মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ‘নগ্ন অর্থনৈতিক আগ্রাসন’: তেহরান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পরমাণু ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের মধ্যকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। ট্রাম্প প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আর সেই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করার জন্য জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তেহরান।
২০১৫ সালে সই হওয়া পরমাণু চুক্তি থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করার পর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) দ্বারস্থ হয়েছে ইরান।
গতকাল সোমবার সেই মামলার শুনানি ছিল। ইরানের দাবি, ট্রাম্প ১৯৫৫ সালের চুক্তি ভেঙেছেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, অন্তর্জাতিক আদালতে ইরানের দায়ের করা এই মামলা ‘কঠিনভাবে মোকাবেলা করা হবে’। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও গতকাল এ মন্তব্য করেন। তিনি ইরানের এই মামলার মেরিট নেই বলেও মন্তব্য করেন।
ট্রাম্প মনে করেন, ইরান যাতে পরমাণু বোমা বানাতে না পারে তা নিশ্চিত করতে এ নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন ছিল।
তবে আদালতে ইরানের প্রতিনিধি মোহসেন মোহেবি বলেন, এটি ‘নগ্ন অর্থনৈতিক আগ্রাসন’। দ্য হেগে তাঁর দল আদালতকে বলে, এই ব্যবস্থা এরই মধ্যে ইরানের অর্থনীতিকে ধসিয়ে দিয়েছে। জনগণও হুমকির মুখে পড়েছে। মোহেবি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে ইরানের অর্থনীতি, জনগণ ও কোম্পানিগুলোর সর্বোচ্চ যতটা সম্ভব ক্ষতি করার ঘোষণা দিয়েছে। ইরানকে অর্থনৈতিকভাবে শ্বাসরুদ্ধ করার যুক্তরাষ্ট্রের এই চেষ্টা শান্তিপূর্ণ উপায়ে শক্তভাবে প্রতিরোধ করবে তেহরান।
যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এরই মধ্যে ইরানের অর্থনীতিতে ছাপ ফেলতে শুরু করেছে। নানা সংকটের কারণে দেশজুড়ে প্রতিবাদ, ধর্মঘট ও বিক্ষোভ শুরু হয়ে গেছে। রাজনৈতিকভাবেও দেশে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম দফা নিষেধাজ্ঞায় অর্থনৈতিক লেনদেন, কাঁচামাল, গাড়ি, বিমান আমদানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। আগামী নভেম্বরে আরেক দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার চলমান এ কূটনৈতিক উত্তেজনার মূলে রয়েছে ২০১৫ সালে সই হওয়া পরমাণু চুক্তি। ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন’ (জেসিপিওএ) নামের এ চুক্তির এক পক্ষে সই করে ইরান। আরেক পক্ষে সই করে বিশ্বের ছয় পরাশক্তি—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ফ্রান্স, চীন ও জার্মানি। চুক্তি অনুযায়ী ইরান নিজেদের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করবে। এর বিনিময়ে তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এর পরের বছর ক্ষমতায় আসেন ট্রাম্প। তাঁর দৃষ্টিতে এই চুক্তি ‘ভয়াবহ রকম একতরফা’।
ইরানের দায়ের করা এই মামলার সিদ্ধান্ত হতে আগামী কয়েক মাস থেকে বছর পর্যন্ত গড়াতে পারে। গতকাল এর প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তী শুনানি হবে আগামীকাল বুধবার এবং আগামী বৃহস্পতিবার।