মঙ্গলবার, ৯ই অক্টোবর, ২০১৮ ইং ২৪শে আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

‘এটা আমার লাস্ট স্ট্যাটাস, আল্লাহ হাফেজ’

‘এতটুকু মেসেজ দেওয়ার জন্য আল্লাহ সর্বশক্তিমান। আল্লাহর ভয় করুন। এটা আমার লাস্ট স্ট্যাটাস। আল্লাহ হাফেজ। আল্লাহ যেন আমাকে জান্নাত নসিব করেন। সবাই দোয়া করবেন।’

গত ২৮ সেপ্টেম্বর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এই স্ট্যাটাস দেওয়ার এক সপ্তাহ পর এএইচ মোকলেছুর রহমান নীরব এই সুন্দর পৃথিবী ও সকলকে ছেড়ে ‘নীরবেই’ না ফেরার দেশে চলে গেছেন তিনি।

শুক্রবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে সাতক্ষীরা শহরের চাইনা বাংলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র এএইচ মোখলেসুর রহমান নীরব মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুর মধ্যে দিয়েই তার জীবনের সব গতি পথের সমাপ্তি ঘটে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ২৫ বছর।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষ সম্মানের ছাত্র ছিলেন নীরব।

নীরবের বাড়ি সাতক্ষীরাতেই। বাবা মায়ের ৪ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট ছিল নীবর। পারিবারিক অভাব-অনটন থাকার সত্ত্বেও মেধা আর নিজের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ভর্তি হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে। গ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবারের এই হাসান স্বপ্ন দেখতো বড় চাকরি করে বাবা ও মার সংগ্রামের অন্ধকার ঘরে স্বাচ্ছন্দ্যের আলো ফেরাবেন। কে জানত সেই স্বপ্নবাজ মানুষটিকেই লড়াই করতে হবে চির-অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার ব্যাধি ক্যানসারের সঙ্গে! যে নীরবকে নিয়ে মা-বাবা দিন বদলের স্বপ্ন দেখছিলেন, সেই নীরবকে প্রতিমুহূর্তে লড়াই করতে হয়েছে মরণ-ব্যাধি ক্যানসারের সঙ্গে।

বছর দুয়েক আগে ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় পাকস্থলী ক্যানসার ধরা পড়ে সাতক্ষীরা শহরের সরকারপাড়ার কাজী এনামুল হকের ছেলে নীরবের। প্রথম দিকে নীরবের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ছিল। চিকিৎসা করার পরও তা বেড়ে আলসারে পরিণত হয়। একপর্যায়ে আলসারের চিকিৎসার দীর্ঘ সময় পরে চিকিৎসকরা জানতে পারেন হাসানের পেটে টিউমার হয়েছে। টিউমারটি ফেটে এ ক্যানসার নীরবের পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

এরপর প্রথমে ঢাকার ডেল্টা, পরে ভারতে চিকিৎসার পর তার অবস্থার কিছুটা উন্নতিও হয়। কিছুদিন আগে তিনি ফের অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে আবারও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল।

সম্প্রতি সাতক্ষীরার ফারজানা ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন নীরব। দুদিন আগে তার অবস্থার অবনতি হতে থাকায় তাকে ভর্তি করা হয় সাতক্ষীরার শহরের চাইনা বাংলা হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন নীরব।

জানা যায়, বন্ধুদের সার্বিক সহায়তায় নীরবের চিকিৎসা চলছিল। বন্ধুরা মিলে দিনের পর দিন অর্থ সংগ্রহ করে নীরবকে বাঁচিয়ে রাখার সব রকম চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু, তাদের সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে সকলকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন নীরব।

নীরবের অকাল মৃত্যুতে শোকাহত যেমন তার সহগাঠী বন্ধুরা। তেমনি শোকে মুহ্যমান তার বাবা কাজী এনামুল হক, মা জোলেখা পারভীন এবং ভাই বোনসহ প্রতিবেশীরা।

নিহত নীরবের বন্ধু অরুপ সরকার জানান, মৃত্যুর শেষ কয়েক দিন আগে প্রতিদিন ৫ হাজার টাকার স্যালাইন ও ওষুধ লেগেছে তার। এই পরিমাণ অর্থও আমরা বিভিন্নভাবে জোগাড় করেছি। নীরব বাঁচতে চেয়েছিল। আমরাও ওকে বাঁচাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে গেছি। কিন্তু, মৃত্যুর কাছে হেরে গেছি আমরাও।

এদিকে, নীরবকে তত্ত্বাবধায়নে রাখা খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো: মনোয়ার হোসেন বলেন, নীরবকে প্রথম দিকে অপারেশনের কথা বলেছিলাম কিন্তু, রাজি হয়নি। পরবর্তীতে ক্যামোথেরাপি দেয়া হয়। লিভার একেবারে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল নীরবের। যা চিকিৎসা সেবার আওতার বাইরে চলে যায়। তার পরিবারকে আগেই সব জানানো হয়েছিল বলেন জানান তিনি।

সাতক্ষীরার শহরের কোর্ট মসজিদে জানাজা শেষে রসুলপুর সরকারি গোরস্থানে এএইচ মোকলেছুর রহমান নীরবকে দাফন করা হয়েছে।