‘আনপ্রেডিক্টেবল’ পাকিস্তান বনাম ‘প্রত্যয়ী’ বাংলাদেশ
স্পোর্টস ডেস্ক: ক্রিকেটে পাকিস্তান বরাবরই ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ দল। হারা ম্যাচ জিতে যাওয়া কিংবা নিশ্চিত জেতা ম্যাচ হেরে যাওয়ার বহু উদাহরণ আছে পাকিসস্তানের। সম্প্রতি বাংলাদেশও একই তকমা পেয়ে আসছে। ফলে এশিয়া কাপের সুপার ফোরের শেষ ম্যাচটিকে বলা হচ্ছে দুই ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ দলের লড়াই। তবে আফগানদের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি যেভাবে জিতেছে, তাতে বেশ প্রত্যয়ী বলেই মনে হচ্ছে টাইগারদের।
এশিয়া কাপের ৩৪ বছরের ইতিহাসে ১৩টি আসরের ১২টিতেই অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। এই দীর্ঘ সময়ে ২০১২ ও ২০১৬ সালের আসরে রানার্স আপ হওয়া টাইগারদের সেরা অর্জন। ২০১২ সালে এই পাকিস্তানের বিপক্ষেই ফাইনালে মাত্র ২ রানের পরাজয় বরণ করে বাংলাদেশ। সেবারই প্রথম এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠার স্বাদ পেয়েছিলেন সাকিবরা। পাকিস্তানের দেওয়া ২৩৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করে ২৩৪ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস।
২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে খেলা হয় এশিয়া কাপের সব ম্যাচ। সেবারও ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে হেরে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় বাংলাদেশের। তবে এবার এশিয়া কাপ আবারও ওয়ানডে ফরম্যাটে ফিরেছে। আর সাদা বলে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ফর্ম বেশ আশা জাগানিয়া।
বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠেয় এশিয়া কাপের সুপার ফোরের শেষ ম্যাচটি এখন অঘোষিত সেমিফাইনালে পরিণত হয়েছে। দুই ম্যাচ জিতে আগেই ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গেছে ভারতের। অন্যদিকে দুই ম্যাচ হেরে বিদায় নিয়েছে আফগানিস্তান। ফলে ১ ম্যাচ করে জেতা বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচের জয়ী দলই হবে ২৮ সেপ্টেম্বরের ফাইনালিস্ট।
সর্বশেষ এই পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের মাটিতে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সেবার ৩-০ ব্যবধানে জিতেছিল টাইগাররা। তবে দুই দলেই তারপর এসেছে বেশকিছু পরিবর্তন। পাকিস্তান সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেছে। আর বাংলাদেশ সবধরনের ক্রিকেটেই অনেকটা এগিয়েছে।
তবে চলতি এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দুই দলই সুপার ফোরে আফগানিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নামবে। আবার দুই দলই ভারতের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছে।
অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, যে বোলিং পাকিস্তানের সবচেয়ে শক্তির জায়গা বলে মনে করা হয়, সেই বোলিংকেই এখন নখদন্তহীন মনে হচ্ছে। আর তাদের ফিল্ডিং নিয়েও বিস্তর সমালোচনা চলছে।
ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিখ্যাত বোলিং লাইনআপ যেভাবে উইকেট পাওয়ার জন্য লড়াই করেছে তা অনেকের কাছেই বিস্ময়কর। আফগানদের বিপক্ষেও তাদের ভুগতে দেখা গেছে। আর পাকিস্তানের ফিল্ডারদের দুরবস্থা ছিল দেখার মতো।
পাকিস্তানের সেরা বোলার মোহাম্মদ আমির চলতি এশিয়া কাপে একটাও উইকেট নিতে পারেন নি। ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের তৃতীয় সেরা বোলার হাসান আলীও ৪ ম্যাচে মাত্র ৩ উইকেট নিতে সক্ষম হয়েছেন। বোলিং গড় ৫১-এর বেশি!
সমস্যা বাংলাদশ দলেও আছে। তামিম না থাকা যে কত বড় সমস্যা সেটা বাকি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ধুঁকতে দেখেই বুঝা যায়। তার অবর্তমানে ওপেনিং জুটি একেবারেই ব্যর্থ। সাকিব আল হাসানের মতো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারও ব্যাট হাতে রান পেতে ব্যর্থ।
বাংলাদেশের হয়ে ব্যাট হাতে যা কিছু করার তা সিনিয়র ক্রিকেটার মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ আর দলে ফেরা ইমরুল সবচেয়ে বড় ভরসা। জুনিয়ররা যদি ব্যর্থ হতেই থাকেন তাহলে এই সিনিয়ররা প্রতি ম্যাচেই রানের চাকা টেনে নেবেন এমন আশা কি দুরাশা নয়?
বল হাতে আগের ম্যাচেই বীরত্ব দেখানো মোস্তাফিজ আগের ম্যাচেই পেশির টান নিয়ে বল করেছেন। কতটা ফিট তিনি নিশ্চিত নয়। ওদিকে রুবেল হোসেনকে আগের ম্যাচে রাখাই হয়নি।
অধিনায়ক মাশরাফি বল হাতে চলতি এশিয়া কাপের সবচেয়ে বেশি ইকোনমি রেটের মালিক। ৪ ম্যাচে ২৯ ওভার বল করে ১৮৪ রান খরচ করেছেন এই পেসার। স্পিনার মিরাজ আর সাকিবই তাই বড় ভরসার জায়গা।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভরসা হতে পারেন আগের ম্যাচেই বল হাতে ম্যাচ জেতানো মোস্তাফিজ। শেষ পাঁচ ওভারে তার ইকোনমি রেট ছয়ের নিচে, যা ওয়ানডে ক্রিকেটে বর্তমানে সেরা।
অন্যদিকে পাকিস্তানের শক্তির জায়গা হতে পারেন ব্যাট হাতে দারুণ ফর্মে থাকা শোয়েব মালিক। ৪ ম্যাচে তার রান ১৮১। তবে সান্ত্বনা এটাই, বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৩ ইনিংসে মাত্র একটি ফিফটি আছে তার ঝুলিতে।
বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে চিন্তার বিষয় ওপেনিং জুটি। লিটন দাস ৪১ রান করে কিছুটা মান রক্ষা করলেও তার ওপেনিং পার্টনার নাজমুল হাসান শান্ত ৩ ম্যাচে মাত্র ২০ রান সংগ্রহ করে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শুরুটা করেছেন বেশ বাজে। তার বদলে সৌম্য সরকারকে পরের ম্যাচে দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
ইমরুল কায়েস ফেরাতে বেশ সুবিধা হয়েছে বাংলাদেশের। আগের ম্যাচেই তীব্র গরম সহ্য করে ৭২ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলে বাংলাদেশের জয়ের জন্য সহায়ক এক ইনিংস খেলেছেন। পরের ম্যাচে হয়তো তাকে ৫ থেকে ব্যাটিং অর্ডারের তিনে তুলে আনা হতে পারে।
‘ডু অর ডাই ম্যাচ’ আর প্রতিপক্ষ পাকিস্তান বলেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ লড়াইয়ের সুযোগ থাকছে। কারণ, এই ম্যাচই হতে পারে তাদের শেষ ম্যাচ। অন্যদিকে পাকিস্তান ফর্মে নেই। আর শেষ ম্যাচে আফগানদের হারানোর সুখস্মৃতি তো আছেই।
পাকিস্তানকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিধ্বংসী ওপেনার ক্রিস গেইলের সঙ্গে তুলনা করেছেন বাংলাদেশের পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। পাকিস্তানের ক্রিকেট চরিত্র তিনি ঠিকই অনুভব করতে পেরেছেন। দলটি সবসময়ই ‘আনপ্রেডিক্টেবল’। তাই এমন দলের বিপক্ষে মুশফিক-সাকিবদের প্রত্যয়ী হয়েই লড়াই করতে হবে।
বাংলাদেশের একাদশ (সম্ভাব্য): লিটন দাস, নাজমুল হাসান শান্ত, মোহাম্মদ মিথুন, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), ইমরুল কায়েস, মাহমুদউল্লাহ, মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), মেহেদি হাসান মিরাজ, নাজমুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান।
পাকিস্তানের একাদশ (সম্ভাব্য): ইমাম-উল-হক, ফখর জামান, বাবর আজম, আসিফ আলী, শাদাব খান, মোহাম্মদ নওয়াজ, হাসান আলী, উসমান খান, শাহেন শাহ আফ্রিদি।