মিয়ানমারকে চাপ দিন, মুসলিম বিশ্বের প্রতি প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের টেকসই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে মিয়ানমারের ওপর চাপ বৃদ্ধির প্রচারণায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য মুসলিম উম্মাহর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) কন্টাক্ট গ্রুপের সভায় দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। সৌদি আরবের স্থায়ী মিশন ও ওআইসি সচিবালয় যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সভায় ওআইসির মহাসচিব ইউসেফ আল ওথেইমিনও বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের টেকসই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি এবং তাদের ওপর সংঘটিত নৃশংসতার জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ বৃদ্ধির প্রচারণার নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমি মুসলিম উম্মাহর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় মোকাবিলায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও মানবাধিকার কাউন্সিলের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোসহ জাতিসংঘ ব্যবস্থাপনায় ওআইসি দেশগুলোর অব্যাহতভাবে জড়িত থাকার বিষয়ে বাংলাদেশ গুরুত্বারোপ করেছে। তিনি বলেন, ‘সর্বোপরি স্বল্পতম সময়ে আমাদের এ সমস্যার সমাধান করা আবশ্যক।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি গৃহহীন ও নিরাশ রোহিঙ্গাদের জন্য এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে গত সেপ্টেম্বরে পাঁচ দফা কর্মপরিকল্পনার প্রস্তাব করেছেন। তিনি বলেন, ‘পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এখনো শুরুই হয়নি।’ এ বছর কতিপয় সুস্পষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ওআইসি সদস্য দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জবাবদিহির বিষয় নিশ্চিতে ওআইসির মন্ত্রী পর্যায়ের অ্যাডহক কমিটি গঠনের জন্য আমরা সাধুবাদ জানিয়েছি। অবশ্য এখনো পর্যন্ত এই প্রস্তাব কার্যকরে যথেষ্ট বাস্তবসম্মত প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়নি।’
শেখ হাসিনা আবারও রোহিঙ্গা সংকটকে মিয়ানমারে গভীরভাবে প্রোথিত একটি রাজনৈতিক সংকট হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘অতএব এর সমাধানও মিয়ানমারকেই খুঁজে বের করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সহস্রাব্দকালের পুরোনো নিজ বাসভূমে ‘গণহত্যার’ শিকার রোহিঙ্গা মুসলমানেরা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে তাও এক বছরাধিককাল পেরিয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, মানব জাতির ইতিহাসের অন্যতম বড় ঘটনা রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা, তাদের দুর্দশার বিষয়টি আমরা অগ্রাহ্য করতে পারি না। ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের রোহিঙ্গা মুসলিম ভাই-বোনদের জীবনে এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা নতুন কিছু নয়। বর্তমান ঘটনাটি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আগমনের তৃতীয় বড় ধরনের ঘটনা। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনই কেবল এ সমস্যার একমাত্র টেকসই সমাধান নয়, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধের আগে বরং পরিস্থিতির অবনতির দুটি প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে। এই প্রশ্নগুলো হচ্ছে: যৌথ দায়িত্ব ও জবাবদিহিতে এবং মিয়ানমার কর্তৃক এই রোহিঙ্গাদের অধিকার ও প্রাধিকারসমূহ নিশ্চিত করার প্রশ্ন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার সরকার নৈতিক এবং মানবিক কারণে সীমান্ত খুলে দিয়ে ও জরুরি সহায়তা দিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ এবং নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করেছে। এ কারণে রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি দীর্ঘায়িত হতে পারে না। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা এই সমস্যা শুরু থেকেই সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করে আসছি। তবে তাদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া আমরা পাচ্ছি না। এ সমস্যা সমাধানে শুধুমাত্র দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় কোনো সুফল বয়ে আনবে না। এ জন্য আন্তর্জাতিক উদ্যোগ প্রয়োজন। কেবলমাত্র আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার তার অবস্থানের পরিবর্তন করতে পারে।
শেখ হাসিনা এ বিষয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে ওআইসির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ওআইসি সদস্য দেশগুলোকে খুঁজে বের করতে সারা বিশ্বে মুসলমানেরা কেন এভাবে নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মুসলমানেরা কেন একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। যদি কোনো সমস্যা থেকেই থাকে তবে তা দ্বিপক্ষীয় অথবা আঞ্চলিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।