লিটনকে বরণে দেড় কোটি টাকার আয়োজন
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) নবনির্বাচিত মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে বরণে চোখ ধাঁধানো আয়োজন করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে নগর ভবনের গ্রিন প্লাজায় আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বভার নেবেন লিটন।
নগর ভবনের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, মেয়রদের দায়িত্বভার নেয়ার এমন অনুষ্ঠান নগর সংস্থার ইতিহাসে এটিই প্রথম। আলিশান এই আয়োজনে সব মিলিয়ে ব্যয় হচ্ছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। যদিও এখানকার কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ হচ্ছে না নিয়মিত।
বিভিন্ন সেবা সংস্থার বিপুল পরিমাণ বিল বকেয়া। দায়দেনা সবমিলিয়ে শতকোটি টাকার উপরে। তা সত্ত্বেও এমন আয়োজনে সমালোচনার মুখে পড়েছে নগর কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশ না করে রাসিকের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, কতিপয় উৎসাহী কর্মকর্তা রয়েছেন এই আয়োজনের পেছনে। তারা চাইছেন নবনির্বাচিত মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের আস্থা অর্জন করতে। তাদের খামখেয়ালিপনায় নগর সংস্থাকে গুনতে হবে এই বিপুল অর্থ। অথচ স্বল্প ব্যয়েই জমকালো অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা যেত।
বিষয়টি সহজভাবে নিতে পারেনি নগরবাসী। নগরীর কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, বর্তমান মেয়র তার নির্বাচনী প্রচারণায় বলছিলেন, এখনও বলছেন-দেনায় গলাঅব্দি ডুবে আছে রাসিক। ফলে এমন বিলাসী আয়োজনের যৌক্তিকতা নেই। এই অর্থ নগরবাসীর উন্নয়নে ব্যয় করা যেতো।
এদিকে রাসিকের জনসংযোগ দপ্তর জানিয়েছে, শুক্রবার বিকেল ৩টায় শুরু হবে আনুষ্ঠানিকতা। সাড়ে ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বভার নেবেন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ওই অনুষ্ঠানে রাজশাহীর গণমান্য ব্যক্তিরা অতিথি থাকবেন।
জানা গেছে, বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমানের সভাপতিত্ব করবেন ওই অনুষ্ঠানে। তাতে আমন্ত্রিত অতিথি থাকবেন রাজশাহীর ছয় আসনের সংসদ সদস্য, সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি, নগর পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপার।
আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সাবেক মেয়র, বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলরদেরও। সবমিলিয়ে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবে তিন হাজারের কাছাকাছি। এরই মধ্যে আয়োজনের প্রস্তুতিও শেষ।
অনুষ্ঠানের জন্য নগরভবনের গ্রীণ প্লাজাজুড়ে তৈরি করা হয়েছে আলিশান মঞ্চ ও প্যান্ডেল। সেখানে একসঙ্গে দুই হাজার ৬০০ লোক বসতে পারবেন। বসানো হয়েছে ২০০ টন এসি। থাকছে চোখ ধাঁধাঁনো আতশবাজি।
প্যান্ডেল তৈরি করছে ঢাকার ইভেন্টম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান স্টার ইভেনোলজিস্ট। বৃহস্পতিবার বিকেলে গিয়ে দেখা গেছে, কর্মীরা শেষ মুর্হূতের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা বাদল মিয়া জানিয়েছেন, ২ হাজার ৬ আসনের প্যান্ডেল তৈরি করছেন তারা। একশ’ জন কর্মী নিরলসভাবে কাজ করছেন। রাতের মধ্যেই আয়োজন শেষ হবে।
তিনি জানিয়েছেন, আগে সেখানে কাঠামো তৈরি করেছিলো স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সেটি সরিয়ে নতুন করে কাঠামো তৈরি করছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠান করতে এসেছিলেন তারা। তা দেখেই নগর কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়ে আসে।
কেবল মঞ্চ সজ্জাই নয়, নগরভবনও এখন ঝকঝকে তকতকে। চলছে রং ও ধোয়া-মোছার কাজ। চলছে ডিসপ্লের প্রস্তুতিও। পুরো প্যান্ডেলজুড়ে বসানো হয়েছে এসি। অর্ধেক এসি চালু করা হয়েছে বিকেল থেকেই। বাকিগুলো চলবে রাতে।
এতগুলো এসি নগরীর বিদ্যুৎ পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটাবে কীনা জানতে চাইলে নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী এসএম রেজাউল করিম বলেন, রাজশাহী নগরীতে এই মুহূর্তে প্রতিদিন বিদ্যুৎ চাহিদা ১১৫ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে চাহিদামতই। এই মুহূর্তে লোডশেডিং নেই।
তবে নগরীতে দফায় দফায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ জানতে চাইলে বিষয়টি কারিগরি বলে তিনি দাবি করেন। নগর ভবনে এই উৎসবে এসিতে বিদ্যুৎ ব্যবহার বিষয়ে জানতেই চাইলে তিনি বলেন, নগর সংস্থা তাদের আগে থেকেই চাহিদা জানিয়েছে। এই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। সংকট হবে না বলে আশাবাদি তিনি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আয়োজনের ব্যয় জানতে চাইলে রাসিকের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নিজামুল হোদা বলেন, তিনি এ সংক্রান্ত ফাইলপত্র হাতে পাননি। ফলে এ আয়োজনে ব্যয় কত হচ্ছে তা জানাতে পারছেন না।
জানতে চাইলে রাসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, তিনি কেবল অতিথিদের আমন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করছেন। আয়-ব্যয়ের পুরো বিষয়টি দেখভাল করছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান প্রকৌশলী। বিষয়টি তারাই বলতে পারবেন।
যোগাযোগ করা হলে ব্যস্ততার অজুহাতে এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক। একই অজুহাতে মন্তব্য করতে রাজি হননি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মোমিনও।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ জুলাই রাসিক নির্বাচনে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও নগর সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
গত পাঁচ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান। এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। ব্যাপক উন্নয়ন করে নগরীর চেহারা বদলে দেন তিনি। সূত্র: জাগো নিউজ