নিজস্ব প্রতিবেদক : নারী কৃষকদের উপার্জন এবং অর্থনীতিতে তাদের অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। অথচ গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারীরা ৫৩ শতাংশ অবদান রাখছে, পুরুষের অবদান ৪৭ শতাংশ।বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে ‘কৃষিতে নারীর অবদানের মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি প্রদান, ভূমিতে নারীর সমঅধিকার এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা হোক’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) ও নারী মৈত্রী যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০০৫-০৬ এর শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশের ১ কোটি ২০ লাখ নারী শ্রমিকের প্রায় ৭৭ শতাংশই গ্রামীণ নারী। কৃষিকাজ, পশুপালন, হাঁস-মুরগি পালন, মাছ চাষ ইত্যাদি কৃষিসংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত তারা। গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ বাড়তি শ্রমশক্তি যুক্ত হয়েছে। এর প্রায় ৫০ লাখই নারী শ্রমিক। রাষ্ট্রীয় প্রণোদনার অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে ১ কোটি ৩৯ লাখ কৃষকের মাঝে কার্ড বিতরণ করা হলেও নারী কৃষকদের ভাগ্যে তা জোটেনি।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, কৃষিতে নারীর অবদানকে অবৈতনিক পারিবারিক শ্রম হিসেবে গণ্য করা হয়। যদিও নারীরা খামার ও পরিবারের উৎপাদনের জন্য দ্বিমুখী চাপ সহ্য করেন।
বিএনপিএসের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহিন আকতার। আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) ফেলো ড. এম আসাদুজ্জামান, বিআইডিএসের প্রাক্তন জ্যেষ্ঠ ফেলো ড. প্রতিমা পাল, অক্সফামের জ্যেষ্ঠ নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা মেহবুবা ইয়াসমীন।
অনুষ্ঠানে ড. এম. আসাদুজ্জামান বলেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কৃষি উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত বিভিন্ন কাজে ৬৮ শতাংশ নারী শ্রমশক্তি জড়িত থাকলেও নারী কৃষিশ্রমিকের প্রতি মজুরিবৈষম্য এখনো অব্যাহত। ভূমিতেও নারীর সমঅধিকার নেই। বাজারে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রেও নারীদের প্রতিবন্ধকতা আছে।
রোকেয়া কবীর বলেন, বিদ্যমান সমাজকাঠামো, প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কৃষিতে নারীর অবদানকে অবহেলা করার সাধারণ প্রবণতা থেকেই কৃষিতে নারীর অবদান স্বীকৃতি পাচ্ছে না।
অনুষ্ঠানে সংগঠনের পক্ষ থেকে কয়েক দফা দাবি জানানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে- নারী কৃষকদের স্বীকৃতিসহ তাদের রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা ব্যবস্থার আওতায় আনা, পারিবারিক কৃষি কার্ড প্রবর্তন, সর্বজনীন উত্তরাধিকার আইন প্রণয়ন, প্রযুক্তিনির্ভর উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি করাসহ কৃষি সম্প্রসারণ সেবা নারীর কাছে পৌঁছে দেওয়া, বাজারে নারীর প্রবেশগম্যতা বাড়াতে বাজারের নির্দিষ্ট স্থান আলাদাভাবে নারী কৃষকদের জন্য সংরক্ষিত রাখা।