নকল প্রেমের ভয়ঙ্কর প্রেমিকা
সাইফুল ইসলাম। গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। মোবাইল ফোনে পরিচয় নারগিসের সঙ্গে। প্রথমে টুকটাক কথাবার্তা। এরপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা। রাতে কথা বলতে বলতে কখন সকাল হতো তা সাইফুলের খেয়ালই থাকত না। সময় যত যায় ততই দুর্বল হতে থাকে নারগিসের ওপর। দেখা করতে চায় সাইফুল। কিন্তু, নারগিস প্রথমে রাজি হয় না। বেশ কয়েক দিন পর রাজি হয় নারগিস। সাইফুল ভীষণ খুশি। নারগিসের সঙ্গে দেখা হবে তার। এতদিন ফোনে ঘনিষ্ঠতা ছিল। এখন সামনা সামনি দেখা হলে সবই হবে, ভাবে সাইফুল।
ফোনে ঠিকানা নিয়ে নারগিসের ডেমরার বাসায় যায় সাইফুল। কেউ নেই। নারগিসের সঙ্গে সেদিনই প্রথম দেখা। নারগিস তাকে বাসার ভিতরে নিয়ে বসায়। অনেকক্ষণ কথা বলে। এক পর্যায়ে তারা ঘনিষ্ঠ হওয়ার প্রস্তুতি নেয়।
হঠাৎ নারগিস তাকে বলে, ‘সাইফুল একটু বসো। আমি পাশের রুম থেকে আসছি।’ একটু পর ওই ঘরে আর নারগিস আসেনি। এসেছে ২/৩ জন যুবক। তারা সাইফুলকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। এরপর আরও দুটি মেয়ে দিয়ে নগ্ন করে দুজনের ছবি তোলে। সাইফুল অনুনয় বিনয় করে। কিন্তু তাকে ছাড়ে না। ৫ লাখ টাকা দাবি করে সাইফুলের কাছে। সাইফুল বুঝতে পারে, নারগিস প্রতারক। ভয়ঙ্কর প্রেমের নকল প্রেমিক। এরপর লোক দিয়ে ৩ লাখ টাকা নিয়ে এসে যে যাত্রায় সাইফুল রক্ষা পান।
এমন ঘটনা ঘটছে অহরহ রাজধানীসহ সারা দেশেই। ভয়ঙ্কর প্রেমিকার নকল প্রেমের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। পুলিশ এমন বেশ কয়েকজন নকল প্রেমিকাকে আটকও করেছে।
এমন একজন নকল প্রেমিকা হলেন দোলা। রাজধানীর মধ্য পাইকপাড়া থেকে গ্রেফতার হয় প্রেম প্রতারক দোলা আক্তার।
দোলা জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে তারা প্রেম প্রতারণার ফাঁদ পেতে পকেট কেটেছে অসংখ্য পুরুষের। দোলা পুলিশের কাছে বলেছে, ‘আপন চাচার দেওয়া নম্বরে প্রথমে মিস কল দিতাম। একবার নয়, একাধিকবার। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই নম্বর থেকে কল ব্যাক করত। আমি একটু কথা বলে বলতাম ‘রং নাম্বার’। লাইন কেটে দিতাম। ঘণ্টাখানেক পর আবারও মিস কল দিতাম। আবার কল ব্যাক করলে কথা বলতাম। মেয়ের গলা পেয়ে অপর প্রান্তের লোক এমনিতেই কথা বলত। একপর্যায়ে সম্পর্ক গাঢ় হতো। তারপর অপর প্রান্তের ব্যক্তিই আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইতেন। প্রথমে রাজি হতাম না। পরে রাজি হয়ে যেতাম।
এরপর কোনো রেস্টুরেন্টে দেখা, নানা বিষয়ে কথোপকথন এডাল্ট বিষয়ে নিয়ে যেতাম আমি নিজেই। এরপর তিনিই আমাকে কোনো ফ্ল্যাটে নিয়ে যেতে চাইতেন। কখনো কক্সবাজার বা অন্য কোথাও বেড়াতে নিয়ে যেতে চাইতেন। আমি বলতাম, আমার খালার বাসা ফাঁকা। এখানে আসেন। বাসা ফাঁকা শুনে তিনি সহজেই রাজি হয়ে যেতেন। এভাবেই আমার কাজ ছিল ফ্ল্যাট পর্যন্ত এনে দেওয়া। বাকি কাজ অন্যরা করত।
সূত্র জানায়, গত বছর মিরপুরের একটি স্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেছেন। পরিবারের দুঃখ-কষ্ট ঘোচাতে তিনি চাচা ও খালার ‘প্রেম প্রতারণা’ চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
আরেক ঘটনায় মোবাইল ফোনে প্রেমের ফাঁদ পেতে দুই ব্যবসায়ীকে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে সংঘবদ্ধ নারী অপহরণকারী চক্রের মূল হোতাসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করে র্যাবের একটি দল। ওই সময়ে উদ্ধার করা হয়েছে মুক্তিপণ বাবদ আদায় করা ৭৯ হাজার ৯৫০ টাকা। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার ভূঁইগড় পূর্বপাড়া এলাকাতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে পূর্বপাড়া এলাকার শিউলী বেগম (৩৫), নাছিমা আক্তার (৩৫), নাছিমা বেগম (৪০), মমতাজ বেগম (৪৫) ও জসিম মিয়াকে (৩৮)।
জানা গেছে, সম্প্রতি শিউলী বেগম এবং তার সহযোগী নাছিমা আক্তার মিলে স্থানীয় হুমায়ূন আহমেদ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মমতাজ বেগমের নিজস্ব বাসায় হুমায়ূন আহমেদ ও শাহজালাল নামে অপর এক ব্যক্তিকে ২য় তলায় নির্দিষ্ট রুমে নিয়ে এসে আটক করে রাখে। এরপর আপত্তিকর ছবি তুলিয়ে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন