মঙ্গলবারের মধ্যেই সরকারি চাকরিজীবীদের গৃহঋণের প্রজ্ঞাপন
বহু প্রতীক্ষিত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গৃহঋণ সুবিধা পেতে আর বেশি দেরি নয়। আজকালের মধ্যেই এর প্রজ্ঞাপন জারি করবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। ইতিহাসের সবচেয়ে কম সুদ অর্থাৎ মাত্র ৫ শতাংশ ঋণে গৃহঋণ পাবেন তারা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২৪ এপ্রিল সদ্য বিদায়ী অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হয়। সেখানে ‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান-সংক্রান্ত নীতিমালা, ২০১৮’ চূড়ান্ত হয়। পরে গত ৭ জুন সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছর প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তা উপস্থাপন করেন। এরপর ২৮ জুন তা সংসদে পাস হয়। এখন শুধু তা প্রজ্ঞাপনের অপেক্ষায় আছে।
সূত্র জানায়, মঙ্গলবারের মধ্যেই এ বিষয়ক প্রজ্ঞাপন জারি করবে অর্থ বিভাগ। এ ঋণ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এককভাবে নিতে পারবেন। এছাড়া আবাসিক বাড়ি করার জন্য গ্রুপভিত্তিক ঋণও নেয়া যাবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পাঁচ শতাংশ সুদহারে গৃহঋণের নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়। এই নীতিমালার আওতায় জাতীয় বেতন স্কেলে গ্রেড ভেদে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ ও সর্বনিম্ন ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নেয়া যাবে। যার সদুহার ১০ শতাংশ। তবে এ ১০ শতাংশ সুদের ৫ শতাংশ সরকার এবং বাকি ৫ শতাংশ পরিশোধ করবে ঋণগ্রহীতা। ২০ বছর মেয়াদে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
সরকারি কর্মচারীদের গৃহনির্মাণে ঋণের মাধ্যমে অর্থের জোগান দিতে এ নীতিমালা করা হলেও সরকারের আওতাধীন মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, বিভাগ, পরিদপ্তর ও কার্যালয়গুলোতে স্থায়ী পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত বেসামরিক কর্মচারীরাও এ সুবিধা পাবেন। তবে সামরিক, রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি, বিশেষ আইন দ্বারা সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত কর্মচারীরা এ নীতিমালার আওতাভুক্ত হবেন না। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যাংক থেকে এ ধরনের গৃহঋণ সুবিধা পেয়ে থাকেন।
জানা গেছে, কোনো সরকারি চাকরিজীবীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু এবং দুর্নীতি মামলার ক্ষেত্রে চার্জশিট দাখিল হলে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যান্ত এ নীতিমালার আওতায় গৃহঋণের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। পাশাপাশি সরকারি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক, খণ্ডকালীন ও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত কর্মচারী এ নীতিমালার আওতায় আসবেন না।
কে কত পরিমাণ গৃহনির্মাণ ঋণ পাবেন:
নীতিমালা অনুযায়ী, যাদের বেতন স্কেল ৪৩ হাজার বা এর বেশি, তারা প্রত্যেকে ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরে গৃহনির্মাণে ঋণ পাবেন ৭৫ লাখ টাকা। আর জেলা সদরে এর পরিমাণ হবে ৬০ লাখ টাকা ও অন্যান্য এলাকায় ৫০ লাখ টাকা।
অপরদিকে বেতনকাঠামোর নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেড পর্যন্ত, অর্থাৎ যাদের মূল বেতন ২২ হাজার থেকে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা, তারা ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদর এলাকার জন্য ৬৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। জেলা সদরের জন্য ৫৫ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৪৫ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হবে।
যাদের মূল বেতন ১১ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা, তারা ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৫৫ লাখ টাকা ও জেলা সদরের জন্য ৪০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৩০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।
এছাড়া ১৪তম থেকে ১৭তম গ্রেড বা নয় হাজার থেকে ১০ হাজার ২০০ টাকা বেতন স্কেলে ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৪০ লাখ, জেলা সদরের জন্য ৩০ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ২৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।
১৮তম থেকে ২০তম গ্রেড বা ৮ হাজার ২৫০ টাকা থেকে ৮ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত বেতন পান- এমন কর্মচারীরা ঢাকাসহ সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৩০ লাখ টাকা গৃহনির্মাণ ঋণ পাবেন। জেলা সদরের জন্য ২৫ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ২০ লাখ টাকা পাবেন।
সরকারি চাকরিজীবীদের হোম লোন সুবিধা প্রদান বিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব নাজমুস সাকিব বলেন, প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদনের ফলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভাল একটি সুবিধা পাবেন। এতে তাদের মধ্যে কাজের গতি বাড়বে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, এটা সরকারি কর্মকর্তাদের কাজে উৎসাহিত করবে এটা ঠিক। কিন্তু সরকার এ ঋণের সুদে যে ৩ শতাংশ ভর্তুকি দেবে এটা রাষ্ট্রের উপর অতিরিক্ত বোঝা বয়ে আনবে। ফলে ব্যাংকের উপর সরকারের ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।