শুক্রবার, ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ইং ১৩ই আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

যেভাবে আরোহীদের রক্ষা করলেন পাইলট জাকারিয়া

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : ইউএস-বাংলার বিএস-১৪১ বিমানটি ১৭১ জন আরোহী নিয়ে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কক্সবাজার উদ্দেশে উড্ডয়ন করে। কিন্তু ঢাকা থেকে কক্সবাজার গিয়ে ফ্লাইটটির নোজ গিয়ার না নামায় পাইলট সেখানে উড়োজাহাজটি না নামিয়ে চট্টগ্রামে নিয়ে আসেন।

কিন্তু মিনিট-পাঁচেকের মধ্যেই যাত্রীদের থরথর করে বুক কাঁপে। সবাই তখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। ‘বাঁচবো তো? নাকি একটু পরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হবে’-এমনই আশঙ্কায় করেছিলো আরোহীরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাইলট ক্যাপ্টেন জাকারিয়ার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার গুণে দ্বিতীয় জীবন পান ১৭১ জন আরোহী।

এই প্রতিবেদকের কাছে আসা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বিমানটি অবতরণ করে দ্রুত ছুটে যাচ্ছিল। যখন অবতরণ করছিল তখন এটি কাঁপছিল।

কয়েকজন আরোহী জানান, অবতরণের সময় তারা প্রাণের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন।কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাইলট পেরেছেন। দক্ষতার সঙ্গেই বিমানটিকে তিনি অবতরণ করাতে সক্ষম হয়েছেন।

বিমানটির একজন কর্মকর্তা জানান, জরুরি অবতরণ মানেই মহাঝুঁকি, মহাবিপদ। বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা। হাতে সময় ছিলো মাত্র ৩ মিনিট। চাকাবিহীন অবস্থায় রানওয়েতে ছেঁচড়িয়ে চলতে গিয়ে এই সময়ের মধ্যেই যদি উড়োজাহাজ থামানো যায় তবেই রক্ষা। তবে এক্ষেত্রে বিমান বিস্ফোরণের আশঙ্কা থাকে।

কিন্তু ক্যাপ্টেন জাকারিয়ার তখন নিজের জীবনের কথা একটিবারও ভাবেননি। ভেবেছেন বিমান আরোহীদের কীভাবে বাঁচানো যায়।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, এমন মহাঝুঁকি নিয়েই এই প্রথম জরুরি অবতরণ করে ক্যাপ্টেন জাকারিয়া। বিমান সামান্য ক্ষতিগ্রস্থ হলেও ১৭১ জন আরোহীকে নিয়ে নিরাপদে অবতরণ করান তিনি।

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সারওয়ার-ই-জাহান জানান, সামনের চাকা আটকে যাওয়ায় কক্সবাজার নামতে না পেরে জরুরি অবতরণের জন্য চলে আসেন চট্টগ্রামে। খবর পেয়েই দ্রুত প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

রানওয়ের শেষ প্রান্তে পানি-ফোম ছিটিয়ে দেয়া হয় নির্ধারিত জায়গাটিতে, প্রস্তুত রাখা হয় ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও উদ্ধারকারি দল। সঙ্গে প্রস্তুত ছিলো বিমানবাহিনীও।

দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে। পিছনের চাকাগুলোর ওপর ভর করে উড়োজাহাজটি রানওয়েতে নামান পাইলট জাকারিয়া। অনেকক্ষণ চলার পর নির্ধারিত জায়গায় এসে সামনের নোজ রানওয়েতে স্পর্শ করান। ছেঁচড়িয়ে কিছুদূর যাবার পর থেমে যায় উড়োজাহাজটি।

৩ মিনিটের আগেই থামিয়ে ফেলতে সক্ষম হন তিনি। দ্রুত খুলে যায় বিমানের ৬টি জরুরি দরজা। নিরাপদে বেরিয়ে আসে ১৬৪ যাত্রী আর ৭ জন ক্রু। বাংলানিউজ