বুধবার, ৩১শে অক্টোবর, ২০১৮ ইং ১৬ই কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

তারা চায় মানুষ মারার লাইসেন্স…

এই তো কয়েকমাস আগেই নিরাপদ সড়কের দাবিতে অভূতপূর্ব আন্দোলনে নেমেছিল স্কুল-কলেজের ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা। ওদের দুজন বন্ধুকে রাস্তায় পিষে মেরে ফেলেছিল জাবালে নূর বাসের চালক। পথ চলতি সময়ে বিমানবন্দর সড়কের সেই স্থানটি চোখে পড়ে। যেখানে দিয়া-রাজীবের রক্ত লেগে ছিল। এরপরেও সড়কে ঝরেছে আরও অনেক রক্ত। লোক দেখানো অনেক উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু মৃত্যুর মিছিল থামেনি।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর নড়েচড়ে বসে সরকার। তৈরি করা হয় ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’। াএই আইনে সাজার মাত্রা বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া চালক কর্তৃক দুর্ঘটনার জন্য শাস্তি দেওয়া হবে দণ্ডবিধি অনুযায়ী। মানুষের মৃত্যু হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড। আহত হলে ৩০৪ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে মৃত্যু ঘটালে ৩০৪ (বি) ধারা অনুযায়ী ৩ বছরের কারাদণ্ড হবে।

নৈরাজ্যের দেশে এমন আইন মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছিল। এবার হয়তো আইনের ভয়ে বেপরোয়া চালকেরা সোজা পথে আসবে। কিন্তু কোথায় কী? আজ রবিবার ব্যস্ত ওয়ার্কিং ডে শুরু। এদিন থেকেই ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ডাকল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন! এই সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি আবার নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। তাদের দাবি, নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন করতে হবে। নেশাগ্রস্ত ড্রাইভার জোশের বশে গাড়ি চালিয়ে মানুষ মেরে ফেললেও তাকে কোনো সাজা দেওয়া যাবে না! মৃত্যুদণ্ড তো দূরের কথা!

অর্থাৎ ড্রাইভারের সাত খুন মাফ করতে হবে। তাহলেই রাস্তায় গাড়ি চলবে; না হলে চলবে না। কী সুন্দর দাবি! আমরা প্রতিদিন রাস্তায় গাড়ি চাপায় মরব; আমাদের স্বজন-বন্ধুরা মরবে। আমরা রাস্তায় নামব; নিরাপদ সড়কের দাবি তুলব। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকরা নিরাপদ সড়ক চায় না। তারা চায় মানুষ মারার লাইসেন্স। যখন ইচ্ছা, যেখানে ইচ্ছা তারা আমাদের পিষে মেরে ফেলবে। তারপর ৩২ পাটি দাঁত বের করে নতুন কাউকে মারার উদ্দেশ্যে ড্রাইভিং সিটে বসবে। সেলুকাস!

শ্রমিকদের এই কথিত আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে মুখে কালি মাখিয়ে দেওয়া! অফিসগামী মানুষ; শিক্ষার্থী এমনকী নারীরাও রক্ষা পাচ্ছেন না এই সন্ত্রাস থেকে! রাস্তায় বের হলেই দল বেঁধে কালি মাখিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই সুযোগে মেয়েদের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিচ্ছে এই শ্রমিকরা। প্রশাসন এই সন্ত্রাসের সামনে নীরব দর্শক। যত ভোগান্তি সাধারণ জনগনের। যারা গাড়ি চাপায় রাস্তায় পিষে মরবে; আবার বিচার চাইতে গিয়েও মরবে।

তবু জানতে ইচ্ছে করে, সড়কের নৈরাজ্য আর কতদিন চলবে? কোনো মেরুদণ্ডী প্রাণী কি নেই এই খুনি চালকদের থামানোর?
সূত্র: কালের কন্ঠ