নিজস্ব প্রতিবেদক : অক্ষত থাকছে বিএনপি-জামায়াত জোটজাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া গড়তে বিএনপি সমমনা বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে জামায়াত ইস্যুতে দলটির অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বান জানানো হলেও আপাতত সেদিকে যাচ্ছেন না খালেদা জিয়া। ২০ দলীয় জোটকে অক্ষত রেখেই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় ঐক্য গড়তে আগ্রহী তিনি। ইতোমধ্যে তার দলের সমর্থক-বুদ্ধিজীবীদের মধ্য থেকে জামায়াত নিয়ে আপত্তি জানালেও সেদিকে নজর দিচ্ছেন না বিএনপি প্রধান। বরং জোটের বৈঠকে শরিক নেতারা তাকে জোট অক্ষত রেখে ঐক্য প্রয়াসী হতে পরামর্শ দিয়েছেন রবিবার রাতে অনুষ্ঠিত ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক শরিক দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানান।
সূত্রের দাবি, বৈঠকে মির্জা ফখরুল জাতীয় ঐক্য নিয়ে কথা বলেন। তিনি এই ব্যাপারে খালেদা জিয়াই সব সিদ্ধান্তের কর্তা বলে জানান। তার ভাষ্য ছিল, ম্যাডাম রাষ্ট্রের একজন সাবেক অভিভাবক। প্রধান রাজনৈতিক নেতা। তিনি কাকে নিয়ে বৈঠক করবেন, সেটি একান্তই তার বিষয়। জোটের সঙ্গে নীতিগতভাবে এর কোনও সম্পর্ক নেই। জোট জোটের মতই থাকবে। এসময় অন্যান্য শরিক নেতারাও জোট অক্ষত রাখার পরামর্শ দেন।
ধারণা করা হচ্ছিল, আজকের বৈঠকে জামায়াত যাবে কি-না। এ নিয়েও বিষয়টি পরিষ্কার হল, জামায়াত-বিএনপি সম্পর্ক এখনই কোনও ভাঙনের দিকে যাচ্ছে না। যদিও বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ একাধিক বিশিষ্টজন জামায়াত বিষয়ে বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বান জানান। সম্প্রতি কাদের সিদ্দিকীও খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পরামর্শ দিয়েছেন।
শরিক একটি দলের মহাসচিব বলেন, আমরা খালেদা জিয়াকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে পরামর্শ দিয়েছি।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন চেয়ারম্যান বলেন, সম্প্রতি খালেদা জিয়ার সঙ্গে কাদের সিদ্দিকীর বৈঠকের পর যে আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে যেন ভুল বুঝাবুঝি না হয় সেটাই ছিল বৈঠকের মূল এজেন্ডা।
এটি আনুষ্ঠানিকভাবে না বললেও আলোচনা সেদিকেই ছিল বলে জানান এই নেতা। মির্জা ফখরুল বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন।
জোটের একটি দলের মহাসচিব বলেন, জামায়াতকে বিএনপির পক্ষে ছাড়া সম্ভব নয়। ভোটের হিসাবে জোট চলে। বাকি সব মিলিয়ে এদের সমান ভোট দিতে পারবে না। ফলে, জাতীয় ঐক্য প্রতিস্থাপিত হলেও ভোটের হিসাবে অন্য অংক থাকবে বিএনপির।
সূত্র জানায়, জোটের বৈঠকে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, ডা. জাফরুল্লাহর সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এ নিয়ে কোনও অবস্থান ব্যক্ত করতে নারাজ খালেদা জিয়া।
বৈঠক সূত্র জানায়, জামায়াতের প্রতিনিধি মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, জামায়াত গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে রাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছে, সেই বাংলাদেশকে রক্ষা করা ঈমানী দায়িত্ব। বৈঠকে নিজের দলকে জঙ্গিবাদের চরম বিরোধী বলে দাবি করেন তিনি। জাতীয়তাবাদ, ইসলামী মূল্যবোধ ও গণতন্ত্রের জন্য বিএনপির সঙ্গে জামায়াত আছে বলে জানান তিনি।
কয়েকজনের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে খালেদা জিয়াও বৈঠকে বলেন, তাদের নিয়ে তো আওয়ামী লীগ ঐক্য করেছিল।
বৈঠকের বিষয়ে ইসলামী ঐক্যজোট একাংশের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুর রকিব জানান, সব পরিস্থিতি নিয়েই পর্যালোচনা হয়েছে। ম্যাডামকে আমরা সংবাদ সম্মেলন করার পরামর্শ দিয়েছি। তিনি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন। এটি উনার হজে যাওয়ার আগেই অনুষ্ঠিত হতে পারে। জোটের এক শরিক দলের নেতা বলেন, বৈঠকে শরিক দলগুলোকে সংগঠিত হতে বলা হয়েছে। জঙ্গিবাদ ও গণতন্ত্র বিষয়ে কর্মসূচির পরামর্শও উঠে এসেছে বৈঠকে।