g অচল ঢাকার রাস্তা : সচল ২ মেয়র | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

মঙ্গলবার, ১০ই অক্টোবর, ২০১৭ ইং ২৫শে আশ্বিন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

অচল ঢাকার রাস্তা : সচল ২ মেয়র

AmaderBrahmanbaria.COM
জুলাই ১২, ২০১৭
news-image

---

ঘড়ির কাঁটায় দুপুর বারোটা কিছুক্ষণ আগেই বেজে গেছে। তারচেয়েও বারোটা বেজে গেছে বুধবার যারা ঢাকার রাস্তায় গন্তব্যে বের হয়েছেন, তাদের। দুপুর গড়িয়ে গেলেও তারা সকাল থেকে গাড়ির মধ্যে আটকা বসে আছেন রাজধানীর বিভিন্ন রুটে। তাদের দুজন নির্বাচিত মেয়রকে অবশ্য রাস্তায় দেখা যায়নি। ঈশ্বর যেমন ভদ্র পল্লীতে থাকেন তারাও তেমনি সিটি কর্পোরেশনের অফিস বা অন্যত্র থাকেন। মাঝে মধ্যে টেলিভিশনে দেখা যায়। সমাবেশে কদাচিত দেখা মেলে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে বৃষ্টি হওয়ায় ঢাকার রাস্তাঘাট যতটা না ডুবে গেছে তারচেয়েও উন্নয়নের খানাখন্দে পরিস্থিতি আরো বিগড়ে গেছে। অতএব মেয়ররা তারা পূর্বসূরীদের মতই বলবেন, ঢাকাকে বাসযোগ্য, গ্রিন ঢাকা, তিলোত্তমা করতে সময় লাগবে। হাতির ঝিল হয়েছে। আরো হবে এবং হচ্ছে।

মিরপুর ১ নম্বর থেকে বুধবার সকালে টেকনিক্যাল মোড় পর্যন্ত আসতে সময় লেগেছে কমবেশি দেড় ঘন্টা। এক রুটের গাড়ি অন্য রুটে ঢুকে গেছে। গলিপথে রিকশায় পানি পার চলছে ১০/২০ টাকায়। ঢাকার এক মেয়র সাঈদ খোকন বলেছিলেন, এ বছর ঢাকার রাস্তায় বর্ষার জল আটকাবে না। বর্ষা তার কথা রাখেনি। এবার আরেক মেয়র আনিসুল হক বলেছেন, পানির জন্যে ওয়াসা দায়ী। ওয়াসা হয়ত বলবে অমুক সংস্থার দোষ। অমুক সংস্থা বলবে, বাজেট বরাদ্দ হওয়ার আগেই বর্ষা এসে গেছে। আসলে দোষী জনগণ। তাদের জন্যে উন্নয়নতো সব সরকারই করছে। উন্নয়ন হয় কিছু মানুষের পকেট ভারি করার জন্যে। জনগণেরতো ফি বছর জলবন্দী হয়ে আল্লাহকে দোষ দেয়া ছাড়া তাদের আর কি করার আছে। হাজার হাজার মানুষ অসহায় হয়ে  স্টপেজে স্টপেজে গাড়ির জন্যে অপেক্ষা করেছেন। কোনো গাড়ি মাঝ পথেই ঘুরিয়ে দিয়েছে, নেমে যেতে হয়েছে অফিসগামীদের। কোনো পরীক্ষার্থ ী আটকা পড়ে অসহায় হয়ে অভিভাবকদের মোবাইল ফোনে উপায় বাৎলে দিতে বলেছে,  কেউ কেউ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে।

মেয়র সাঈদ খোকন আরো বলেছিলেন, এগিয়ে যাচ্ছে ঢাকা। শান্তিনগরে মাছের চাষ করলে তাও উন্নয়নের খাতায় যোগ হবে। ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর একনেক ঢাকার জলাবদ্ধতা দূর করার জন্যে ৫ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা অনুমোদন দেয় তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়নে। ঢাকার বাইরে ফরিদপুরে এক কুমার নদী অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করতেই আড়াই’শ কোটি টাকা ব্যয় করছে সরকার। ঢাকা নয় তাবৎ বাংলাদেশ জুড়েই এমন সব বিশাল উন্নয়নের ফিরিস্তি লিখে শেষ করা যাবে না।
প্রতিদিন সকালে মিরপুর রুটে কল্যানপুর থেকে আসাদগেট এমনকি ধানমন্ডি ২৭ নম্বর পর্যন্ত রাস্তায় যে খানাখন্দ দেখা যায় আর গাড়ির জিগজাগ চলাফেরার ঝক্কি তাতে আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সাড়ে চার লাখ কোটি টাকার বাজেট ‘পিনাট’ বলেই মনে হয়। শুধু ক্রিসেন্ট লেকের রাস্তার দিকে কারো চোখ যদি ভুলে চলে যায় তাহলে আপন মনেই মুখ দিয়ে নীরবে বের হয়ে আসে ‘রাবিশ’।

ঢাকার জন্যে কাউকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। ঢাকার ছোট বড় অর্ধশত খাল গিলে কারা ভরাট করে সেখানে বাড়ি বানিয়েছে তা সবাই জানে। রাজউক ফিবছর এমন অনেক জলাশয় ভরে সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে গণমান্য নাগরিকদের জন্যে অনেক আবাসন প্রকল্প করেছে। এসব প্রকল্পে ঢাকায় বৃষ্টির পানি গড়িয়ে রাখার সুযোগ রাখা হয়নি। খালের পানি কখনো ড্রেন দিয়ে নামতে পারে না। ড্রেন ভরাট হয়ে গেছে। বক্সকালভার্ট করলেও তা আবর্জনা জমে পুরু হয়ে গেছে অর্ধেক। অতএব প্রকৃতি ভরসা। দেমাগ না দেখিয়ে দুই মেয়র সমন্বয় নামক বস্তু ব্যবহার করে খাল দখলদারদের হাত থেকে ফিরিয়ে আনতে পারলে হয়ত কোনো পথ বের হতে পারে। হিমঘরে সেমিনার অনেক হয়েছে, এবার নাগরিকদের নিয়ে কাজে নামুন।

তারা যদি বিলবোর্ডের বিরুদ্ধে জেহাদ করতে পারেন তাহলে জলনিষ্কাশনের পথ কেন বের করতে পারবেন না। ইতালির ভেনিসে এখনো খালে পর্যটকরা ঘোরেন। জার্মানির রাইন নদীতে ডাবের খোসা দূরের কথা আঙ্গুল চুবালেই শাস্তি দেওয়া হয়। তো বুড়িগঙ্গার দূষণ চাঁদপুর পর্যন্ত কি একদিনে কোনো এক মেয়রের শাসনামলে গিয়েছে? আদতে কোনো মেয়রই কাজ করেন না। ঢাকার রাস্তায় আবর্জনা সময় মত সরিয়ে ফেলার মুরোদ পর্যন্ত নেই। তারা পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা করেননি। যা করেন তা হচ্ছে কোটি কোটি টাকার বাজেট উন্নয়ন। তাতে তাদের উন্নয়ন কতটা হয় তা জানার সহজ উপায় না থাকলেও জনগণের কতটা কাজে লাগে তা পরিস্কার। 

সত্তরের দশকে ঢাকার আবর্জনা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠান। কমিশনের ভাগবাটোয়ারায় বনিবনা না হওয়ায় তা আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। আলোর মুখ দেখতে হলে কমিশন অনেকের পকেট পর্যন্ত যেতে হয়। ঢাকার বসিলায় সেতু করার আগে কেউ চিন্তা করেনি ওপার থেকে হাজার হাজার মানুষের বাড়তি চাপ সহ্য করার মত ফ্লাইওভার কিংবা বিকল্প রাস্তার প্রয়োজন আছে কিনা, জাপান গার্ডেন সিটি করার আগেই মোহাম্মদপুরে নতুন কোনো রাস্তা হয়নি। যা হয়েছে শহর বেড়েছে বসিলা হয়ে আরো দূর পর্যন্ত। মানুষের যাতায়াত বেড়েছে। রাস্তা বাড়েনি। বেড়েছে সকাল বেলায় নিয়মিত যানজট চেনা পথে। এদেশে যমুনা সেতু আগে হয়েছে, বাইপাস সড়ক পরে। পদ্মা সেতুর বেলায় তা হচ্ছে না। আশা আছে জনগণকে নিয়ে জনগণের ভোটে কোনো নির্বাচিত সরকার যদি জনগণের কাজে লাগে এমন কোনো উন্নয়নের পথে আগাতে থাকে। যদি সত্তরের দশকেই আবর্জনা থেকে ঢাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হত তাহলে আবর্জনা এতদিন পণ্য হয়ে উঠত। বিক্রি হত। বুড়িগঙ্গা দূষণ থেকে বাঁচত। যারা তা হতে দেয়নি তাদের কোনো দিন কিছু হয় না, ভবিষ্যতেও কি তারা জবাবদিহিতার বাইরে থাকবেন। আর নতুন করে বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত করতে ফের হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার ফন্দি করবেন। তারা ফন্দি না করলেও মানুষের বিপদ, করলে আরো বেশি বিপদ। একেই বলে প্রচলিত উন্নয়নের শাখের করাত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আক্ষেপ করে বলেছিলেন, টাকা থাকলে তিনি ঢাকাকে আরো কয়েক টুকরায় বিভক্ত করতেন। আমরা আরো মেয়র পেতাম। কিন্তু তাতে কি বিড়ম্বনা কমত। উন্নয়ন বাড়ত,দুর্ভোগ কমত না।