নিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশবিদদের সমালোচনা করে বলেছেন, মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য পরিবেশবিদেরা কোনো টুঁ শব্দ করেননি।
প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল উন্মুক্তকরণ ও ১১টি ড্রেজার কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এই সমালোচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ সালের পর থেকে প্রায় দীর্ঘ ২১ বছর মোংলা-ঘষিয়াখালী নৌ চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে ছিল। যে কারণে বিকল্প চ্যানেল হিসেবে সুন্দরবনের শ্যালা নদী দিয়ে নৌযান চলাচলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ে যায়। কিন্তু এ নিয়ে পরিবেশবিদদের টুঁ শব্দটি করতেও কোনো দিন শুনলাম না।’ তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনের ভেতরের সমস্যা রেখে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রামপাল প্রকল্প নিয়ে তাঁরা কেঁদে মরছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি এবং পরবর্তী শাসনামলে চ্যানেলের ২৩৪টি প্রবেশমুখকে ইজারা দিয়ে সেখানে চিংড়ি চাষের প্রকল্প গড়ে তুলে পুরো চ্যানেলটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আমাদের সুন্দরবনের শ্যালা নদী দিয়ে জাহাজ চলাচল করত, সেটা কিন্তু ডলফিনের একটা জায়গা। ওই নদীতেই কিন্তু আমাদের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার পানি খেতে আসে। ওই জায়গাটায় বন্য প্রাণীর একটি অভয়াশ্রম ছিল।’ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, এই চ্যানেলটি ড্রেজিং করে চালু রাখার পদক্ষেপ তারা নেয়নি; উল্টো অন্য কাজে ব্যবহার করে এই পথ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল। ফলে প্রায় ৮৪ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ পাড়ি দিয়ে নৌযানগুলোকে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে চলাচল করতে হতো। এটা সুন্দরবনের জন্যওÿক্ষতিকর।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করার জন্য আমাদের পরিবেশবিদেরা কেঁদে মরেন, কিন্তু এই ঘষিয়াখালী যে বন্ধ করে দেওয়া হলো, এর সঙ্গে ২৩৪টি সংযোগ খালের মুখ বন্ধ করে যে চিংড়ি চাষ করা হলো; চিংড়ি চাষ করতে গিয়ে অনেক গাছপালাও সেখানে কেটে চিংড়ির ঘের করা হয়েছে—এটা নিয়ে কিন্তু আমাদের পরিবেশবিদদের কোনো টুঁ শব্দ করতে কোনো দিন শুনিনি বা সুন্দরবনের এসব নিয়ে তাঁদের দুশ্চিন্তা করতেও কোনো দিন দেখিনি। অথচ এটা ছিল একেবারে সুন্দরবনের ভেতরের ঘটনা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই প্রতিবছর এখানে ড্রেজার উপস্থিত থাকবে। যখন থেকে শীত শুরু হবে, তখন থেকেই এই ড্রেজারগুলো নিচে চলে যাবে এবং মাটি কেটে কেটে ওপরে আনবে। প্রতিবছর প্রয়োজনীয় ড্রেজিং করে এই চ্যানেলের নাব্যতা রক্ষা করে চ্যানেলটিকে যেন উন্মুক্ত রাখা যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে। তাহলে আমাদের এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সবকিছু আরও গতিশীল হবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, গণমাধ্যম উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. আবুল কালাম আজাদ ভিডিও কনফারেন্স পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠানে মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলটির ওপর নির্মিত একটি ভিডিও চিত্রও প্রদর্শন করা হয়।