আর কখনই স্বাভাবিক হবে না সাকিবের আঙুল!
একটু অসচেতনতা কতটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে, সেটা ভাবলেও চমকে উঠতে হয়। বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুলের যে ইনজুরিতে পড়েছিলেন, সেটার সময়মতো অস্ত্রোপচার না করানো এবং জোর করে খেলার কারণে সেখানে ইনফেকশন হয়ে যাওয়ার ফলে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে, তাতে আঙুল আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন খোদ সাকিব আল হাসান।
আঙুলের চিকিৎসা করানোর উদ্দেশে শুক্রবার রাতে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে বিমান বন্দরে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এ তথ্য নিজেই জানান সাকিব। আঙুলের অবস্থা ডাক্তারকে দেখানোর জন্য শুক্রবার রাতেই অস্ট্রেলিয়াগামী বিমানে উঠেছেন তিনি। পাঁচদিন সেখানে থেকে ফিরে আসবেন। এরপর আবারও যাবেন, ইনফকেশন জিরোতে নেমে আসলে অস্ত্রোপচার করার জন্য। তার আগে ডাক্তার হাতই দেবে না বলে জানান সাকিব।
জানুয়ারিতে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলার সময়ই আঙুলের ইনজুরিতে পড়েন সাকিব। এরপর বেশ কিছুদিন খেলার বাইরে ছিলেন এবং আঙুলের চিকিৎসা করিয়ে মাঠে ফেরেন তিনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার সময়ই জানা গেছে, পুরোপুরি সুস্থ হতে হলে আঙুলে অস্ত্রোপচার করাতে হবে।
সাকিব চেয়েছিলেন এশিয়া কাপ না খেলে অস্ত্রোপচারটা করে ফেলতে। কিন্তু বিসিবি সভাপতি চেয়েছিলেন সাকিব এশিয়া কাপটা খেলুক। যদিও তিনি সিদ্ধান্তের ভার সাকিবের ওপর ছেড়ে দেন। শেষ পর্যন্ত ফিজিওর রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই সাকিব এশিয়া কাপ খেলার সিদ্ধান্ত নেন। ব্যথা নাশক ইনজেকশন দিয়ে এবং ওষুধ খেয়ে সাকিব এশিয়া কাপ খেলে যান।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেননি খেলতে। সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের মুখোমুখি হওয়ার আগেই আঙুলের ব্যথা এতটাই তীব্র হয় যে তিনি ব্যাটই ধরতে পারছিলেন না। বোলিং তো দুরে থাক। শেষ পর্যন্ত সে অবস্থায়ই দেশে ফিরে আসেন সাকিব। খেলতে পারেননি পাকিস্তানের বিপক্ষে সুপার ফোরের শেষ ম্যাচ এবং ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল।
দেশে আসার পর ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার পর বুঝতে পারেন, মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গেছে। সংক্রমণ এতটাই হয়েছে যে, পুরো আঙুল পুঁজে ভরে গেছে। অস্ত্রোপচার করে আগে সেই পুঁজ বের করা হয়। সাকিব শঙ্কা প্রকাশ করেন, আরেকটু হলেই সেই সংক্রমণ হাতের কব্জি ধরে ফেলতো এবং পুরো হাতই নষ্ট হয়ে যেত।
তবুও, আগে সংক্রমণ কমাতে হবে এবং এরপর অস্ত্রোপচার করে ভাঙা হাঁড় ঠিক করতে হবে। এ জন্য অন্তত তিনমাস মাঠের বাইরে থাকতে হবে সাকিবকে। আঙুলের উন্নত চিকিৎসার জন্য তাই সাকিবকে স্মরণাপন্ন হতে হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ান শল্যবিদের।
অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সঙ্গে আলাপকালে সাকিব বলেন, ‘ইনফেকশটাই আমার সবচেয়ে বড় টেনশনের জায়গা। কারণ ইনফেকশন থাকলেই সার্জন আর ওখানে হাত দেবে না। ইনফেকশনের সময় হাত দিলে সেটা হাঁড়ে চলে যাবে, হাঁড়ে গেলে তখন পুরো হাতই নষ্ট হয়ে যাবে।’
সাকিব ভয়ঙ্কর এক তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘আঙুলটা আর কখনো পুরোপুরি (শতভাগ) ঠিক হবে না। কারণ, যে হাড্ডিটা ভেঙেছে সেটা নরম হাড্ডি। যেটা কখনও জোড়া লাগার সম্ভাবনা নেই।’
তাহলে কি আর কখনও খেলতে পারবেন না সাকিব? তিনি নিজেই জানালেন সে সম্ভাবনার কথা। সাকিব বলেন, ‘পুরোপুরি ঠিক হবে না। তবে সার্জারিটা এমনভাবে করা হবে যেন তারা (ডাক্তাররা) হাতটাকে খেলার উপযোগি করে তুলতে পারেন। যেখান থেকে আমি ভালোভাবে ব্যাট ধরতে পারবো। ক্রিকেট খেলাটা চালাতে পারবো।’ তবে তার আগে সংক্রমণ একেবারে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে বলে জানান সাকিব।
কত সময় লাগতে পারে সাকিবের মাঠে ফিরতে? নিজেই জানালেন, আগামী বিপিএলের আগে পুরোপুরি সুস্থ হতে পারছেন না তিনি। সাকিব বলেন, ‘মূল যে অস্ত্রোপচারটা করার কথা, সেটা হলে ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ সময় লাগে। সাধারণত ৬ সপ্তাহের ভেতরেই ঠিক হয়ে যায়। ২ সপ্তাহ অতিরিক্ত হাতে রাখা হয়। ৬ সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়, তাহলে তো বিপিএলের বেশ আগেই ফিট হয়ে যাব।’
এর অর্থ, চলতি বছর আর খেলতে পারছেন না সাকিব। জিম্বাবুয়ে কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ- কোনোটাতেই না। তার না থাকার প্রভাব কি তাহলে দলের ওপর পড়বে। সাকিব তেমনটা মনে করেন না। তিনি মনে করেন, তার না থাকার কারণে যারা দলে আসবে তারা নিজেদের প্রমাণ করার একটা বড় সুযোগ পেয়ে যাবে।
সূত্র: জাগো নিউজ