এসকে সিনহার ছুটি শেষ: দেশে ফেরার বিষয়ে জানেন না কেউ
---
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ছুটি আজ শুক্রবার (১০ নভেম্বর) শেষ হচ্ছে। ছুটিতে থাকা অবস্থায় গত ১৩ অক্টোবর তিনি অস্ট্রেলিয়া যান। বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) পর্যন্ত তিনি দেশে ফিরে আসেননি। প্রধান বিচারপতির ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি তিনি দেশে ফিরছেন না। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ, অ্যাটর্নি জেনারেল কারও কাছে কোনও তথ্য নেই।
এসকে সিনহা দেশে ফিরছেন কিনা বা ফিরলেও তিনি কবে আসতে পারেন, তা জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা সাইফুর রহমান বলেন, ‘আমরা তার ফেরার বিষয়ে কিছুই জানি না।’
একই বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘ওনার বিষয়ে এক্সট্রা অর্ডিনারি সিচুয়েশন তৈরি হয়েছে। এখন উনি কী করবেন না করবেন, কিছু আসে যায় না।’
তিনি ১০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের বাইরে থাকবেন বলে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেছেন। এখন রাষ্ট্রপতিকে না জানিয়ে সেই সময়কাল দীর্ঘায়িত করতে পারেন কিনা প্রশ্নে অ্যাটর্নি বলেন, ‘জানানোটা সাধারণ নিয়ম। কিন্তু সাংবিধানিক পোস্টের কেউ এরকম বিষয়ে না জানালে তার সঙ্গে সাধারণ কর্মচারীর মতো আচরণ করা যাবে না। ওনার ফেরা না ফেরাতে কিছু যায়-আসে না। অন্যান্য বিচারপতিরা যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, তারা ওনার সঙ্গে বসবেন না, তখন উনি বিচার বিভাগের জন্য বোঝা হয়ে গেছেন ।’
প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা দেশে ফেরার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’
তবে এ নিয়ে আইনমন্ত্রীকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এসকে সিনহা দেশে ফিরছেন কিনা বা ফিরলেও তিনি কবে আসতে পারেন, তা জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘তার দেশে ফেরার বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেল ভালো বলতে পারবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ছুটি শেষে দেশে না ফিরলেও তিনি (এসকে সিনহা) বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিই থাকবেন। তবে তিনি যতদিন না দেশে ফিরছেন, ততদিন স্বভাবিকভাবেই দায়িত্বরত (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান বিচারপতি তার ( এনকে সিনহা) দায়িত্ব পালন করবেন। এক্ষেত্রে কোনও সাংবিধানিক সংকটের সৃষ্টি হবে না।’
প্রসঙ্গত, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় সরকারের সঙ্গে এসকে সিনহার টানাপড়েন সৃষ্টি হয় অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধি সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ নিয়ে। এই বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের গড়িমসি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন তোলেন এসকে সিনহা।
তবে সর্বশেষ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর আপিলের রায়ের পর সরকারের সঙ্গে এসকে সিনহার সম্পর্ক আরও অবনতির দিকে যায়। এই রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে সৃষ্টি হয় তুমুল বিতর্ক। সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে রায়ে এসকে সিনহার পর্যবেক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে।
এরপর আলোচনা-সমালোচনার অবসান ঘটাতে গত ১৩ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। আইনমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে ‘প্রধান বিচারপতি অসুস্থ’ এই দাবি করার প্রেক্ষিতে এসকে সিনহা বিদেশ যাওয়ার আগে সেই রাতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি। কিন্তু ইদানিং একটা রায় নিয়ে রাজনৈতিক মহল, আইনজীবী, বিশেষভাবে সরকারের মাননীয় কয়েকজন মন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যেভাবে সমালোচনা করেছেন, এতে আমি সত্যিই বিব্রত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সরকারের একটি মহল আমার রায়কে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে পরিবেশন করায় প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি অভিমান করেছেন। এই অভিমান অচিরেই দূর হবে বলে আমার বিশ্বাস।’
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পান এসকে সিনহা। তার চাকরির মেয়াদ রয়েছে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। গত ২ অক্টোবর একমাসের ছুটি চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি পাঠান প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। তিনি ১৩ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে চান বলেও রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেছেন।