মালয়েশিয়া থেকে প্রতিনিধি: মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকদের বৈধকরণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে ধীরগতির অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া আশানুরুপ সাড়া মিলছে না নিবন্ধন প্রক্রিয়ায়। প্রতিদিন ধর-পাকড়ের ফলে শ্রমিকদের মাঝে চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এদিকে, চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া নিবন্ধনের ব্যাপারে দেশটির সরকার বিদেশি শ্রমিক নিয়োগদাতা কোম্পানিগুলোর অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করে নিতে পুনঃনিবন্ধন প্রকল্পের সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে।
দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী জাহিদ হামিদি এ তথ্য জানিয়েছেন। তবে অবৈধ শ্রমিকদের বৈধকরণের এ নিবন্ধন প্রক্রিয়া সফলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশটির শ্রমিক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। শ্রমিক রফতানিকারক শাহমাস হোল্ডিং এসডিএন বিএইচডি প্রতিষ্ঠানের মালিক মামুন বিন আব্দুল মান্নান এ প্রতিবেদককে জানান, ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত তার কোম্পানির মাধ্যমে ছয় শ` শ্রমিকের নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে ২শ` শ্রমিকের নিবন্ধন বাতিল করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ। চার শ` শ্রমিকের মধ্যে ৮৩ শ্রমিকের ইমিগ্রেশনে বিল পরিশোধ করার নয় মাস পর মাত্র ১৪ শ্রমিকের ভিসা পেয়েছেন।
এ ছাড়া বাকি ৩১৭ জনের নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মান্নান বলেন , রি-হিয়ারিং পোগ্রামে ৬৫ শতাংশ বাংলাদেশি শ্রমিক নিবন্ধন করেছেন; যা অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। তবে এ প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া সরকার বিভিন্ন নিয়ম-কানুন বেধে দেয়ায় ৩০ শতাংশের বেশি শ্রমিক বৈধ হবে না।
দেশটিতে বসবাসরত কমিউনিটি নেতারা শ্রমিকদের বৈধকরণের ব্যাপারে দু`দেশের সরকার দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের কল্যাণে সুষ্টু পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানিয়েছেন।
এদিকে, শ্রমিকরা বলছেন, রি-হিয়ারিং প্রোগ্রামে সরকার নিবন্ধন ফি এক হাজার দুই শ’ থেকে দেড় হাজার রিঙ্গিত নির্ধারণ করলেও সব মিলিয়ে গুণতে হচ্ছে ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার রিঙ্গিত। প্রায় ১৬টি ক্যাটাগরিতে টাকা জমা দিতে হচ্ছে তাদের। যা প্রস্তাবিত খরচের তিনগুণ বেশি। বিভিন্ন নিয়োগকর্তার ফিও বহন করতে হচ্ছে শ্রমিকদের। এ ছাড়া আবেদন নাকচ হলে ফি বাবদ নেয়া টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না শ্রমিকরা।
সূত্র বলছে, সরকারি নিয়মে অনেক শ্রমিকই বাদ পড়তে পারেন। তাই এই অনিশ্চিত প্রক্রিয়ায় কেউই ভরসা পাচ্ছেন না। বর্তমানে প্রায় ৩ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসী অবৈধভাবে অবস্থান করছেন দেশটিতে।
অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করে নিতে বারবার তাগিদ দিয়ে আসলেও নিবন্ধনের আওতায় আসছেন না অনেকে। এ নিয়ে হতাশায় পড়েছে সরকার। প্রকল্পের সময়সীমার মধ্যে যদি কোনো শ্রমিক বাদ পড়েন তাহলে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশসহ ১৫টি সোর্স কান্ট্রিকে একটি গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারকে আলাদা করা হয়েছে। মোট পাঁচটি ব্যক্তি মালিকানাধীন কোম্পানিকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশসহ একই গ্রুপের ১৫টি দেশের শ্রমিকদের নিবন্ধন করার জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মাই ইজির নেতৃত্বে পিএমএফ কনসোর্টিয়াম করা হয়েছে ৩টি কোম্পানিকে। এ ছাড়া ইন্দোনেশীয়দের নিবন্ধন করার জন্য ইমান নামে একটি কোম্পানি কাজ করছে। অপরদিকে মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য বুকিত ইন্দাহ নামে একটি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এ দিকে মালয়েশিয়ায় বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে ৪০ শতাংশই অনিবন্ধিত বলে জানিয়েছেন দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রী দাতুক রিচার্ড রায়ট জায়েম। তিনি বলেছেন, ২০২০ সালের মধ্যে বিদেশি কর্মীর ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় মালয়েশিয়া। কিন্তু এ বড় অংশ অনিবন্ধিত শ্রমিকের কারণে তা বেশ দুরূহ হয়ে পড়েছে।
রিচার্ড রায়ট জায়েম বলেন, মালয়েশিয়া যখন একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে, তখন মোট শ্রমশক্তির ১৫ শতাংশ বিদেশি শ্রমিকের ওপর নির্ভর হওয়াটাই সরকারের লক্ষ্য। মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কাছে নিশ্চিত জরিপ নেই, তবে হিসেব অনুযায়ী প্রতি ১০ জন নিবন্ধিত বিদেশি শ্রমিকের বিপরীতে ৭ জন অনিবন্ধিত বিদেশি শ্রমিক রয়েছেন।’
সম্প্রতি মালয়েশিয়ার সংসদে (আইনসভার নিম্নকক্ষ) বিরোধীদল পাস পার্টির সংসদ সদস্য নাসরুদিন হাসানের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব বিদেশি শ্রমিক হয়তো এমন মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করেন, যেটা সরকার স্বীকৃত নয়। হয়তো মালয়েশিয়ায় নিয়োগকর্তারা অনিবন্ধিত এজেন্সির মাধ্যমে তাদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
রায়ট বলেন, সরকারি হিসেব অনুযায়ী ১৯ লাখ নিবন্ধিত বিদেশি শ্রমিক রয়েছেন। তবে এ শ্রমিকরা ভবিষ্যতে মালয়েশীয়দের জন্যে কাজের অভাব তৈরি করবে না। সরকার সব সময়ই কর্মক্ষমতা হিসেবে মালয়েশীয়দের অগ্রাধিকার দেবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে প্রচুর সংখ্যক কর্মীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। ফলে ২০২০ সালের মধ্যে অন্তত শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশ মালয়েশীয়রা অর্জন করতে পারবে।
এ দিকে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত ২ লাখ ৪৪ হাজার ৯৭৩ শ্রমিক নিবন্ধিত হয়েছেন। আর নিবন্ধিত শ্রমিকের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশি শ্রমিক। প্রথম অবস্থানে ইন্দোনেশিয়া ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেপালি শ্রমিক। মালয়েশিয়ায় সক্রিয় নিবন্ধনকৃত শ্রমিকের সংখ্যা ১৯ লাখ ৭৮ হাজার ৯৪৮ জন।
তালিকায় সর্বোচ্চ অবস্থানে ইন্দোনেশীয় শ্রমিকের সংখ্যা ৭ লাখ ৯২ হাজার ৫৭১ জন , নেপালি রয়েছেন ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৯৫২ এবং বাংলাদেশি আছেন ২ লাখ ৪৪ হাজার ৯৭৩ জন।