মোহাম্মদপুরের আতঙ্ক ‘রক্তচোষা’ সাদ্দাম
ডেস্ক রিপোর্ট : আগ্নেয়াস্ত্র চালাতে পারদর্শী হলেও ছুরি-চাপাতি দিয়ে মানুষ কোপানো নেশা মো. সাদ্দাম হোসেনের। শুধু কুপিয়েই ক্ষান্ত হন না, পরে অস্ত্রে লেগে থাকা রক্ত খাওয়াও পরিণত হয়েছে তার শখে। এই পৈশাচিকতার কারণে ঢাকা পড়ে গেছে তার পৈতৃক নামও। অপরাধজগতের মানুষরা সাদ্দামকে চেনে ‘রক্তচোষা’ সাদ্দাম নামে।
মোহাম্মদপুরের অপরাধজগতের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড গালকাটা মোশাররফ ওরফে লম্বু মোশাররফের হাত ধরে আন্ডারওয়ার্ল্ডে নাম লেখান সাদ্দাম। ছিঁচকে চোর থেকে ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাত দলের নেতা। এখন মোহাম্মদপুরবাসীর কাছে আতঙ্কের আরেক নাম রক্তচোষা সাদ্দাম।
এ সাদ্দামের সর্বশেষ হামলার শিকার হয়েছেন মোহাম্মদপুর থানাপুলিশ। গত ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে ঢাকা উদ্যান এলাকায় দুই অপহৃতকে উদ্ধার অভিযানে যান কনস্টেবল মো. আবুল খায়ের। সেখানে তাকে এলোপাতাড়ি কোপায় সাদ্দাম ও তার ক্যাডাররা। তিনি এখন রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনার রাতে এসআই বুলবুল আহমেদ বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন। গ্রেপ্তার করা হয় মো. জাভেদ নামে এক সন্ত্রাসীকে। কিন্তু ঘটনার ১০ দিনেও ঘটনার মূল হোতা সাদ্দামসহ হামলাকারী কালাম ওরফে কালা, আরমান, শাওন, কবীর, সুজনসহ অচেনা ১০ থেকে ১২ সন্ত্রাসীর কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
আহত কনস্টেবল আবুল খায়ের গতকাল জানান, গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় ডাকাতি শেষে ওই বাড়ির দুই যুবককে ধরে এনে নবীনগর হাউজিং প্রকল্পের ১৬ নম্বর সড়কের একটি বাসায় আটকে রেখে সাদ্দাম ও তার সহযোগীরা। তারা মুক্তিপণ দাবি করছে- এমন অভিযোগ পুলিশের কাছে জানায় ক্বারী মোহাম্মদ শাহ আলম নামে এক ব্যক্তি। খবর পেয়ে এসআই বুলবুল আহমেদের নেতৃত্বে ২৪ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই বাড়িতে অভিযানে যায় পুলিশ।
ওই দলে ছিলেন কনস্টেবল আবুল খায়েরও। পুলিশ অপহৃতদের উদ্ধারে টার্গেট বাড়িতে ঢুকতেই সাদ্দাম ও তার দলবল পুলিশের ওপর হামলা চালায়। ইটের আঘাতে মাটিতে পড়ে গেলে সন্ত্রাসীরা খায়েরকে এলোপাতাড়ি কোপায়। গুরুতর আহত অবস্থায় খায়েরকে প্রথমে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে স্থানান্তর করা হয় রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে।
জানা গেছে, সাদ্দাম হোসেন থাকেন মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং প্রকল্প এলাকায়। অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতি ও মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণে তার রয়েছে বিশাল বাহিনী। বিশেষ করে ঢাকা উদ্যানের বেড়িবাঁধ ঢাল থেকে ঢাকা উদ্যান হাউজিং, নবীনগর হাউজিং, চন্দ্রিমা হাউজিং, নবোদয় হাউজিং, শেখেরটেক এলাকায় তৎপর তার লোকজন। এ চক্রের সদস্যরা দিনের বেলায় ছোট-ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে ছিনতাই করে। রাতের বেলা সংঘবদ্ধ হয়ে ডাকাতি করে। ছিনতাই কাজে ব্যবহার করে মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাস। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভুয়া পরিচয় দিয়ে নিরীহ সাধারণ মানুষকে তুলে নিয়ে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, স্বর্ণালঙ্কার, ভ্যানিটি ব্যাগ, টাকা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, কাভার্ড ভ্যানসহ বিভিন্ন দ্রব্য লুট করা ছাড়াও আদায় করে মুক্তিপণ। রাতের বেলা দুই বা ততোধিক দল একত্র হয়ে নির্দিষ্ট ফ্ল্যাটে বা ফাঁকা বাড়িতে গ্রিল কেটে ও তালা ভেঙে লুটপাট চালায়। সাদ্দাম মোহাম্মদপুর থানাসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিকবার আটক হয়েছিলেন। কিন্তু আইনের ফাঁক গলিয়ে বেরিয়ে আবার জড়িয়ে পড়েন অপরাধজগতে। সূত্র: দৈ.আমাদের সময়