শুক্রবার, ৫ই অক্টোবর, ২০১৮ ইং ২০শে আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

চিরযৌবন এনে দিতে সক্ষম জবা ফুল!

ডেস্ক রিপোর্ট।।  চিরযৌবন এনে দিতে সক্ষম হলেও মূলত পূঁজা অর্চনায় ছাড়া ভেষজ ও ওষধিগুণে ভরপুর জবা ফুলের অন্যকোনো ব্যবহার তেমন একটা নেই এদেশে। অথচ জবাসহ অন্যান্য ফুলের বিস্তারিত গবেষণা সময়ের গুরুত্বপূর্ণ দাবি হতে পারে।

গন্ধহীন ঔষধি গুনাগুণেপূর্ণ জবা ফুল বমি, অনিয়মিত মাসিকের স্রাব, মাসিক ঋতুর অতিস্রাবে, চোখ উঠা, মাথায় টাক পোকা, হাতের তালুতে চামড়া উঠা ইত্যাদি রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় জবা ফুল শুধু ক্যান্সার প্রতিরোধই নয়, নিয়মিত আহারে বয়স বাড়ার প্রবণতা কমিয়ে মানুষকে চিরযৌবন এনে দিতে পারে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, মূত্রনালীর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর, জ্বর নিয়ন্ত্রণ, চুল পড়া, চুল সাদা হয়ে যাওয়া রোধ করে। শরীরের ব্যথা ৭০ ভাগ পর্যন্ত কমাতে পারে জবা ফুল।

ফেসপ্যাক হিসেবেও কার্যকর এই জবা ফুল। লাল জবার পাপড়ির গুঁড়ো মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি এবং বলিরেখা রোধ করে। শুষ্ক ত্বককে নিরাময় এবং যেকোন ধরনের ফাটাও ভালো করে। খুশকির দূর ও জুতো পালিশের কাজে ব্যবহৃত হয় জবা ফুল। শিশুদের শ্যাম্পু হিসেবে ও আই শ্যাডো হিসেবে ব্যবহার করা হয়। লাল জবার পাপড়ি শরীরের লৌহের ঘাটতি কমে ও সাদা জবার পাপড়ি বিষন্নতা দূর হয়। জবা ফুলের রস থেকে তৈরী জবাকুসুম তেলে চুল পড়া বন্ধ এবং চুল কালো হয়।কবিরাজি মতে জবাফুলের রস সেবনে, স্ত্রীলোকের ঋতুস্রাব দোষ নিরাময় হয়।এর ফুল ভেজে খেলে অনিয়মিত এবং অল্প ঋতুস্রাবজনীত অসুবিধা দূর হয়। এর কুঁড়ি পুরুষের ধাতুদৌর্বল্য দূর করে শারীরিক শক্তি বাড়িয়ে তোলে। মিলন হয় দীর্ঘস্থায়ী। এই ফুলের ক্বাথ শরবতের সঙ্গে পান করলে জ্বর ও কাসির উপশম হয়।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যান তত্ত গবেষণা কেন্দ্রের ফুল বিভাগের মুখ প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কবিতা আঞ্জু-মান আরা বলেন, পাহাড়ি গুল্ম জাতীয় গাছ এটি। এর আদিনিবাস চীন। পুষ্পধারিগাছ অথবা ঝোপ হিসেবে কদর আছে। জবা ফুল ঠোঙ্গা আকৃতি, পঞ্চমুখি ও থোকা এবং সিঙ্গেল ও ডবল আকারের হয়ে থাকে। লাল, নীল, হলুদ, সাদা ও বাই কালারের জবা ফুল দেখা যায়। দেশি এবং বিদেশি মিলিয়ে আমাদের দেশে ১৪/১৫ রকমের জবা ফুল আছে। সবধরনের মাটিতে হলেও সুনিস্কাশিত হালকা দোয়াস মাটিতে জবা ফুলের গাছ ভাল হয়। শাখা ও গুটি কলমের মাধ্যমে চারা তৈরী করা হয়।

পূঁজা অর্চনা, ল্যারেটরিতে উদ্ভিদ বিদ্যার শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক ক্লাসের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার এবং মেয়েদের মাথার চুল সিল্কি করা ছাড়াও অনেক কাজে লাগে জবা ফুল। এর ওষধিগুণ অনেক বেশি এবং সৌন্দর্যবর্ধক। জবা ফুলের কুুড়ির রস জ্বর নাশক। এছাড়া এই ফুল দুধ, চিনি ও জিরার সঙ্গে মিশিয়ে গণরিয়া চিকিৎসার কাজে লাগানো হয়। সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য রাস্তার ধারে এটি লাগানো যেতে পারে। আমরা জার্মপ্লাজম বা মাতৃগাছ সংরক্ষণ করেছি এবং নতুন জাত সংকরায়ণের চেষ্টা করছি।

উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফারজানা নাসরিন বলেন, আমাদের এখানে জবা ফুলের বানিজ্যিক চাষ হয়না। তবে বাণিজ্যিক চাষের সুযোগ রয়েছে। দরকার জবা ফুলের বিস্তারিত গবেষণা।