মঙ্গলবার, ২রা অক্টোবর, ২০১৮ ইং ১৭ই আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

‘১৬৪৩০’ নম্বর থেকে আইনি সহায়তা পেয়েছেন ৩২ হাজার

ডেস্ক রিপোর্ট: দরিদ্র, অসহায়, নির্যাতিতসহ পিছিয়ে পড়া সব শ্রেণিপেশার মানুষের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে ‘১৬৪৩০’ নম্বরে আইনি সহায়তা দেওয়া হয়। টোল ফ্রি এই নম্বরটির যাত্রা শুরুর পর থেকে এ নম্বরে ফোন করে আইনি সহায়তা নিয়েছেন ৩২ হাজার ৮৮৬ জন। এর মধ্যে নারী ৯ হাজার ৮৮৭ জন এবং পুরুষ ২২ হাজার ৯৯৯জন।

২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল টোল ফ্রি ১৬৪৩০ নম্বরটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই সরকারি আইনি সহায়তায় ‘জাতীয় হেল্পলাইন’ হিসেবে নম্বরটি ব্যবহৃত হচ্ছে। সরকারি অর্থায়নের মাধ্যমে ‘সরকারি আইনি সেবার মানোন্নয়নে সহায়তা প্রদান’ প্রকল্পের অধীনে জাতীয় পর্যায়ে কাজ করছে এই কলসেন্টার সার্ভিস।

জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল টোল ফ্রি সার্ভিসটি চালুর পর একই বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১১ হাজার ১৫ জন নারী-পুরুষ এর মাধ্যমে সেবা নিয়েছেন। এরপর ২০১৭ সালে সেবা নেন ১১ হাজার ১০৬ জন। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৩ হাজার ৮৬ জন নারী এবং ৭ হাজার ৬৭৯ জন পুরুষ, অর্থাৎ মোট ১০ হাজার ৭৬৫ জন ভুক্তভোগী এর সুফল ভোগ করেছেন। লিগ্যাল এইডের এই সফলতার পেছনে সার্বিকভাবে সহায়তা করেছে সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

এদিকে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এবং নারী-পুরুষদের সেবাদানে সরকারি এ উদ্যোগের সফলতার পেছনে দু’টি কারণের কথা বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

প্রথমত, টোল ফ্রি লিগ্যাল এইড সার্ভিসে ফোন করে মানুষ মন খুলে যে পরামর্শ চাইছে, তা পাচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, লিগ্যাল এইড সার্ভিসের মাধ্যমে উপকৃত ব্যক্তিরা অন্যদের মধ্যে এ বিষয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে এটা নতুন একটি সেবা প্রকল্প। তাই এটি শুরু এবং পরিচালনার মাধ্যমে আমরা অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আর এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এই সেবার মানোন্নয়ন এবং ভবিষ্যতে আরও নতুন সেবা প্রদানের বিষয়ে কাজ চলছে।’

আইনি পরামর্শ, আইনগত তথ্য, কাউন্সিলিং, মামলা/মোকদ্দমা করার প্রাথমিক তথ্য, সরকারি আইনি সেবা সম্পর্কিত যেকোনও পরামর্শ, অভিযোগ দিতে ‘১৬৪৩০’ নম্বরে টোল ফ্রি কল করে সহায়তা পাওয়া যায়। সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এই সেবা দেওয়া হয়। কল করা ছাড়াও নম্বরটিতে ম্যাসেজ, লিগ্যাল এইডের ফেইসবুক মেসেঞ্জার বা তাদের অ্যাপস্ ব্যবহার করেও ভুক্তভোগীদের সুবিধা নেওয়ার পথ উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। নারী-পুরুষ, শিশু নির্বিশেষে যেকোনও ব্যক্তি এ সুবিধা ভোগ করতে পারেন।

সরকারি আইনি সেবাপ্রাপ্তির যোগ্যতা: যারা দরিদ্র ও অসহায় এবং নিজ খরচে মামলা পরিচালনা করতে সমর্থ নন তাদের জন্য সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা দেওয়া হয়।

এই সুবিধা পেতে যারা আবেদন করতে পারবেন-(ক)অসচ্ছল বা আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তি যার বার্ষিক গড় আয় সুপ্রিম কোর্টে আইনগত সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং অন্যান্য আদালতের ক্ষেত্রে ১ লাখ টাকার বেশি নয়;(খ) কর্মক্ষম নন, আংশিক কর্মক্ষম, কর্মহীন বা বার্ষিক ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি আয় করতে অক্ষম এমন মুক্তিযোদ্ধা;(গ) যেকোনও শ্রমিক যার বার্ষিক গড় আয় ১ লাখ টাকার বেশি নয়;(ঘ) যেকোনও শিশু;(ঙ)মানব পাচারের শিকার যেকোনও ব্যক্তি;(চ) শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন এবং যৌন নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু;(ছ) নিরাশ্রয় ব্যক্তি বা ভবঘুরে;(জ) যেকোনও উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের লোক;(ঝ) পারিবারিক সহিংসতার শিকার অথবা সহিংসতার ঝুঁকিতে আছেন এমন যেকোনও সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি;(ঞ) বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন এমন যেকোনও ব্যক্তি;(ট) ভিজিডি কার্ডধারী দুঃস্থ মাতা;(ঠ)এসিড দগ্ধ নারী বা শিশু;(ণ) যেকোনও প্রতিবন্ধী;(ত) আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে আদালতে অধিকার প্রতিষ্ঠা বা আত্মপক্ষ সমর্থনে অসমর্থ ব্যক্তি;(থ) বিনা বিচারে আটক এমন ব্যক্তি যিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে আর্থিকভাবে অসচ্ছল;(দ) আদালত কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল বলে বিবেচিত ব্যক্তি এবং (ধ) জেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল হিসেবে বিবেচিত ব্যক্তি।

জনগণের সহায়তার জন্য এমন আরও কোনও প্রকল্প বাস্তাবায়নে মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘সামনে জাতীয় নির্বাচন। তাই আপাতত লিগ্যাল এইডের সঙ্গে নতুন কিছু যুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এইটুকু বলতে পারি, নিশ্চয়ই এই সেবা সম্প্রসারিত হবে। আরও কিছু সেবা যদি এর সঙ্গে যোগ করে জনগণের উপকার করা যায়, তবে অবশ্যই আমরা তা করবো। কেননা, লিগ্যাল এইড সার্ভিসটি আমাদের একটি অগ্রাধিকার প্রকল্প।’

জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক মো. জাফরোল হাছান বলেন, ‘লিগ্যাল এইডের কলসেন্টার সেবার পাশাপাশি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান ও প্রত্যেককে পৃথক পৃথক মোবাইল নম্বর সরবরাহের প্রক্রিয়া চলছে। এতে জনগণ আরও দ্রুত সময়ের মধ্যে কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আইনি সুবিধা পাবেন বলে আমরা মনে করছি।’ বাংলা ট্রিবিউন