পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন হাস্যকর : তসলিমা
বদলে যাওয়ার পথে ওপার বাংলার নাম। এখন থেকে পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলে ‘বাংলা’ রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ভারতের এই রাজ্যের নাম পরিবর্তনের বিলটি গতকাল বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে। এবার পাঠানো হবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। ভারতে কোনো রাজ্যের নাম বদলাতে লোকসভার অনুমোদন দরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সরকার পশ্চিমবঙ্গকে ‘বাংলা’ নামে ডাকতে চান।
তবে এই নাম বদল নিয়ে বুদ্ধিজীবিরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ নামটির সঙ্গে অনেক ইতিহাস জড়িত। তাই এই নাম বদলকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাসিতা বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন। সোশ্যাল সাইট ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন।
তসলিমা লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলে গেল। কী দরকার ছিল নাম বদলাবার? যুক্তি যা দেওয়া হয়েছে, সবই হাস্যকর। সর্ব ভারতীয় সভায় নাকি ওয়েস্ট বেঙ্গলের আদ্যাক্ষরের কারণে ডাক পড়ে শেষে, আর সভার শেষ দিকে কারোর আর বক্তৃতা শোনার আগ্রহ থাকে না, সবাই ঘুমিয়ে পড়ে অথবা বাড়ি চলে যায়। আদ্যাক্ষর ‘এ’ হলেই যদি লাভ হতো, তাহলে অরুণাচল প্রদেশ সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধ রাজ্য হয়ে যেত ভারতবর্ষের। এতই যদি ‘ডব্লু’তে আপত্তি, তবে পশ্চিমবঙ্গের ‘পি’ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা যেত।’
‘পশ্চিমবঙ্গ নামটি অন্যরকম। এই নামের ভেতর লুকিয়ে আছে লক্ষ মানুষের বেদনার ইতিহাস। পশ্চিম আছে, পূর্ব নেই। পূর্ব বংগের নাম থেকে শুরু করে চেহারা চরিত্র সব পালটে গেছে অখন্ড ভারতবর্ষকে যখন ধর্ম এসে ধর্ষণ করেছিল।’
‘পশ্চিমবঙ্গ নামটির সংগে পূর্ববঙ্গের না থাকাটা থেকে যায়। থেকে যায় ঘৃণা আর বিদ্বেষের খুনোখুনিতে মানুষকে লেলিয়ে দেওয়া আর , ধর্মের কাঁটাতার দিয়ে দেশ ভাগ করার রাজনীতি, থেকে যায় মা আর মাটি থেকে মানুষকে উচ্ছেদ করার গল্প, থেকে যায় স্বজন রেখে স্বজনের নিরুদ্দেশ যাত্রা, থেকে যায় আপামর বাঙালির মর্মান্তিক ইতিহাস।’
(নাগরিক মন্তব্য বিভাগে প্রকাশিত লেখা ও মন্তব্যের দায় একান্তই সংশ্লিষ্ট লেখক বা মন্তব্যকারীর, কর্তৃপক্ষ এজন্য কোনোভাবেই দায়ী নন।)