বুধবার, ৩১শে অক্টোবর, ২০১৮ ইং ১৬ই কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

ট্রেনে কাটা পড়ে বাবা-মেয়েসহ তিনজনের মৃত্যু

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ট্রেনে কাটা পড়ে বাবা-মেয়েসহ তিনজন নিহত ও আরো একজন আহত হয়েছে। আজ রবিবার রাত পৌনে ৯টায় উপজেলাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের মাদামবিবিরহাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের মাদামবিবিরহাট খাদেমপাড়ার বাসিন্দা আবুল কাসেম প্রকাশ তোয়ান (৪৫), তার চার মাস বয়সী শিশু কন্যা সুমা আক্তার ও অজ্ঞাতপরিচয় আরো এক ব্যক্তি (৫৫)। পুলিশ ও ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, রবিবার রাত আনুমানিক পৌনে ৯টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী-মাদামবিবিরহাট এলাকার মধ্যবর্তী স্থানে কয়েকজন নারী-পুরুষ চট্টগ্রাম মুখী ডাউন লাইন হয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। এ সময় উল্টো পথে ঢাকামুখী একটি উদ্ধারকারী ট্রেন দ্রুতগতিতে যাবার সময় তাদেরকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই আবুল কাসেম, তার শিশু কন্যা সুমা ও অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিটি মারা যান। এ ছাড়া আহত হন আবুল কাসেমের স্ত্রী রোকসানা বেগম (৩৫)।

এ সময় এলাকাবাসী এগিয়ে এসে রোকসানাকে উদ্ধার করে ভাটিয়ারী বাংলাদেশ শিপব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশন হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করালে ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চমেকে প্রেরণ করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক প্রত্যক্ষদর্শী মো. সেকান্দর হোসেন জানান, দুর্ঘটনায় হতাহতরা সবাই ডাউন লাইনে ঢাকা অভিমুখে হেটে যাচ্ছিল। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে একটি উদ্ধারকারী ট্রেন পেছন দিক থেকে যাবার সময় তাদেরকে চাপা দিলে বাবা মেয়েসহ তিনজনের মৃত্যু হয়।

এদিকে পৌনে ৯টায় এ ঘটনা ঘটলেও রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সেখানে রেল পুলিশের কোনো টিম আসেনি। ফলে লাশগুলো রেললাইনের ধারে সেভাবেই পড়েছিল। ভাটিয়ারীর ইউপি চেয়ারম্যান মো. নাজিম উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওরা ট্রেন লাইন দিয়ে হেঁটে যাবার সময় উল্টো পথে পেছন থেকে আসা একটি ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যান। নিহতদের মধ্যে দুইজন বাবা-মেয়ে। অন্যজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে তিনি আশপাশের কোন কারখানার শ্রমিক।

সীতাকুণ্ড থানার ওসি মো. দেলওয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমি ফৌজদারহাট ফাঁড়ি থেকে সার্জেন্ট সাইফুলকে সেখানে যেতে বলেছি। তবে বিষয়টি যেহেতু রেলওয়ের তারাই লাশ উদ্ধার ও অন্যান্য প্রক্রিয়া করবে।

এদিকে মাদাম বিবিরহাট খামেদ পাড়ার আবুল কাসেম ও তার মেয়ের এভাবে মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাতে ওই এলাকায় শোকের মাতম শুরু হয়। দলে দলে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাদের বাড়িতে ভিড় জমায়। এ ঘটনায় সবাই হতবাক হয়ে পড়েছেন। উল্টো পথে ট্রেনটি না এলে এই ঘটনা হতো না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। খাদেম পাড়ার বাসিন্দা মো. সোহেল বলেন, উদ্ধারকারী ট্রেনটি উল্টো পথে না এলে আজ এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটত না।

মানুষগুলো কিছুক্ষণ আগেও সুস্থ ছিল। এভাবে মর্মান্তিক এই মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। এই দিকে দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অজ্ঞান রোকসানার জ্ঞান ফেরার পর তিনি কথাবার্তা বলতে পারছেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বিক্রির জন্য শাক তুলছিলাম। এতে দেরি হয়ে যায়। পরে রেললাইন দিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ পেছন দিক থেকে একটি ট্রেন খুব কাছে দেখতে পাই। শেষে কি হয়েছে আর আমি বলতে পারি না। পরে দেখছি আমি হাসপাতালে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর ব্যথা বেদনা হচ্ছে। তবে তিনি হাসপাতালে আসলেও তার স্বামী বা সন্তানের কি অবস্থা তিনি কিছুই জানেন না।

এদিকে ঘটনার বিষয়ে ভাটিয়ারি রেলওয়ে স্টেশনের মাষ্টার এমরান হোসেন বলেন, ট্রেনে কাটা পড়ে কয়েকজন মারা গেছে শুনছি। কিন্তু আমি বিস্তারিত জানি না। এসব বিষয় রেলওয়ে পুলিশ দেখে থাকে।