আজ সমাবেশ, কী বার্তা দেবে বিএনপি?
নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ রবিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিএনপির ডাকা সমাবেশ। এদিন দুপুর ১২ টায় সমাবেশ শুরু হবে সম্মিলিত গণসংগীতের মধ্য দিয়ে। ইতোমধ্যে সমাবেশের মঞ্চ প্রস্তুতসহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া শর্তের আলোকে সব ধরনের আয়োজন শেষ করে এনেছে বিএনপি। এই সমাবেশকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, ইতোমধ্যেই বিএনপি খালেদা জিয়ার কারামুক্তি, দশম সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েই এসেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ থেকে নতুন কী বার্তা দেবে দলটি?
এদিকে, সমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ দেখা গেছে। রাজধানীর আশেপাশের এলাকা থেকেও সমাবেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা যোগ দেবেন। দায়িত্বশীল নেতাদের অভিযোগ, সমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা অভিযোগ করেছেন, বিগত দুই সপ্তাহ ধরে তারা বাসায় বসবাস করতে পারছেন না। বিএনপি নেতারা বলছেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে যানবাহন চলাচলে বাধা দেবে সরকার। একারণে রবিবার সকাল থেকে গণপরিবহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার আশঙ্কা করছেন তারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানান, রবিবারের সমাবেশ থেকে নীতি-নির্ধারণী বক্তব্য আসার কথা প্রচারিত হলেও নতুন কোনও চমক থাকছে না। বরং গত একবছর ধরেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার দাবিতে যে বক্তব্যগুলো দেওয়া হয়েছে, সমাবেশ থেকে তা-ই পুনর্ব্যক্ত করা হবে। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সমাবেশে অংশ নেবেন। শরিক হবেন কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারাও। বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও সমাবেশে বিপুল উপস্থিতি নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ও শনিবার সমাবেশের অনুমতি না দিয়ে দুই দিন পিছিয়ে রবিবার জনসভার অনুমতি দেওয়ার পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য দেখছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, সমাবেশ যেন সফল না হয়, সেজন্য শেষ সময়ে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই সমাবেশকে ঘিরে সারাদেশে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এসব সমস্যার মধ্যে জনসভাকে সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কেউ-কেউ বলছেন, জনসভায় দলের নীতি-নির্ধারণী বার্তা দেওয়া হবে। তুলে ধরা হবে দলের আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা। একইসঙ্গে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরেপক্ষ করতে সরকারের উদ্দেশে সুনির্দিষ্ট দাবি পেশ করা হবে। পাশাপাশি দেশের রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের জন্য বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি নেতারা তাদের বক্তব্যে পরিষ্কার করবেন। বিশেষ করে, গত কয়েকমাসে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলতে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা যেভাবে ভবিষ্যতের পরিবর্তন নিয়ে কথা বলছেন, তার বিষয়ে দলের অবস্থান ও পরিকল্পনা তুলে ধরা হবে।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করার জন্য যেসব কথা এতদিন বলে এসেছি। সেগুলো পূর্ণাঙ্গ লিখিত আকারে তুলে ধরা হবে। জাতীয় ঐক্যের নেতারাও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। এখন আমরাও আমাদের দাবিগুলো জাতির সামনে তুলে ধরবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে জনগণ যদি বিএনপিকে নির্বাচিত করে এবং বিএনপির যদি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যায়, তাহলে দেশের জন্য কী করবো, সেই লক্ষ্যগুলো জনসভায় তুলে ধরা হবে। ইতোমধ্যে সেই বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা হয়েছে।’
শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শনে গিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামীকালের জনসভা অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও নজরদারির মধ্যে দিয়ে সফল করা হবে। আগামী নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক জোট, বাম জোট, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার নেতারা তাদের অবস্থান জানিয়েছেন। এই জনসভা থেকে আমাদের অবস্থান সুস্পষ্ট করা হবে। জনগণকে জানানো হবে বিএনপির পরিকল্পনা।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘জনসভা থেকে দলের শীর্ষ নেতারা আগামী দিনের কর্মসূচির বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেবেন। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক কী হবে, তার দিক-নির্দেশনাও এ জনসভায় দলের শীর্ষ নেতারা দেবেন।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অভিযোগ করেছেন, ‘স্বভাবসুলভভাবে সরকার বাস, ট্রেন, লঞ্চ বন্ধ করতে পারে। তারপরও আমরা এগুলো অতিক্রম করেই জনসভা সফল করবো।’
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ‘আগামীকাল দুপুর ১২ টা গণসংগীতের মাধ্যমে জনসভা শুরু হবে। এরপর নামাজের বিরতি দিয়ে দুপুর ২ টা থেকে নেতাদের বক্তব্যের মাধ্যমে আনুষ্ঠিকভাবে জনসভা শুরু হবে।’
সরেজমিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা গেছে, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের পাশে উত্তরমুখী করে বিএনপির জনসভার মঞ্চ তৈরির কাজ করছে লাভলী ডেকোরেটর।
প্রতিষ্ঠানের কর্মী মো. ইদ্রিস বলেন, ‘২৪/৫০ ফিটের মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে। আশা করি, রাতের মধ্যে সব কাজ শেষ হবে। এই মঞ্চে সাধারণভাবে ৩০ থেকে ৪০ জনের মতো লোক বসতে পারবেন।’ চাইলে আরও বেশিও বসতে পারবেন বলেও তিনি জানান। বাংলা ট্রিবিউন