বাংলাদেশ পারবে ফিলিপাইনকে হারাতে?
স্পোর্টস ডেস্ক : দুই দলই সেমিতে পা রেখেছ প্রথম ম্যাচে জয় তুলে। আজ দুই দলের লড়াইটার যা গুরুত্ব, তা বাংলাদেশের কাছেই, সেটি ফিলিস্তিনকে সেমিফাইনালে এড়ানোর প্রশ্নে। এ কারণেই আজ ফিলিপাইনের বিপক্ষে জয়ের আশায় আছে জেমি ডের দল। জিতলে সেমির সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ তাজিকিস্তান তুলনামূলক একটু সহজই হবে।
কিন্তু ফিলিপাইনের কাছে হারলে? হারই স্বাভাবিক এবং সেমিতে সামনে পড়ে যাবে ফিলিস্তিন। এই টুর্নামেন্টে ১০০ র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ফেবারিটদের বিপক্ষে খেলা মনস্তাত্ত্বিক বাধাও স্বাগতিকদের জন্য।
টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ফেবারিট ফিলিপাইন কম যাচ্ছে না, আগামী জানুয়ারিতে যারা প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপে খেলছে। হ্যাঁ, বাংলাদেশে আসা দলটি হয়তো ফিলিপাইনের সেরা শক্তির নয়। আইরিশ কোচ স্কট কুপারের অধীনে কাতারে অনুশীলন ক্যাম্প করছে মূল দলটি। তবে সর্বশেষ সেরা একাদশের চারজন শক্তি বাড়িয়েছেন এই দলের। স্কোয়াডের ২০ জনই এর আগে জাতীয় দলে খেলেছেন।
ফিলিপাইনের আক্রমণভাগ খুবই ধারালো। ৩১ বছর বয়সী ‘নাম্বার নাইন’ অধিনায়ক মিশাগ বাহাদরান সর্বশেষ খেলেছেন মালয়েশিয়ার সুপার লিগের ক্লাব পেরাকে। ১১ নম্বর জার্সিধারী ২১ বছরের জেভিয়ান অগাস্টিন খেলেন ম্যানিলা বিশ্ববিদ্যালয় দলে। জাতীয় দলে এসেছেন মাত্রই। ২৮ বছর বয়সী স্ট্রাইকার জোভিন বেদিচ প্রথম ম্যাচে চোখ কেড়েছেন আলাদাভাবে। ফিলিপাইনের ঘরোয়া লিগে পশ্চিম ভিয়াসাসের ক্লাব কাজারের এই স্ট্রাইকার রক্ষণে ফাঁক বের করতে ওস্তাদ। সঙ্গে আছে গতি আর বুদ্ধি, এতেই প্রথম ম্যাচে লাওসের রক্ষণ বারবার ভেঙে দিয়েছেন।
শারীরিকভাবে শক্তিশালী ফিলিপিনোদের উচ্চতা ভালো, হেডে বিপজ্জনক। লাওসের বিপক্ষে ৩-১ জয়ে দ্বিতীয় গোলটা করেছে দারুণ হেডে। টেকনিক্যালিও দলটা ভালো। তবে প্রতি আক্রমণে নিচে নামতে একটু সময় নেয় ফরোয়ার্ড লাইন, যেটি আজ কাজে লাগাতে চাইবে বাংলাদেশ। গতকাল সিলেট বিকেএসপির মাঠে অনুশীলনে সেভাবেই ছক সাজিয়েছেন বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে। সেট পিসও অনুশীলন করিয়েছেন প্রচুর। তবে বদল আনছেন না ৪-৪-২ ফর্মেশনে। নিজেই বলেন, ‘ঘন ঘন ফর্মেশন বদল করার পক্ষে নই আমি।’
ঘরের মাঠে খেলাটা বাংলাদেশে জন্য বাড়তি সুবিধা। কথাটা সব দলের কোচের মুখেই শোনা যাচ্ছে। জেমি ডের দল সেই সুবিধা নিয়েছিল প্রথম ম্যাচে লাওসের বিপক্ষে। কিন্তু র্যাঙ্কিংয়ে ১১৪তম ফিলিপাইনের সঙ্গে ১৯৩-এর দুস্তর ব্যবধানটা ঘোচানো কঠিনই বাংলাদেশের পক্ষে।
না, কঠিন নয়। বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের এক সদস্য প্রতিবাদ করেন। ফিলিপাইন শক্তিশালী, তবে তাঁর চোখে অপ্রতিরোধ্য নয়। এশিয়ান গেমসে উজবেকিস্তান ছিল অনেক বেশি ধারালো। যারা নেমেই বাংলাদেশকে চেপে ধরে। হাঁফফাঁস অবস্থা হয়েছিল জামালদের। সে তুলনায় ফিলিপাইন অত কঠিন হবে না বলেই বিশ্বাস তাঁর।
জেমি ডে অবশ্য সহজ ভাবছেন না। তবু কঠিনকে জয় করার মন্ত্র জপছেন বাংলাদেশ কোচ জেমি। এমনিতে যে দলই সামনে আসুক, জয়ের কথাই তোতা পাখির মতো বলে যান কোচ। ফিলিপাইন ম্যাচের আগেও ব্যতিক্রম নয়, ‘আমরা সেমিফাইনালে উঠে গেছি ঠিক আছে। তবে ফিলিপাইনের বিপক্ষে জেতা ছাড়া আসলে আর কিছু ভাবছি না।’
কিন্তু কথার সঙ্গে কাজের বৈপরীত্য দেখাচ্ছেন কোচ। জিততে মরিয়া থাকলে সেরা দলটাই মাঠে নামাতে হয়। উল্টো একাদশে অন্তত তিন-চরজনকে বিশ্রাম দিয়ে বেঞ্চের কয়েকজনকে দেখে নিতে চান। লেফট ব্যাক ওয়ালী ফয়সালের জায়গায় রহমত, রাইট ব্যাক বিশ্বনাথের জায়গায় সুশান্ত এবং জামাল ভূঁইয়ার বদলে ইমন বাবু। অন্তত অনুশীলন দেখে এমনটাই মনে হয়েছে।
বাংলাদেশ দলকে অনুশীলনে-হোটেলে যেমন নির্ভার দেখাচ্ছে, তাতে ‘জিতলে ভালো, না জিতলেও ক্ষতি নেই’ ট্যাগ ঝুলছে অদৃশ্যভাবে। ফুটবলাররা ফুরফুরে। সুখী সুখী ভাব। আগের দিন ফিলিপাইনের কাছে লাওস হেরে যাওয়ায় বড় উপকারটা যেন বাংলাদেশরই হয়েছে।
ফিলিপাইন একটু এলোমেলো অবস্থায় পড়েছে। সব খেলোয়াড় একসঙ্গে বাংলাদেশে আসতে পারেনি। তাই প্রস্তুতি নিয়ে অখুশি ভারপ্রাপ্ত কোচ গঞ্জালেস। সব দেখেই বাংলাদেশকে বেশ সমীহ করছেন ৩৭ বছর বয়সী কোচ, ‘বাংলাদেশের খেলা আমরা দেখেছি। ভালো দল ওরা। জয়ের ক্ষুধা আছে। দর্শক সমর্থন পাবে। আমরাও কয়েকজন খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দেব। তবে অবশ্যই মাঠে নামব জেতার জন্য।’
২০১১ সালে দুই দলের সর্বশেষ ম্যাচে (মিয়ানমারে চ্যালেঞ্জ কাপের ৩-০) জয়টা ছিল ফিলিপাইনেরই। তবে আরও পেছনের গল্পটা ভিন্ন। ১৯৮৪ সালে এশিয়ান নেশনস কাপের বাছাইয়ে জিতেছে বাংলাদেশ (৩-২)। ১৯৯১ সালে অলিম্পিক প্রাক্বাছাইয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দলের কাছে ফিলিপাইন অনূর্ধ্ব-২৩ দলের ৮-০ গোলে ভেসে যাওয়া তো একটা সুখস্মৃতি, ইতিহাসও।
সেই ইতিহাসের পাতায় আবার জয়ের দাগ ফেলতে পারবে বাংলাদেশ? না, সেই সাহস আর দেখাতে পারছে না উত্তর প্রজন্ম।