‘সমীকরণ না মিলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী এখন ইমরান খানকে খুঁজছে’
নওয়াজ শরীফের সঙ্গে সমীকরণ না মিলার কারণে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এখন ইমরান খানকে খুঁজছে বলে মনে করেন গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আফসান চৌধুরী। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, পাকিস্তানে বেসামরিক প্রশাসন বলে কিছু নেই, সব সময় সেনাশাসন আছে। যে দেশে সেনাবাহিনী এত প্রভাবশালী হয় সেখানে বেসরকারি বাহিনী একটা উছিলা মাত্র। সেনাবাহিনীর যার সঙ্গে ঝগড়াটা হচ্ছে, তিনি নওয়াজ শরীফ। সেনাবাহিনীর এখন যে সমীকরণ তার সঙ্গে নওয়াজ শরীফের মিলছে না, সেজন্যই এ ঝামেলাটা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী এখন খুঁজছে ইমরান খানকে। এখানে ইমরান বা নওয়াজ শরীফেরও কিছু করার নেই। সবচেয়ে কম কিছু করতে হয় জনগণকে। জনগণ নির্বাচনে ভোটটা দেয়, এর বাইরে কিছু করে না। পাকিস্তানের রাজনীতি নির্ধারিত হয় সেনাবাহিনী ধারা।
এক প্রশ্নের জবাবে আফসান চৌধুরী বলেন, বিচার, নির্বাহী বিভাগ ও মিডিয়া স্বাধীন না থাকলে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র স্বাধীন থাকতে পারে না বলে যে মন্তব্য করেছেন ইসলামাদের হাইকোর্টের বিচারপতি শওকত আজিজ সিদ্দিকী তা তিনি ক্ষোভ ও দুঃখ থেকে বলেছেন। পাকিস্তানের বিচার বিভাগ কোনোদিনই তেমন স্বাধীন ছিল না। যে জিনিসটা মানুষের বুঝতে অসুবিধা হয়, সামরিক শাসন না থাকলেই সামরিক বাহিনী ক্ষমতায় থাকে না এ কথাটা ঠিক নয়।
তিনি বলেন, পাকিস্তানি মিডিয়া অনেক বেশি দক্ষ। ওখানকার মানবাধিকারকর্মীরা যে পরিমাণ ঝুঁকি নেয় তা কল্পনাও করা যায় না। এবং তাদের নিয়মিত উঠিয়েও নিয়ে যায়। তারপরও তারা দমে যায়নি, চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কর্মকা-। প্রভাবশালি ডন-এর সিএও হামিদ হারুন যে কথা বলেছেন যে, আমাদের কোনো স্বাধীনতা নেই। অবশ্যই পাকিস্তানে মিডিয়ার কোনো স্বাধীনতা নেই। কীভাবে স্বাধীনতা থাকবে? পৃথিবীর কোন জায়গা ক্ষমতাবান শ্রেণি অন্য শ্রেণিকে স্বাধীনতা উপভোগ করতে দেয়? পাকিস্তান সেনাবাহিনী কখন কি অবস্থান নিয়ে তাদের ক্ষমতাটা প্রয়োগ করেছে তা খেয়াল করলে পাকিস্তানকে বুঝতে সুবিধা হবে।
তিনি আরও বলেন, যেকোনো দেশে যখন রাজনীতি অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে বা রাজনীতি একটি গোষ্ঠী কেন্দ্রিভূত হয় তখন নানা ধরনের হস্তক্ষেপ হয়। পাকিস্তানি সেনা গোয়েন্দা সংস্থার হস্তক্ষেপও নতুন কিছু নয়। পাকিস্তানে ইতিহাসে সবসময়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। যেসব দেশে সামরিক শাসন হয় সেখানে এ ধরনের ঘটনা স্বাভাবিক। সামরিক শাসনের মানেই হচ্ছে সেদেশের রাজনৈতিক কাঠামো দুর্বল। পাকিস্তানে সামরিক শাসনের প্রভাব অনেক বেশি। কারণ একটা সমাজে যে শ্রেণিগুলো ক্ষমতায় থাকে অর্থ্যাৎ চারটা শ্রেণি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকে, এক. সেনাবাহিনী, সিভিলিয়ান আমলারা থাকেন, ব্যবসায়ি ও রাজনীতিবিদ থাকেন।
পাকিস্তানে ১৯৪৭ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত বেসামরিক প্রশাসন রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। পাঞ্জাবি গোষ্ঠী, যারা মূলত সামন্তবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে য্ক্তু তারা ক্ষমতায় এসেছে। তারা সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত। সেনাবাহিনীর সদস্যরা অনেক সম্পত্তি পায় ব্যবসা করার জন্য। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও পাকিস্তান সামন্তবাদ খুব ঘনিষ্ঠ ছিল, যা এখনো আছে।