নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রতিদিন প্রায় ৩০ লাখ করে হলেও মাসে প্রায় ১০ কোটি ইয়াবা বাংলাদেশ-মায়ানমারের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে আসছে। পাচারকালে কিছু চালান আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও সিংহভাগ পাচার হচ্ছে এখন নৌ ও আকাশ পথে । অভিযোগ উঠেছে, টেকনাফে কর্মরত সাবেক ওসি আতাউর ও ক্যাশিয়ার মামুনসহ আইন শৃঙ্কলার বাহিনী অনেক অসৎ সদস্য সরাসরি ইয়াবা ব্যবসা করে বর্তমানে বিশাল কোটিপতি বনে গেছেন। যার ফলে দেশে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করছে ইয়াবা। বাংলাদেশ-মায়ানমারের প্রায় ৪০টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন আসছে ইয়াবা। গড়ফাদাররা এখন শহর ছাড়াও গ্রামেও ছড়িয়ে দিচ্ছেন ইয়াবা। যার ফলে বেড়েই চলেছে ইয়াবা সেবনকারীর সংখ্যা। মায়ানমারে উৎপাদিত ইয়াবা নানা কৌশলে পৌঁছে দেওয়া হয় নির্ধারিত স্থানে। নাফ নদীর ১৪ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায়ই ব্যবহার হচ্ছে ইয়াবা পাচারের প্রধান রুট হিসাবে।
জানাগেছে, ইয়াবার চালান সীমান্ত পার করার পর বেশীর ভাগ ইয়াবা পাচার হচ্ছে সমুদ্র পথে। ইতোমধ্যে সমুদ্র পথে বিশাল কয়েকটি চালান আটক করেছে কোষ্টগার্ড ও বিজিবি। বছর আগে ইয়াবার আগ্রাসন রোধে কয়েকজন তালিকাভ্ক্তু ইয়াবা ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারে জোর অভিযান শুরু করলে সাময়িক বন্ধ ছিল ইয়াবা পাচার। এখন ইয়াবা ব্যবসায়িরা আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মায়ানমারের মংডু এবং টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন এলাকা ইয়াবা পাচারের প্রধান পয়েন্ট হিসেবে দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা বিভিন্নভাবে পাস নিয়ে মায়ানমারে প্রবেশ করে ইয়াবা চালান নিয়ে দেশে ফিরে আসে। তারা মায়ানমারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন পয়েন্ট পার হয়ে মংডু এলাকায় ইয়াবা পৌঁছে দেয় এ ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। ইয়াবা বহনকারীদের বেশিরভাগই বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী দলের সক্রিয় সদস্য। ইয়াবার কারখারখানা গুলো বিছিন্নতাবাদীদের অর্থের প্রধান উৎস হওয়া তারা জীবনের ঝুকি নিয়েই বাংলাদেশে পার করে দিচ্ছে ইয়াবা। মায়ানমারের ৩৭টি ইয়াবার কারখানায় উৎপাদিত ৮০ ইয়াবা বাংলাদেশে পাচার করছে ওই বিছিন্নতাবাদী চক্রটি। তাদের সাথে যুক্ত রয়েছে বাংলাদেশের ইয়াবা ব্যবাসয়ি ও গডফাদাররা। ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত এমন একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ করা খুবই কঠিন। যে রুট দিয়ে প্রশাসনের তদারকি বাড়ে সে রুট দিয়ে আর পাচার করা হয় না। প্রতিনিয়ত নতুন রুট আবিস্কার করে ইয়াবা ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। ধরা না পড়া পর্যন্ত ইয়াবা পাচারের বিষয়টি প্রকাশ হয় না। আকাশ পথে দীর্ঘদিন ইয়াবা পাচার হলেও বিষয়টি প্রকাশ হওয়ায় এখন তা কমে এসেছে। সমুদ্রের বিশাল এলাকা দিয়ে পাচার হচ্ছে ইয়াবা। এটি নিয়ন্ত্রণ করার কোন সুযোগ নেই। বিপুল সংখ্যক মাছ ধরার ট্রলার কোনটি ইয়াবা বহন করছে তা অগ্রীম তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত প্রশাসন কিছুই জানে না। কোন বহনকারী প্রশাসনের নজরে পড়ে তাকে আর ব্যবহার করা হয় না। প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করা হয় ইয়াবা বহনকারীদের। ইয়াবা বহনকারীরা নিজেই জানে না তারা কার ইয়াবা বহন করছে। ৭/৮ জনের হাত বদলে ইয়াবা পৌছে যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ লাখ ইয়াবা আসছে বাংলাদেশে।