লাইফস্টাইল ডেস্ক :আমাদেরকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে হয়। হোক সেটা চাকরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বা ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্যে অথবা নতুন কারো সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে।নতুন কারো সঙ্গে সাক্ষাতের ক্ষেত্রে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কিন্তু মানুষজন আপনার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়ে যায়। অর্থাৎ আপনাকে চাকরিতে নিবে কিনা বা আপনার সঙ্গে কোনো সম্পর্কে জড়াবে কিনা অথবা আপনার আচরণ বন্ধুত্বপূর্ণ কিনা।
উদ্দেশ্যে যাই হোক নতুন কারো সঙ্গে সাক্ষাতের ক্ষেত্রে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কিন্তু আপনার সম্পর্কে একটা ধারণা তারা পেয়ে যায়। তাই কারো সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একবার যদি কারো মনে আপনার সম্পর্কে খারাপ ধারণা জন্ম নেয় তা দূর করা এতো সহজ নয়।
তাই প্রথম সাক্ষাতেই কারো মনে যেন আপনার সম্পর্কে কোনো খারাপ ধারণা জন্ম না নেয়, সে সম্পর্কে সব সময় সচেষ্ট থাকা উচিত।
এই লেখায় বিশ্ববিখ্যাত বক্তা এবং লেখক নিকোলাস বুথম্যানের ‘How to Make People Like You in 90 Seconds or Less’ বই থেকে প্রথম সাক্ষাতের করণীয় সম্পর্কে পাঁচটি ধাপ এখানে তুলে ধরছি। যেখানে মূলত তিনি সাক্ষাতের সময় কথোপকথনের মাধ্যমে কিভাবে অন্যের সঙ্গে বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক তৈরি করবেন সে কৌশলগুলোই তুলে ধরেছেন।
এই ধাপগুলো অনুসরণ করলে মাত্র চার সেকেন্ড বা আরো কম সময়ে আপনি অন্যের কাছে একজন পছন্দনীয় ব্যক্তিতে পরিণত হবেন।
ধাপ ১: খোলামোলা হন
বুথম্যান বলেন ‘সাক্ষাতের সময় আপনাকে শারীরিক এবং মানসিক উভয় দিক দিয়েই খুবই খোলামোলা মনোভাব প্রকাশ করতে হবে।’
আপনার শরীরিক ভাষার নিরিখে আপনি যখন কোনো ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাত করছেন-তখন আপনার হৃদয় সরাসরি তার দিকেই স্থির রাখা উচিত। এ সময় হাত বা বাহু দিয়ে আপনার হৃদয় ঢেকে রাখবেন না। এবং আপনি যদি একটি জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় থাকেন তবে হাত মেলানোর পূর্বেই বোতামগুলো খুলে ফেলুন।
এটি একটি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলার জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন কোন ব্যক্তিকে অভিবাদন জানাচ্ছেন তখন তা অনুভব ও ইতিবাচক মনোভাবের ব্যাপারেও আপনাকে সচেতন হতে হবে।
ধাপ ২: চোখে চোখ রাখুন
বুথম্যান বলেন, সাক্ষাতের শুরুতেই সাক্ষাতকারীর চোখে চোখ রাখুন (আই কন্টাক্ট) এবং আপনার চোখে যেন আপনার ইতিবাচক মনোভাবই প্রতিফলিত হয়।
আপনি যদি আই কন্টাক্টে তৈরির বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে থাকেন, তাহলে বুথম্যান একটি সহজ কৌশল শিখে রাখার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। তা হচ্ছে, আপনি যখন টিভি দেখেন তখন টিভিতে থাকা ব্যক্তির চোখের রঙ খেয়াল করুন এবং আপনার মস্তিস্ককে সেই রঙ বলুন। পরের দিন, যাদের সঙ্গে আপনার দেখা হবে, এই পদ্ধতিটি অবলম্বন করুন।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, অধিকাংশ লোক প্রায় তিন সেকেন্ড ধরে চোখে চোখ রাখাকে পছন্দ করে। গবেষণায় কেউই নয়টি সেকেন্ডের চেয়ে বেশি সময় ধরে চোখে চোখ রাখাকে পছন্দ করেনি।
ধাপ ৩: হাসুন
বুথম্যান সাক্ষাতের শুরুতেই হাসার উপদেশ দেন। হাসি এই বার্তা দেয় যে, আপনি আন্তরিক।
গবেষণায় বলা হয়েছে, সাক্ষাতের শুরুতেই সাক্ষাতকারীর উদ্দেশ্যে আপনার একটি স্মিত হাসি আপনাকে তাদের কাছে স্মরণীয় রাখতে একটি ভালো উপায়।
কিন্তু মনে রাখবেন আপনি যদি একটি চাকরির সাক্ষাতকারে এই কৌশলটি ব্যবহার করেন তবে প্রাথমিক দেখা এবং অভিবাদন পর আপনার হাসি লুকিয়ে ফেলুন।
ধাপ ৪: ‘হ্যালো’ বলুন
আপনি অভিবাদনে ‘হাই’, ‘হেই’ অথবা ‘হ্যালো’ বা অন্য যেকোনো শব্দই ব্যবহার করেন না কেন, তা আনন্দের সঙ্গে উচ্চস্বরেই বলুন যেন সহজেই ব্যক্তিটির সঙ্গে আপনার জানাশোনা তৈরি হয়।
এরপরে আপনি আপনার হাত প্রসারিত করে দৃঢ়ভাবে হ্যান্ডশেক করুন যা সাধারণত একটি ইতিবাচক ছাপ সৃষ্টি করে।
আপনি যে ব্যক্তির সাক্ষাৎ করছেন সে যদি তার নাম বলে তাহলে কয়েক বার তা পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করুন। উদাহরনস্বরূপ, সে যদি তার নাম বলে সারা তাহলে আপনি বলতে পারেন, ‘সারা, তোমার সঙ্গে দেখা করে ভালো লাগল, সারা!’
আপনি যখন একাধিক মানুষের সাথে সাক্ষাদ করছেন তখন তো একযোগে সবার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করতে পারবেন না। বুথম্যান বলেন, এক্ষেত্রে একটি ‘হ্যান্ডস-ফ্রি’ হ্যান্ডশেক করতে পারেন। আপনি সাধারণত হ্যান্ডশেকের সময় যা কিছু করতেন, তার সবকিছুই করুন। তাদের দিকে আপনার হৃদয় স্থির রাখুন, হ্যালো বলুন, এবং হাসুন- কিন্তু আপনার হাত প্রসারিত করবেন না।
ধাপ ৫: হেলে পড়বেন না
যে ব্যক্তি আপনার সঙ্গে সাক্ষাত করছে তার দিকে হেলে পড়ার কোনো প্রয়োজন নেই।