মাহবুব খান বাবুল, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে : গত ২৯ সেপ্টেম্বর চরম অনিয়ম দূর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগের সত্যতা আঁচ করতে পেরে সরাইলে ১০ টাকা কেজির চাল বিক্রি বন্ধ করে দেন নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাহিদা হাবিবা। অভিযোগ উঠেছিল এক আঙ্গুলের টিপসহিতেই মাষ্টাররোল কমপ্লিটের। এ ছাড়া ইচ্ছেমত কালো বাজারে ফেয়ার প্রাইজের চাল বিক্রি করার। আর তাই স্বচ্ছল বিত্তশালীদের না বাদ দিয়ে সকল ক্রটি সংশোধন করে পুনরায় তালিকা করার নির্দেশ দিয়ে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন তিনি। ফাঁকে গত ২১ অক্টোবর দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় ‘সরাইলে ১০ টাকা কেজির চাল বিক্রি বন্ধ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। নড়েচড়ে বসে কর্তৃপক্ষ। গতি চলে আসে তদন্তে। প্রায় এক মাস পর অনিয়ম থাকায় বাতিল করা হয়েছে ৩৩৫ টি কার্ড। আর সংশোধন করা হয়েছে ১১২ টি কার্ড। অর্ধেকের বেশী কার্ডে অনিয়ম থাকায় ৩ ইউনিয়নে চাল বিক্রি এখনো বন্ধ রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। ইউএনও’র কার্যালয় ও খাদ্য অফিস সূত্রে জানা যায়, সরকারের দেয়া ১০ টাকা কেজি চালের সুবিধাভোগী হবে দুস্থ্য দরিদ্র অস্বচ্ছল ব্যক্তিরা। কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা কৌশলে নিজেদের স্বজন ও কাছের স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নাম দিয়ে শুরুতেই অনিয়মের ঝড় তোলেছেন। কাগজে কলমে ডিলার নিয়োগ দিলেও ২/১ জন চেয়ারম্যান নিজেই ডিলার। একজন জনপ্রতিনিধি নামে বেনামে একাধিক কার্ড তৈরী করে হাতিয়ে নিচ্ছেন গরীবের চাল। তারপর আবার ওজনে দিচ্ছেন কম। এমন সব অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পান ইউএনও। তিনি দ্রুত সকল ইউনিয়নে ঘোষনা দিয়ে গত এক মাস বিক্রি বন্ধ রাখেন। এবং সংশ্লিষ্ট টেক অফিসারদের মাধ্যমে ৯ ইউনিয়নের সকল কার্ড নিজেদের হাতে নেন। যাচাই বাচাই করতে গেলে ধরা পড়ে সকল অনিয়ম স্বজনপ্রীতি ও দূর্নীতি। উপজেলায় মোট সুবিধাভোগী ৮ হাজার ৩২০ জন। সরাইল সদর ইউনিয়নে ১ হাজার ২৩৯ টি কার্ডের মধ্যে ক্রুটি থাকায় ১২৬ টি কার্ড বাতিল করা হয়েছে। পানিশ্বর ইউনিয়নে ৯৫৫ টির মধ্যে ক্রটিপূর্ণ ১০টি কার্ড সংশোধন করা হয়েছে। অরূয়াইলে ৯৫২ টির মধ্যে ১০২ টি কার্ড সংশোধন করা হয়। চুন্টায় ৮৪৫টির মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ৭৪টি কার্ড। পাকশিমুলে ১ হাজার ১০৫টির মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ৭০টি। শাহজাদাপুরে ৬৪১টির মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ৬৫টি কার্ড। আর শাহবাজপুরে ৮৮৫টি, কালিকচ্ছে ৮০৯ টি ও নোয়াগাঁও-এ ৯৯৯টি কার্ড। এ তিন ইউনিয়নের প্রত্যেকটিতে অর্ধেকের বেশী কার্ডে অনিয়ম থাকায় এখনো চাল বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ইউএনও। তাই তাদেরকে দ্বিতীয় দফা ডিও দেওয়া হয়নি। দ্রুত কার্ড গুলি সংশোধনের সুযোগ দিয়েছেন। সমগ্র উপজেলায় মোট ৪৪৭টি কার্ড বাতিলের পর ১১২ টি কার্ড সংশোধন করা হয়েছে। এরপরও ক্রটি ও অনিয়মের কারনে চুড়ান্ত ভাবে বাতিল করা হয়েছে ৩৩৫ টি কার্ড। এই হচ্ছে গরীবের চাল নিয়ে চালবাজী। একমাস বন্ধ থাকার পর গত বৃহস্পতিবার ৬ জন ডিলারকে দেয়া হয়েছে ডিও।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ শাখাওয়াত হোসেন ও গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহাদাত হোসেন ভূইয়া বলেন, তালিকায় এখনো ক্রটি থাকায় ৩ ইউনিয়নকে চাল উত্তোলনের অনুমতি দেয়া হয়নি। উপজেলা খাদ্য ক্রয় কমিটির সভাপতি ও নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাহিদা হাবিবা বলেন, গরীবের চাল বিক্রিতে স্বচ্ছতা আনার জন্যই বিক্রয় বন্ধ রেখে তদন্ত করেছি। অনিয়ম পেয়েছি। শতাধিক কার্ড সংশোধন করেও ৩৩৫ টি কার্ড করতে হয়েছে। ৩ ইউনিয়ন সংশোধিত তালিকা না করা পর্যন্ত কোন ডিও পাবে না।
মাহবুব খান বাবুল
২৮.১০.১৬