দুঃসময়ে ক্রিকেটার চামেলীর পাশে সাকিব-মুস্তাফিজ
স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের হয়ে খেলেছেন রাজশাহীর চামেলী খাতুন। মাঠ কাঁপানো সেই অলরাউন্ডার এখন পার করছেন জীবনের চরম দুঃসময়। অবশ হয়ে যাচ্ছে তার শরীরের একাংশ। স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে না পারায় বিছানাতেই কাটছে তার দিন।
মঙ্গলবার দৈনিক ইত্তেফাকের ৭ এর পাতায় ‘অর্থাভাবে মৃত্যুশয্যায় নারী ক্রিকেটার চামেলী’ শীর্ষক শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পর তার পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান। জাতীয় দলের এ দুই তারকা ক্রিকেটার আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। চামেলী নিজেই সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, আমার এই কঠিন সময়ে এগিয়ে এসেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি তার প্রতিনিধির মাধ্যমে আমার খোঁজখবর নিয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। সাকিব আল হাসান ভাই ফোন দিয়েছিলেন। তিনিও সর্বাত্মক আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।’ চামেলীর কথায়, সাকিব-মুস্তাফিজের সহায়তার আশ্বাসে তিনি আবার স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশায় বুক বাঁধছেন।
রাজশাহী মহানগরীর দরগাপাড়ায় চামেলী খাতুনের বাড়ি। দুই ঘরের জরাজীর্ণ বাড়িতেই কাটছে তার দিন। মেরুদণ্ডের দুই হাড়ের ফাঁকে থাকা নরম ডিস্কগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চামেলীর শরীরের পুরো ডান পাশ অবশ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় দ্রুত দেশের বাইরে সার্জারির পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এতে প্রয়োজন অন্তত ১০ লাখ টাকা। কিন্তু সেই সামর্থ্য নেই চামেলীর পরিবারের।
জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই চামেলী খেলাধুলায় মনোযোগী। ২০০৭ সালে প্রথম ফুটবল খেলার মধ্যে দিয়ে তার অভিষেক ঘটে চামেলীর। পরে চামেলী ক্রিকেট অনুশীলন শুরু করেন। ২০০৮ সালের আনসার ভিডিপির হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন তিনি। ঘুরেছেন চীন, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ভারত। পরে নিজের চেষ্টায় জায়গা করে নেন জাতীয় নারী ক্রিকেট দলে। জাতীয় পর্যায়ের অ্যাথলেটিক্স, এবং প্রমীলা ক্রিকেটেও চামেলী দেখিয়েছেন তার নৈপুণ্য।
চামেলী আরও জানান, ২০১১ সালে আবাহনী ক্রীড়া চক্রের মাঠে তিনি অনুশীলনে যান। সেখানেই তার পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। এতে দৌঁড়ানো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় তার। নিজের ইচ্ছায় জাতীয় দল থেকে অবসর নেন। পরে দেখা দেয় মেরুদণ্ডের হাড়ে ব্যথা। এই অসুস্থ অবস্থায় দীর্ঘ আট বছর ধরে খেলার মাঠ থেকে বাইরে চামেলী। জীবিকার তাগিদে চামেলী চাকরি নিয়েছিলেন আনসার ভিডিপি অফিসে। চাকরি করে পরিবার ও এক বোনের ভরণপোষণ চালাচ্ছিলেন নিজেই। কিন্তু অসুস্থতাজনিত কারণে অফিস করতে পারছেন না নিয়মিত।
বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে চার দেয়ালের মধ্যে সময় কাটছে তার। চিকিৎসকের পরামর্শে চামেলীকে প্রায়ই থেরাপি দিতে হয়। পরিবারের আর্থিক টানাপোড়নের কারণে হেঁটেই যান থেরাপি দিতে। ওষুধ ফুরিয়ে গেলে টাকার অভাবে কখনও কখনও কেনাও হয় না। জীবনের এই কঠিন সময়ে বাঁচার আকুতি নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও (বিসিবি) সাহায্য চেয়েছেন একসময়ের এই দাপুটে নারী ক্রিকেটার।
চামেলী বললেন, তিনি বাঁচতে চান। আবারও ফিরতে চান স্বাভাবিক জীবনে। হাঁটতে চান আর ১০ জন মানুষের মতো স্বাভাবিকভাবে। তিনি বলেন, ক্রিকেট আমার রক্তে মিশে আছে। ভালোবাসার এই খেলাটি রেখে দম বন্ধ হয়ে আসে বাড়িতে বসে থাকতে। টেলিভিশনে টিমমেটদের মাঠে খেলতে দেখলে কলিজা ছিঁড়ে যায়। মনে হয়, আমি সুস্থ থাকলে এই টিমে খেলতাম।