ঘন ঘন ডিভোর্সে ‘সুখী’ তারকা দম্পতিরাও! কেন?
---
বিনোদন ডেস্ক : সুখী দম্পতি হিসেবে পরিচিত তারকা দম্পতিরাও যাচ্ছেন ডিভোর্সে। যা অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য বলে মনে হচ্ছে। তবে বাস্তবতা বলছে, দেশীয় শোবিজে সম্পর্ক ভাঙার সংখ্যা দিন দিনই বাড়ছে। বলা যায় ডিভোর্সের মধ্য দিয়ে সংসার ভাঙার খবর কয়েকদিন পরপরই গণমাধ্যমে আসছে। এসব ঘটনা এলোমেলো করে দিচ্ছে পুরো শোবিজ অঙ্গনের ইমেজকে।
সম্পর্ক গড়া-ভাঙা এখন যেন খুব স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে শোবিজে। বিশেষত যেসব তারকাকে অনেকেই আদর্শ হিসেবে জানেন আর মানেন, তাদের কাছ থেকেই মিলছে এমন ঘটনা। চলচ্চিত্র, টিভি কিংবা সংগীতাঙ্গন যেটাই বলি না কেন কোনো মাধ্যমই বাদ নেই এ ভাঙনের দৌড়ে। এতে সাধারণ মানুষের চোখে শোবিজের ইমেজ প্রশ্নের মুখেই পড়ছে।
দেখা যাচ্ছে, সম্পর্কের অবনতি ঘটলেই আর দেরি করছেন না তারকারা। চটজলদি সিদ্ধান্ত নিয়ে ডিভোর্সে চলে যাচ্ছেন। যেন পানির মতো সহজ ব্যাপার স্যাপার। বলা যায় ছেলেখেলার মতো করেই সম্পর্কের সূত্রপাত, বিয়ে এবং অতঃপর ডিভোর্সের মাধ্যমে যবনিকা।
কেন এই ভাঙন?
যেসব তারকা দম্পতি এমন অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে নিজের নিজের শক্তিশালী ব্যাখ্যা। সেসব ব্যাখ্যার মধ্যে সামগ্রিক একটা কারণ বের হয়ে আসে। মূলত, তারকাদের দাম্পত্য জীবনের ভাঙন কিংবা ডিভোর্সের নেপথ্যে রয়েছে একে অপরের প্রতি অবিশ্বাস, সন্দেহ, মতবিরোধ। এর ওপর মন-মানসিকতার অমিলসহ নানা কারণ তো আছেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- অবিশ্বাস, সন্দেহ আর মতবিরোধ বাড়ছে কেন? অনেকেই এজন্য সময়কে বিদ্ধ করছেন। এখন সময়টাই এমন। একান্ত সম্পর্কের মধ্যেও ঢুকে গেছে তৃতীয় পক্ষ।
ডিভোর্সের তালিকায় কারা
শোবিজ অঙ্গনের ধারাবাহিক ডিভোর্সের তালিকায় সর্বশেষ সংযুক্ত হলেন মিথিলা-তাহসান। যারা কিনা সুখি তারকা দম্পতিদের তালিকার শীর্ষেই ছিলেন। অনেকের কাছেই তারা মডেল হিসেবে স্বীকৃতিও পেয়েছিলেন। তবে শেষ অবধি সেই বিশ্বাস ভেঙেই গেল। অবশ্য এমন বিশ্বাসে চিড় ধরিয়ে ইতোমধ্যে বিতর্কে আছেন মডেল ও চিত্রনায়ক নায়িকা শখ ও নিলয়। এদের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে গেছে। এরাও প্রেম করেই বিয়ে করেছিলেন।
বছর দুয়েক আগে তারকা দম্পতি হৃদয় খান-সুজানা ও শিমুল-নাদিয়া এমন আলোচনার ঝড় তুলে ডিভোর্স নিয়েছেন। চার বছরের প্রেম আর ৮ মাসের সংসার ভেঙে আনুষ্ঠানিক ডিভোর্স নেন হৃদয়-সুজানা। তাদের এই ভাঙন নিয়ে মিডিয়াপাড়ায় সবচেয়ে বেশি হৈ চৈ পড়েছে। কারণ একে অন্যের প্রতি অসীম ভালোবাসা থেকেই তারা বিয়ে করেছিলেন। নিজেদের সেই ভালোবাসার কথা বারবারই মিডিয়ার কাছে ফলাও করেছিলেন। এমনকি সুজানার জন্য নিজ পরিবারও ছেড়েছিলেন হৃদয়। কিন্তু মন-মানসিকতার অমিল ও মতবিরোধের কারণে টিকলো না তাদের সংসার।
দীর্ঘদিন প্রেমের পর ২০০৮ সালে বিয়ে করেন মডেল তারকা মনির খান শিমুল ও অভিনেত্রী নাদিয়া আহমেদ। ৭ বছর এক ছাদের নিচে কাটানোর পর হঠাৎ করে ভেঙে দিলেন সুখের সংসার। তারও আগে দীর্ঘ দেড় বছর প্রেম করে পরিচালক মাসুদ হাসান উজ্জ্বলকে বিয়ে করেছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী অপি করিম। অপির শ্যামলীর বাসায় দুই পরিবারের মধ্যস্থতায় চুপিসারে বিয়েও হয়। উজ্জ্বলের প্রথম হলেও অপির ছিল সেটি দ্বিতীয় বিয়ে। আগে অপি বিয়ে করেছিলেন আইটি প্রফেসর ড. আসিফ আহমেদকে। তবে একবছরের মাথায় তা ভেঙেও যায়। তবে দ্বিতীয় বিয়েও টিকে ছিল মাত্র পাঁচ মাস। অপি করিম তৃতীয় বিয়ে করেছেন নির্মাতা নির্ঝরকে।
দীর্ঘদিনের প্রেমের পর অভিনেত্রী মম বিয়ে করেছিলেন নির্মাতা এজাজ মুন্নাকে। দুজনেরই ছিল দ্বিতীয় বিয়ে। পুত্রসন্তানের মা-ও হন মম। কিন্তু শেষ অবধি টেকেনি। একবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন মম। পরে আরেক নির্মাতা শিহাব শাহিনের সঙ্গে ঘর বাঁধেন।
সাত বছর সংসার করার পর অভিনেত্রী রিচি সোলায়মানের সঙ্গে তার স্বামী রাসেক মালিকেরবিচ্ছেদের সুর বাজে। রিচির অভিযোগ, তার স্বামীর মানসিক সমস্যা, বনিবনা হচ্ছে না। এদের মতোই আরো কয়েকজন শোবিজ তারকা ডিভোর্সের মধ্য দিয়ে দাম্পত্যের ইতি টেনেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন মৌসুমী নাগ, মোনালিসা, রিয়া, বিজরী, বাঁধন প্রমুখ। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী আরো কয়েকজন তারকা ও তারকা দম্পতির সংসার রয়েছে ভাঙনের মুখে। অনেকেই রয়েছেন ডিভোর্সের দ্বারপ্রান্তে।
ছেলেখেলার মতো সংসার ভাঙার কারণ সবার ক্ষেত্রেই প্রায় কাছাকাছি। মতানৈক্য, মতবিরোধ, সন্দেহ, অবিশ্বাস ও মন-মানসিকতার অমিল। কেউ কারো জন্যই ছাড় দিতেই প্রস্তুত নন। সে কারণে খুবই দ্রুত গড়ে উঠছে প্রেম; আরো দ্রুত হচ্ছে বিয়ে; আর হঠাৎ করেই ঘোষণা আসছে ডিভোর্স কিংবা ভাঙনের। শোবিজ বোদ্ধরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাই তারা তারকা দম্পতিদের মানসিকতার পরিবর্তন, ধৈর্যশীল ও সহনশীল হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তাছাড়া শোবিজের ইমেজ কলঙ্কিত হবে, প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তলানিতে গিয়ে ঠেকবে এ অঙ্গনের মানুষদের প্রতি সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা। গো নিউজ