শ্রমিকরা অ্যাম্বুলেন্স ছেড়ে দিলেই হয়তো বেঁচে যেত আমার ভাতিজি
দুবাই প্রবাসী কুটন মিয়া। তার একমাত্র সন্তান ছায়েদ আহমদের জন্ম হয়েছে ১২ বছর আগে। খুব ইচ্ছে ছিল তার ঘর আলো করে একটি কন্যা সন্তান আসবে। অবশেষে ৭ দিন আগে একটি কন্যা সন্তান আসে তাদের ঘর আলো করে। সেই কন্যা সন্তানটি আজ মারা গেছে। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার সময় পথে পরিবহন শ্রমিকরা তাকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে দিলে রাস্তায় মৃত্যু হয় তার। ১২ বছর পরে গর্ভে আসা সন্তানকে হারিয়ে নির্বাক মা সায়রা বেগম। বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন তিনি। একটু পরপর জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি। জ্ঞান ফিরলেই প্রলাপ করছেন। অনেকে অনেক ভাবে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করেছেন কিন্তু তার বিলাপ থামছে না।
জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন নিহত শিশুটির চাচা হাজী আকবর আলী। তিনি জানান, জীবনে অনেক আন্দোলন দেখেছি কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স আটকায় এমন আন্দোলন কখনও দেখিনি।তিনি জানান, গত রাত থেকে আমার ভাতিজি কোনো কিছু খাচ্ছিল না, শুধু কাঁদছিল। সকালে আমরা শিশুটিকে বড়লেখা উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত সিলেট নেয়ার জন্য বলেন। চিকিৎসকের কথামতো আমরা তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই।
সিলেট যাওয়ার পথে প্রথমে বড়লেখা উপজেলার দরগাবাজারে অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। অনেক মিনতি করার কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দেয় তারা। একইভাবে দাসেরবাজার এলকায় আবার তাদের আটকানো হয়। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে চান্দগ্রাম বাজারে আবারও শ্রমিকরা গাড়িটি আটকায়। এসময় তারা আমাদের আটকিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালককে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করে। আমরা বারবার বলি দ্রুত সিলেট যেতে হবে নয়তো শিশুটিকে বাঁচানো যাবে না তবুও পাষণ্ডদের মন গলেনি।
আমরা সবাই তাদের কাছে জোর হাতে ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করি। মৃত শিশুটির মা এমন কিছু নেই যা বলেনি। কিন্তু তারা আমাদেরকে যেতে দেয়নি প্রায় দেড় ঘণ্টা আটকে রাখে আমাদের। অবশেষে সেখানেই মারা যায় আমার ভাতিজি। পরে আমরা বিয়ানীবাজার হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছি, আজ রাতেই মামলা করবো।বড়লেখা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকরতা (তদন্ত) জসিম উদ্দিন জানান, এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
সূত্র: জাগো নিউজ