লাইফস্টাইল ডেস্ক :ভূত নিয়ে সমাজে প্রচলিত আছে নানা গল্প ও কৌতুক। তবে অনেকের কছেই ভূত বিশ্বাস করাটা খাঁটি বাস্তব একটা বিষয়ও বটে।
যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৫ সালে গ্যালাপের পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, প্রতি চারজন আমেরিকানের তিনজনই অতিপ্রাকৃত বা অস্বাভাবিক বিশ্বাস লালন করেন। আর ২০০৯ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২৯ শতাংশ বলেছেন, তারা মৃত মানুষের সাক্ষাৎ পেয়েছেন। আর ১৮ শতাংশ বলেছেন তারা জীবনে অন্তত একবার ভূত দেখেছেন।
সুতরাং এখন প্রশ্ন হলো, কোনো বাস্তব সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়াই কীসের কারণে আমরা ভূতের অস্তিত্বে বিশ্বাস করি।
দক্ষিণ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী ব্যারি মোরকোভস্কি ২০১৫ সালে বিজনেস ইনসাইডারকে বলেন, মানুষের মন তালগোল পাকানো তথ্য থেকে অর্থ তৈরির জন্য ছাঁচ তৈরি করে।
আর কেউ ভূত দেখে থাকেন সাধারণত অস্পষ্ট পরিস্থিতিতে। উদাহরণত, অল্প আলোতে, অথবা যখন আমরা সবেমাত্র জেগে উঠি বা ঘুমাতে যাই, যখন আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো তাদের কার্যকারিতার শীর্ষে থাকে না।
যারা ভূত দেখেছেন তারা মূলত আগে থেকেই তা প্রত্যাশা করছিলেন। আর ওই প্রত্যাশার কারণেই আমরা পরিত্যক্ত বাড়ি অথবা আমরা প্রায়ই ভ্রমণ করি এমন জায়গায় ভূত দেখি।
বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ভূতই হলো সবচেয়ে প্রচলিত অতিপ্রাকৃত বিশ্বাস। স্কেপটিক্যাল এনকোয়ারার ম্যাগাজিন এবং ‘সায়েন্টিফিক প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেশন : হাউ টু সলভ আনএক্সপ্লেইনড মিস্টেরিস’ এর লেখক বেঞ্জামিন র্যাডফোর্ড ২০১৫ সালে বিজনেস ইনসাইডারকে এ কথা বলেন।
আর এই অতিপ্রাকৃত বিশ্বাসের সঙ্গে তাদের পরকালে বিশ্বাসেরও একটি সম্পর্ক রয়েছে। বেশির ভাগ ধর্মেই পরকালে বিশ্বাস একটি সাধারণ প্রবণতা।
২০১৪ সালে ডাচ গবেষকরা এ বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন। ‘আমরা অতিপ্রাকৃত কোনো সত্তার দেখা পাওয়ার প্রত্যাশা করার পরই মূলত ভূতের দেখা পাই’ এই ধারণাটি নিয়েও তার গবেষণা চালান। গবেষণায় তারা এ বিষয়ে পাঁচটি পরীক্ষা চালান। ‘দানব’ বা ‘আত্মা’ এ জাতীয় বিশেষ কিছু শব্দ শোনার পর ধার্মিক এবং অধার্মিকরা অতিপ্রাকৃত কিছু দেখেন কিনা তা নিয়েও তারা পরীক্ষা চালান।
গবেষণা শেষে গবেষকরা উপসংহার টানেন যে, ওই অতিপ্রাকৃত শব্দগুলো শোনার পর গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ধার্মিক লোকরা এতে প্রভাবিত হয়ে অতিপ্রাকৃত সত্তার দেখা পেয়েছেন। তবে অধার্মিক লোকদের ওপরও শব্দগুলোর একই প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি।
অনেকে ভূতের কথা ভেবে শিহরণ অনুভব করে আনন্দ লাভ করতে চান। এ ধরনের লোকরা ভূত বিশ্বাস করেন ঠিক সে কারণে যে কারণে লোকে ভয়ের সিনেমা দেখতে চান বা মেয়েরা বাথরুমে ঢুকে ভূত ভূত খেলা বা রক্তাক্ত ম্যারি খেলা খেলতে চান। শুধু একটু শিহরণ অনুভব করার জন্য। আর লোকে এই ধরনের শিহরণ অনুভব করতে চায় কারণ তারা জানে যে, সত্যিকার অর্থেই তাদের বিপদে পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
আর এ কারণেই ভূত সম্পর্কে আমাদের নানা গোলমেলে ধারণা তৈরি হয়। ভূতরা কি আমাদের ক্ষতি করবে, কোন ক্ষেত্রে দিনটিকে রক্ষা করার জন্য আমাদের কিছু ভূত তাড়িয়ে লোকের দরকার হবে? অথবা তারা কি শুধু পথহারা আত্মা মাত্র?