকা জোগান দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। আশুগঞ্জ ও ভৈরবে মেঘনা নদীর ওপর ৬২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৮২ দশমিক ২ মিটার দীর্ঘ ডুয়েল গেজ রেলসেতুর নির্মাণ কাজ করেছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইরকন ও এফকন জেভি। ২০১৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রায় চার বছর পর তা ট্রেন চলাচলের জন্য খুলতে যাচ্ছে। দ্বিতীয় তিতাস রেলসেতুর দৈর্ঘ্য ২১৮ মিটার।
এদিকে, বৃহস্পতিবার থেকে সহজ হচ্ছে ঢাকা-কলকাতা রুটে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে যাতায়াত। তিন ঘণ্টা যাত্রা সময় কমছে। এতদিন চুয়াডাঙ্গার দর্শনা ও মুর্শিদাবাদের গেদে সীমান্তে মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রীদের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হতো। এখন ঢাকা থেকে ট্রেন ছাড়ার আগেই বাংলাদেশ অংশের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হবে। গন্তব্য শেষে কলকাতায় হবে ভারতীয় অংশের ইমিগ্রেশন।
বৃহস্পতিবার থেকে খুলনা-কলকাতা রুটে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হচ্ছে বন্ধন এক্সপ্রেস। আগামী ১৬ নভেম্বর থেকে নিয়মিত শিডিউলে ট্রেনটি চলাচল করবে। এতে আসন সংখ্যা ১৫৬টি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বার্থের ভাড়া হবে এক হাজার ৫০০ টাকা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আসনের ভাড়া এক হাজার টাকা। বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে বন্ধন এক্সপ্রেস খুলনা থেকে কলকাতার উদ্দেশে যাত্রা করবে। যশোরের বেনাপোল অতিক্রম করবে দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে। কলকাতায় পৌঁছবে ভারত সময় সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে। কলকাতা থেকে ভারত সময় সকাল ৭টা ১০ মিনিটে যাত্রা করে খুলনায় পৌঁছাবে বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে।
শুক্রবার থেকে মৈত্রী এক্সপ্রেসের সময়সূচিতেও পরিবর্তন আসছে। ঢাকা থেকে সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে যাত্রা করে দর্শনায় পৌঁছাবে দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে। বিকেল ৪টায় কলকাতায় পৌঁছাবে। কলকাতা থেকে সকাল ৭টা ১০ মিনিটে যাত্রা করে ঢাকায় ফিরবে বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে।
দিল্লিতে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শংকর উপস্থিত থাকবেন। দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীও অনুষ্ঠানে থাকবেন।
এদিকে কলকাতা স্টেশনে একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক রেল টার্মিনাল, অভিবাসন ও কাস্টমস পরিসেবা উদ্বোধন করা হবে। কলকাতা রেলস্টেশনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন সংসদ সদস্য ও ভারতীয় রেলের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, স্থানীয় বিধায়ক মালা সাহা প্রমুখ।
বন্ধন এক্সপ্রেস চালুর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৫২ বছর পর খুলনা ও কলকাতার মধ্যে আবার চালু হচ্ছে যাত্রীবাহী ট্রেন। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর এই ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যায়। গত ৮ এপ্রিল পরীক্ষামূলকভাবে এই যাত্রীবাহী ট্রেনটি কলকাতা-খুলনা রেলপথে চালানো হয়।