স্ত্রীর পরকিয়া জেনে তাকে খুনের পর যেভাবে গল্প ফেঁদেছে স্বামী …
পুলিশকে তিনি বলেছিলেন, দুষ্কৃতিকারীরা এসে তার স্ত্রীর গলার হার এবং নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। স্ত্রী বাধা দেওয়ায় তারা গুলো করে তাকে খুন করে।
কিন্তু পুলিশের সেসব কথায় সন্দেহ হয়। একপর্যায়ে ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে আসল তথ্য। জানা যায়, বহু দিন ধরে ওই ব্যক্তি নিজের স্ত্রীকে খুনের পরিকল্পনা করছিলেন। সেজন্য এক সপ্তাহ ঘুরে জায়গা নির্বাচন, তিন দিন ধরে ‘রিহার্সেল’ করা, ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র থেকে হাতের ছাপ মোছার মতো কাজের সব পন্থায় রপ্ত করেছিলেন।
যদিও শেষ পর্যন্ত আর রক্ষা হলো না। ভারতের ব্যারাকপুরের বাসিন্দা রাজশ্রী চট্টোপাধ্যায়কে (৩৩) হত্যার অভিযোগে তার স্বামী সুখবিন্দর সিংহকে শুক্রবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, এক যুবকের সঙ্গে রাজশ্রীর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কথা জেনে ফেলেছিল সুখবিন্দর। খুনের সেটা একটা কারণ। পাশাপাশি, তাদের ফ্ল্যাট বিক্রি করে সেই টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও ছিল তার। ব্যারাকপুরের ডিসি (জোন ১) কে কান্নন বলেন, অভিযুক্ত কার কাছ থেকে অস্ত্র কিনেছিল, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ বলছে, ব্যারাকপুরে ১৪ নম্বর রেল গেটের কাছে থাকতেন রাজশ্রীরা। সুখবিন্দররা আদতে পাঞ্জাবের বাসিন্দা। কর্মসূত্রে তার পরিবার দীর্ঘদিন ব্যারাকপুরে ছিল। বছর পাঁচেক আগে রাজশ্রীর সঙ্গে বিয়ে হয় সুখবিন্দরের। পরিবারের বাকি সদস্যরা পাঞ্জাবে ফিরে গেলেও রয়ে যান সুখবিন্দর। তিনি তেমন কোনো কাজ করতেন না। থাকতেন ভাড়া বাসায়।
রাজশ্রীরা দুই বোন। তার বোন দেবশ্রী ভট্টাচার্য থাকেন মধ্যমগ্রামে। তদন্তকারীরা বলছেন, দেবশ্রী নিয়মিত অর্থ সাহায্য করতেন বোনকে। বছর দুয়েক আগে রাজশ্রীর বাবার একটি সম্পত্তি বিক্রি হয়। সেখান থেকে ৩৫ লাখ টাকা পান রাজশ্রীরা। তার মধ্যে ২২ লাখ টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কেনেন তিনি ও সুখবিন্দর। সম্প্রতি গাড়ি কিনে তা একটি অ্যাপ-ক্যাব সংস্থায় ভাড়া খাটাতে শুরু করেন অভিযুক্ত ব্যক্তি। গাড়ি চালাতেন নিজেই।
পুলিশ জানিয়েছে, দু’মাস আগে গাড়ি বিক্রি করে দেন সুখবিন্দর। কিন্তু সেই টাকায় কী করেছেন, তার হিসেব রাজশ্রীকে দেননি। তা নিয়েই ওই দম্পতির মধ্যে অশান্তির শুরু। কিছুদিন যাবৎ ফ্ল্যাট বিক্রির জন্যও রাজশ্রীকে চাপ দিচ্ছিলেন সুখবিন্দর। জানিয়েছিলেন, ব্যবসার জন্য তার টাকার দরকার। কিন্তু রাজশ্রী রাজি হননি।
এরই মধ্যে একটি সম্পর্কে জড়ান ওই তরুণী। ফোন এবং হোয়াটসঅ্যাপে ওই যুবকের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখতেন। ওই যুবক রাজশ্রীকে জানিয়েছিলেন, সুখবিন্দরের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেলে তাকে বিয়ে করবেন তিনি। তদন্তকারীদের ধারণা, গোটা বিষয়টি জেনে গিয়েছিলেন সুখবিন্দর।
পুলিশের দাবি, জেরায় অভিযুক্ত জানিয়েছেন, তিনি প্রথমে একটি আগ্নেয়াস্ত্র কেনেন। কোথায় খুন করবেন ঠিক করতে বেশ কয়েকটি জায়গায় ঘোরেন। শেষ পর্যন্ত পলতার বেঙ্গল এনামেলের বন্ধ কারখানার একটি নির্জন জায়গা তার পছন্দ হয়। কিন্তু রাজশ্রীকে সেখানে আনবেন কী করে? তখনই সুখবিন্দর ঠিক করেন, মোটরবাইক কেনার জন্য স্ত্রীকে পলতায় আনবেন।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ তিনি রাজশ্রীকে নিয়ে ট্রেনে পলতায় আসেন। রাতে মোটরবাইকের অধিকাংশ শো-রুম তখন বন্ধ। ওই দম্পতি হেঁটে ফিরছিলেন। সে সময়েই আগ্নেয়াস্ত্র বের করে রাজশ্রীকে গুলি করেন সুখবিন্দর। হাতের ছাপ মুছে অস্ত্রটি ঘটনাস্থলেই ফেলে দেন। পুলিশ আসার পর তিনি ছিনতাইয়ের গল্প ফাঁদেন।
ব্যারাকপুর পেরিয়ে কেন পলতায় রাতের বেলা বাইক কিনতে এসেছিল অভিযুক্ত, সেটাই প্রথমে ভাবিয়েছিল তদন্তকারীদের। তাছাড়া, পেশাদার দুষ্কৃতিকারীরা খুন করে আগ্নেয়াস্ত্র যে ঘটনাস্থলে ফেলে যাবে না, তা নিয়ে একরকম নিশ্চিত ছিলেন তারা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সুখবিন্দরকে রাতেই আটক করে পুলিশ। জেরায় তিনি দোষ স্বীকার করেন।