পরীক্ষা কেন্দ্রে সাংবাদিক ও সরকারি কর্মকর্তা যাওয়ায় সালিস ডেকে নালিশ
---
মাহবুব খান বাবুল, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে : প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে সাংবাদিক ও সরকারি কর্মকর্তা যাওয়ায় ভীষণ ভাবে ক্ষুদ্ধ হয়েছেন প্রধান শিক্ষক উত্তম ঘোষ। প্রথম দফায় বিদ্যালয়ের বাহিরে সভা করে পরিদশর্নকারীদের কটুক্তি ও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে মুঠোফোনে নালিশ করেও তৃপ্ত হতে পারেননি তিনি। এ জন্য পরীক্ষা ২৫ দিন পরও তিনি সেই ক্ষোভ ভুলতে পারছেন না। তাই গত মঙ্গলবার সকালে অরুয়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে তিনি ডেকে বসেন সালিস সভা। ওই সভায় গ্রামের সকল সর্দার মাতব্বরদের কাছে কেন্দ্র পরিদর্শনের বিষয়ে নালিশ করেন খোদ প্রধান শিক্ষক। তিনি সহকারি শিক্ষক আসিফ ইকবাল খোকনকে দ্রুত বদলির ব্যবস্থা করার জন্য সালিসকারকদের কাছে দাবী রাখেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে এ ভাবে বহিরাগত লোকদের ডেকে সালিস করাকে বেআইনী বলছেন উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা। বিষয়টি সম্পূর্ণ ভুল বুঝাবুঝি আখ্যায়িত করে নিস্পত্তির চেষ্টার কথা বলছেন পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি। বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২০ নভেম্বর ইংরেজী বিষয়ের পরীক্ষা চলাকালে অরুয়াইল সরকারি বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে যান সরাইল প্রেসক্লাবের অর্থসম্পাদক ও দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ মাহবুব খান বাবুল। কেন্দ্রে প্রবেশ করা মাত্র দায়িত্বে নিয়োজিত শিক্ষকরা ছটফট শুরু করেন। এক পর্যায়ে সভাপতি বলেই ফেললেন আমাদের এখানে হঠাৎ আসার কারন বুঝলাম না। মুঠোফোনে দ্রুত কেন্দ্র ত্যাগ করার অনুরোধ আসতে থাকে। ওইদিন সন্ধ্যার পর আখড়া নামক স্থানে ৬-৭ জন শিক্ষক ডেকে সভায় বসেন এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম ঘোষ। তিনি সাংবাদিকের কার্ড না দেখে কেন কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হল তার জবাব চান শিক্ষকদের কাছে। এছাড়া করেন নানা কটুক্তি। সভা থেকেই তিনি জেলার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে নালিশ করেন। পরের দিন অরুয়াইল পাকশিমুল ইউনিয়নের কেন্দ্র পরিদর্শনে যান মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সহিদ খালিদ জামিল খান। তিনিও একসময় অরুয়াইল কেন্দ্রটিতে প্রবেশ করে কিছু অনিয়ম ধরে ফেলেন।
২২ নভেম্বর বিধান জেনেও তথ্য গোপন করার অপরাধে উত্তম ঘোষসহ ১০ শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এক শিক্ষককে করা হয় শোকজ। এতে চরমভাবে ক্ষুদ্ধ হন উত্তম ঘোষ। তিনি বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আসিফ ইকবালের সাথে পরিদর্শনকারীদের যোগসাজশের সন্দেহের তীঁর ছুড়েন। গত মঙ্গলবার তিনি তার অফিস কক্ষেই ডেকে বসেন সালিস সভা। সভায় সকল শিক্ষককে দাওয়াত করলেও আসিফকে জানাননি প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়ের সভাপতি বোরহান মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সালিস সভায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সালিসকারক মোঃ কুতুব উদ্দিন ভূঁইয়া, আ’লীগের সভাপতি হাজী আবু তালেব, মফিজ মিয়া, মোঃ শাহেদ মিয়া, মোঃ মাসুক মিয়া, প্রদীপ চন্দ্র দাস ও ক্ষিরোধ গোপ। মুখ্য আলাচক হয়ে যান প্রধান শিক্ষক। তিনি কেন্দ্র পরিদর্শনে সাংবাদিক ও শিক্ষা কর্মকর্তা আসায় ফলাফল ভাল না হওয়ার শঙ্কার উল্লেখ করে সবার কাছে আসিফের বিচার চান। সরকারি প্রতিষ্ঠানে বসে সালিসকারকদের ডেকে অধঃস্তন সরকারি কর্মকর্তার বিষয়ে বহিরাগতদের কাছে বিচার চাওয়ার বিষয়টি ঘিরে গোটা অরুয়াইলে সমালোচনার ঝড় বইছে। এ ছাড়া শিক্ষক আসিফদের সাথে প্রতিপক্ষের দাঙ্গা বেঁধে যাওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। সহকারি শিক্ষক পিযুষ দাস ও সিদ্দিকুর রহমান সহকারি শিক্ষক আসিফকে কিছু না জানিয়ে স্থানীয় সালিসকারকদের ডেকে অফিসে বসে সালিস সভায় নালিশ করার কথা স্বীকার করে বলেন, পরীক্ষা কেন্দ্রে সরাইল থেকে লোকজন আসার পেছনে আসিফের ভূমিকা রয়েছে বলে বিচার প্রার্থী হন প্রধান শিক্ষক। পরে স্থানীয় সর্দারদের উপর ছেড়ে দেন। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি মোঃ বোরহান মিয়া সরকারি দফতরে বেসরকারি লোকদের নিয়ে সালিস করে শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার কথা স্বীকার করে বলেন, আসলে অনেক কিছুই বেআইনী ভাবে হয়ে যায়। তাদের ভুল বুঝাবুঝির বিষয়টা বসে নিস্পত্তি করে দিব।
প্রধান শিক্ষক উত্তম ঘোষ বলেন, এসএমসি, পিটিএ সদস্য ও এলাকার গণ্যমান্য লোকদের নিয়ে একটি সভা করেছি। এখানে সরকারি বিধির কিছু নেই। সভায় অংশ গ্রহনকারী কেউ যদি বলে নালিশ করেছি আমার কিছু করার নেই। সকলকে দাওয়াত দিলেও ওই সভায় আসিফকে দাওয়াত দেননি কেন? এমন প্রশ্নের কোন সদত্তোর দিতে পারেননি তিনি। উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মোস্তফা কামাল বলেন, সরকারি অফিসে বসে এমন সালিস বিধি সম্মত নয়। আমি এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দেখছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাহিদা হাবিবা বলেন, সরকারি লোকের নালিশের জন্য সালিসকারক ডাকবে কেন? এটা মোটেও আইনসম্মত নয়। অভিযুক্ত সহকারি শিক্ষক আসিফ ইকবাল খোকন বলেন, সালিসকারকদের ডেকে আমার বিষয়ে প্রধান শিক্ষক যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। সকল শিক্ষক সভার দাওয়াত পেল।
আমি পেলাম না কেন? তিনি শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে প্রায়ই দূর্ব্যবহার করেন। খাবারের কথা বলে বাড়িতে গিয়ে আর বিদ্যালয়ে ফিরেন না। সকালে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে নৌকা তৈরীর কাজ দেখাশুনা করার জন্য নদীর ঘাটে চলে যান। আমরা মাঝে মধ্যে এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করি। এটাই অপরাধ। তিনি আমাদের প্রতিপক্ষকে কৌশলে ক্ষেপিয়ে দিয়েছেন। আমাদের লোকজনও উত্তেজিত হচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিষয়কে গ্রাম্য দাঙ্গায় ঠেলে দিলেন। কোন রক্তপাত ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটলে উনাকেই দায় নিতে হবে। প্রসঙ্গতঃ গত ২০ ও ২১ নভেম্বর অরুয়াইল স্কুল কেন্দ্রে সাংবাদিক ও শিক্ষা কর্মকর্তা পরিদর্শনে যাওয়ার পর থেকেই ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন প্রধান শিক্ষক উত্তম ঘোষ। কখনো কটুক্তি কখনো দম্ভোক্তি করছেন। ফাঁকে ফাঁকে এ বিষয়ে শিক্ষকদের নিয়ে সভাও করছেন। নাম প্রকাশ না শর্তে এলাকার একাধিক অভিভাবক জানান, তিনি পছন্দের পরীক্ষার্থীদের জিপিএ-৫ পাওয়ানোর জন্য সকল পন্থাই অবলম্বন করে থাকেন। টার্গেট তিনি গুনধর শিক্ষক। নিজের পছন্দমত সিটপ্লান ও শিক্ষক দিয়ে থাকেন। টাকার বিনিময়ে বিধি বহির্ভূতভাবে কিছু শিক্ষক রাখেন শিক্ষার্থীদের নকলে সহায়তা করার জন্য। এবার পরিদর্শনকারীদের উপস্থিতির কারনে উনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যাঘাত ঘটেছে। এ জন্য এমন করছেন।