নিউজ ডেস্ক : স্টার জলসা, জি বাংলাসহ কলকাতার টিভি চ্যানেলগুলোতে সংসারের ঝগড়াঝাঁটি ও পুরাণিক কাহিনী নিয়ে ধারাবাহিক সিরিয়াল প্রচার হচ্ছে। ওই সব সিরিয়ালে আসক্ত হয়ে পড়ছেন দেশের গ্রামাঞ্চলের নারী ও বধূরা। পরিবারের কাজকর্ম ফেলে মগ্ন থাকছেন ওই সব সিরিয়ালে। এতে ঘটছে নানা অঘটন। ঘটছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। পরিবারের সদস্যরা স্টার জলসা দেখায় মগ্ন থাকার সময়ে দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। সিরিয়াল দেখতে বারণ করায় আত্মহত্যা করেছে এক তরুণী। সিরিয়াল দেখা নিয়ে দু’দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত হয়েছে শতাধিক। এমন কি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদের ঘটনাও ঘটছে এই সিরিয়াল নিয়ে। পরিবারে বিরাজ করছে অশান্তি।
সবচেয়ে নির্মম ঘটনাটি ঘটে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে। গত শনিবার সকাল ৯টায় উপজেলার বাদুড়িয়া গ্রামের সবুর মোল্লার পরিবারের সবাই একত্রে দেখছিলেন স্টার জলসার সিরিয়াল কিরণমালা। এদিকে সবুর মোল্লার ছেলে আসাদুর রহমান (৬) ও তার চাচাতো বোন মনিরা খাতুন (৪) খেলা করছিলেন বাড়ির পুকুরপাড়ে। একপর্যায়ে সবার অগোচরে শিশু দুটি পুকুরে পড়ে যায়। যখন সিরিয়াল শেষ হয় ততক্ষণে না ফেরার দেশে চলে যায় অবুঝ শিশু দুটি। পরিবারের সদস্যরা দেখেন পুকুরের পানিতে ভাসছে দুটি নিথর দেহ। পরে পুকুর থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়। দুই সন্তানকে হারিয়ে শোকের ছায়া নেমে আসে পুরো বাড়িতে। ওদিকে ভারতীয় সিরিয়াল দেখতে গিয়ে আরেক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে কুষ্টিয়ার খোকসায়। গত শুক্রবার রাত ৮টায় উপজেলার চকহরিপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের স্ত্রী শোকেলা খাতুন বাড়ির পাশের দোকানে দলবেঁধে স্টার জলসার সিরিয়াল কিরণমালা দেখতে যান।
দুই শিশু কন্যাকে ঘরে ঘুম পাড়িয়ে রেখে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে দেন তিনি। ওদিকে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন ধরে যায় ঘরে। মুহূর্তেই আগুনের শিখা ছড়িয়ে পড়ে পুরো ঘরে। আগুনের ভেতর থেকে বড় মেয়ে সায়মা (১০) ঘরের জানালা দিয়ে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়। কিন্তু বেরিয়ে আসতে পারেনি ছোট মেয়ে ঋতু (৭)। পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায় কচি শিশুটি। খবর পেয়ে মা এসে দেখেন সব শেষ। প্রতিবেশীরা গুরুতর দগ্ধ সায়মাকে উদ্ধার করে খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক। এদিকে কিরণমালা দেখা নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে হবিগঞ্জ সদরের ধল গ্রামের দুই গ্রুপ। গত বুধবার রাতে ধল বাজারে একটি হোটেলে কিরণমালা সিরিয়াল দেখা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় ওই গ্রামের সানু মিয়ার কন্যা রেবা ও একই গ্রামের আকবর মিয়ার কন্যা শেফালীর মধ্যে। এই খবর পেয়ে দুই পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।
একপর্যায়ে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় হোটেল মালিক কামরুলসহ পাঁচ জন আহত হন। পরে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। কিন্তু ওই ঘটনার জের ধরে পরদিন সকালে বাজারের পাশে একটি মাঠে দেশে তৈরি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষের লোকজন। এসময় ভাঙচুর করা হয় বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও যানবাহন। এতে কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায় হবিগঞ্জ-লাখাই সড়কের যান চলাচল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ফের সংঘর্ষ এড়াতে ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয় পুলিশ। রক্তক্ষয়ী ওই সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয় শতাধিক। গুরুতর আহত ১০ জনকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাকিদের হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এর আগে গত বছরের ২৭শে আগস্ট নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বোড়াবাড়ি এলাকায় চিত্তরঞ্জন সাহার দুই কন্যার মধ্যে ঝগড়া হয় স্টার জলসার সিরিয়াল কিরণমালা দেখা নিয়ে।
এক পর্যায়ে বড় বোন সঞ্জিতা সাহা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। সঞ্জিতা নীলফামারীর সরকারি কলেজের অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। জানা গেছে, ভারতীয় টিভি চ্যানেল স্টার জলসায় প্রতি সোম থেকে রোববার রাত ৮টায় কিরণমালা সিরিয়ালটি প্রচারিত হয়। পরদিন সকালে সেটি পুনঃপ্রচার করা হয়। ঠাকুর মা’র ঝুলি থেকে নেয়া সিরিয়ালটির কাহিনী মূলত ‘কিরণমালা’ চরিত্রটিকে কেন্দ্র করে। জন্মের পর থেকেই রাক্ষসী রানী কটকটির সঙ্গে যুদ্ধ করে কিরণমালা। সে সব যুদ্ধেই কটকটিকে পরাজিত করে শুভ শক্তির জয় করে। একইসঙ্গে পরাজিত করে অশুভ শক্তিকে। সূত্র: মানবজমিন