‘যৌবনের মেয়াদ শেষ হলে তবেই গ্রামে ফিরবি’
ব্রিটিশ আমলের আইন বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া রায়ে বলা হয়েছে, পরকীয়া কোনো অপরাধ নয়। অথচ এই পরকীয়ার দায়েই সমাজে নির্যাতিত হয়েছেন অনেকে।
এমনই একজন নির্যাতিতা জানালেন তার গ্রামছাড়া হওয়ার কথা।তিনি বলেন, আমার বাড়ি উত্তরবঙ্গের বেলডাঙা মাধুরপুকুর গ্রামে। টালির বাড়ির বারান্দায় এগারো বছর আগের সেই সন্ধ্যাটা এখনও মনে আছে আমার। বৃষ্টি হচ্ছিল সেদিন। পাড়ার চণ্ডীমণ্ডপে সেদিন মানুষের ভিড়। কেউ এসেছেন ছাতা নিয়ে। কারও ব্যাগে পলিথিন। সবাই এসেছেন সালিশ দেখতে।
ভিড়ের মধ্যে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে ২০ বছরের এক তরুণী। লন্ঠনের শিখার মতোই সে মাঝেমধ্যেই কেঁপে-কেঁপে উঠছে। অজস্র চোখ গিলে খাচ্ছে তাকে। ফিসফাস, হাসি, একে অন্যের গায়ে পড়ে মস্করা, ‘খুব রস অ্যাঁ!’ মেয়েটি মাটির দিকে স্থির দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে, যেন মনে মনে বলছে, পায়ের তলায় মাটি দু’ভাগ হয়ে যাক! তাহলে হয়ত মুক্তি! কিন্তু মুক্তি কি আর মুখের কথা!
আর সেই তরুণীটা ছিলাম আমি। আমার দোষ, সেদিন ঘরে বসে পাড়ারই এক জনের সঙ্গে কথা বলছিলাম। পর পুরুষের সঙ্গে কথা বললে যে এমন পাপ হয় জানতাম না!
আর এটা দেখে ফেলে পাড়ার অন্য দুজন ছেলে। সঙ্গে সঙ্গে তারা দরজায় শিকল তুলে দিয়ে গ্রামে সেটা প্রচার করে দেয়।
সে দিনের সভায় নানা জনের নানা যুক্তি, অজস্র প্রশ্নের পরে আমি জানালাম, ‘হ্যাঁ বলেছি কথা, অন্য লোকের সঙ্গে।’
মাঝরাতে, লণ্ঠনের আলোয় সভাজুড়ে সে কি সোরগোল। ছিটকে আসছে কটুক্তি। হাসির হররা। এবার, এবার কি হবে? ফিসফাস মাতব্বরদের মধ্যে। কারণ, এ বড় জটিল অঙ্ক। পরে তারা রায় দিল, যৌবনের মেয়াদ যত দিন, ততো দিন আর এ গাঁয়ে ঠাঁই নেই আমার।
মাতব্বরদের একজন কিছু সময় পরে জানিয়ে দিলেন, ‘এখন মেয়েটির বয়স কুড়ি। আগামী কুড়ি বছরের জন্য ওকে নির্বাসন দেয়া হল। আমরা ভেবে দেখলাম, চল্লিশের পরেই যৌবন ফুরোবে। তারপরে সে গ্রামে ফিরতে পারে। কারণ, তখন আর ও এমন অপরাধ করতে পারবে না।’খবর পেয়ে প্রশাসন অবশ্য তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল গ্রামে। শ্বশুরবাড়ির লোকজনও মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু যৌবনের মেয়াদহারা সেই সন্ধ্যাটা এখনও বিঁধে রয়েছে তাকে।