তিল ধারণের ঠাঁই নেই চট্টগ্রাম কারাগারে!
তিল ধারণের ঠাঁই নেই চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। ছয়টি ভবনের ১২০টি ওয়ার্ডের অভ্যন্তরে বাস করছেন ধারণক্ষমতার সাড়ে পাঁচগুণ বেশি বন্দি। ওয়ার্ডগুলোর বারান্দায় বাস করছে আরো চারগুণ বেশি বন্দি।চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক ধারণ ক্ষমতার সাড়ে ৯ গুণ বেশি বন্দি নিয়ে বিপাকে পড়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এ কারাগারে বন্দি ধারণ ক্ষমতা এক হাজার ৭১৩ জন। কিন্তু বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্দির সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৫৯৮ জন।
কারাগারের ছয়টি ভবনের ১২০টি ওয়ার্ডে গাদাগাদি করে থাকছেন ৬ হাজারেরও বেশি বন্দি। ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দায় থাকছেন তিন হাজারেরও অধিক বন্দি। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম কারাগারে আরো দুটি নতুন ওয়ার্ড খোলার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।তিনি বলেন, সামপ্রতিক সময়ে কারাগারে বন্দির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কারাগারের ওয়ার্ড, সেল, হাসপাতাল কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। বিশেষ করে নাশকতা ও মাদকবিরোধী মামলার আসামির সংখ্যা বাড়ায় বন্দির থাকার জায়গা সংকুলান করতে বেগ পেতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, যে হারে বন্দি বাড়ছে তার তুলনায় জামিন পাওয়া বন্দির সংখ্যা অনেক কম। তাই প্রতিদিনই বন্দির সংখ্যা বাড়ছে। এ অবস্থায় রোদ বৃষ্টিতে কিছুটা সমস্যা হলেও আমাদের করার কিছুই নেই। তারপরও বন্দিদের থাকার ব্যবস্থা করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।তিনি জানান, কারাগারে বন্দিদের খাবার, চিকিৎসা কিংবা পানীয়জল এসবের কোনো সংকট নেই। বন্দি বাড়লেও এসবের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে। কিন্তু জায়গার ব্যবস্থা চাইলে হঠাৎ করে করা সম্ভব নয়। তবে বন্দির সংখ্যা বাড়তে থাকায় ইতিমধ্যে দুটি নতুন ওয়ার্ড তৈরির কাজ চলছে। যেখানে প্রতি ওয়ার্ডে ১৮০ জন করে ৩৬০ বন্দি রাখা যাবে।
সূত্র জানায়, ১৮৮৫ সালে চট্টগ্রাম জেলা কারাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৯ সালের ১৬শে সেপ্টেম্বর ১৬ দশমিক ৮৭ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার। এর মধ্যে কারাভ্যন্তরে ভূমির পরিমাণ ১১ দশমিক ৫৫ একর। কারাগারের বাইরে ভূমির পরিমাণ পাঁচ দশমিক ৩২ একর।কাগজে-কলমে এক হাজার ৭১৩ জন বন্দির ধারণ ক্ষমতাসমপন্ন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে এক হাজার ৫৬৮ জন পুরুষ ও ১৪৫ জন নারী বন্দি থাকার জায়গা রয়েছে। প্রতি বছর বন্দির সংখ্যা বাড়লেও গত ১৯ বছরে কারাগারের ধারণক্ষমতা বাড়ানো হয়নি।
কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দির সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৫৯৮ জন। এর মধ্যে বিচারাধীন মামলায় বন্দি পুরুষ হাজতি আট হাজার ৪৯৫ ও মহিলা বন্দির সংখ্যা ৪৭৮ জন।সাজাপ্রাপ্ত পুরুষ বন্দি ৩৮৬, মহিলা ৯ জন। সাজাপ্রাপ্ত বিনাশ্রম পুরুষ বন্দি ১২৪ ও মহিলা বন্দি রয়েছেন ১৬ জন। এরমধ্যে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি রয়েছেন পুরুষ ৪৭, মহিলা দুই জন। সপর্শকাতর জঙ্গি সম্পৃক্ততায় অভিযুক্ত আসামি রয়েছেন ৩৬ জন।
বন্দি রাখতে চট্টগ্রাম কারাভ্যন্তরে পাঁচ তলাবিশিষ্ট পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সাঙ্গু, কর্ণফুলী ও হালদা নামে ছয়টি ভবন রয়েছে। এ ছয়টি ভবনে ওয়ার্ড রয়েছে ১২০টি। এ ছাড়া একটি ডিভিশনপ্রাপ্ত ভিআইপি বন্দি ব্যারাক, দুটি ফাঁসির আসামির কনডেম সেল, তিন তলাবিশিষ্ট নারী বন্দি ব্যারাক, একটি সাজাপ্রাপ্ত নারী বন্দি ব্যারাক, একটি নারী কনডেম সেল, দুই তলাবিশিষ্ট একটি শিশু-কিশোর বন্দি ব্যারাক, একশ শয্যার তিন তলাবিশিষ্ট কারা হাসপাতাল সবখানে ঠাসাঠাসি করে রাখা হয়েছে বন্দিদের।
নগরীর ১৬ থানা এবং জেলার ১৬ থানাসহ মোট ৩২ থানার বিভিন্ন মামলার আসামি ও সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিকে রাখা হয় এ কারাগারে। প্রতিদিন গড়ে একশ’ আসামি জামিনে মুক্তি পেলেও বিভিন্ন মামলায় কারাগারে আসছে ১৫০ থেকে ২০০ আসামি। সূত্র: মানবজমিন।