শুক্রবার, ১২ই অক্টোবর, ২০১৮ ইং ২৭শে আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

সাংবাদিক সুবর্ণা হত্যার বিচার চাই না

news-image

সুবর্ণা নদীকে আমি চিনতাম না। মঙ্গলবার রাতে ফেসবুকে প্রথম তার নাম শুনি, ছবি দেখি। কিন্তু সেই শোনা ও দেখাটা ছিল বেদনাদায়ক। সুবর্ণা সাংবাদিকতা করত। বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল আনন্দ টিভি ও দৈনিক জাগ্রতবাংলার পাবনা প্রতিনিধি ছিলেন সুবর্ণা। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, সুবর্ণা পেশায় টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করছিলেন। বাংলাদেশে সাংবাদিকতা এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ, মফস্বলে সেটা আরও বেশি। নারীদের জন্য সাংবাদিকতা আরও বিপজ্জনক। পাবনার মতে একটা জেলা শহরে সবাই সবাইকে চেনে। তাই সৎ সাংবাদিকতা করাটা সেখানে কঠিন। সেখানে একজন নারীর সাংবাদিক হিসেবে টিকে থাকার লড়াই কতটা বিপজ্জনক, সেটা সুবর্ণা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন। এমনিতে মফস্বল সাংবাদিকদেরকারও কারও বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ শোনা যায়, অভিযোগ আছে ঢাকায় কাজ করা সাংবাদিকদের কারও কারও বিরুদ্ধেও। কিন্তু সুবর্ণার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের কথা বলেনি। নিছকই টিকে থাকার সংগ্রামে থাকা একজন নারী। সাংবাদিক হোক, নারী হোক, সাধারণ মানুষ হোক; সবার তো নিরাপদে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। নিজের বাসা তো সবার জন্যই নিরাপদ আশ্রয়। সুবর্ণা সারাদিনের কাজ শেষে রাত ১০টার দিকে বাসায় ফিরেছিলেন। দুর্বৃত্তরা বাসা থেকে ডেকে নিয়ে বাসার সামনেই কুপিয়ে হত্যা করে। মাত্র ৩২ বছরেই থেমে যায় একজন নারী সাংবাদিকের লড়াই, স্বপ্ন।

সুবর্ণা যে রাতে খুন হন, সেদিন দুপুরেই সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিচারের দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ঘেরাও করে বিএফইউজে ও ডিইউজে। এ সময় ৭ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। ঘেরাও কর্মসূচি ছিল সাংবাদিকদের উপর হামলার বিচারের দাবিতে। কিন্তু আলটিমেটামের মধ্যেই প্রাণ হারালেন একজন সাংবাদিক। এখন নিশ্চয়ই আমরা সুবর্ণা হত্যার বিচারও চাইব। ইতোমধ্যে সুবর্ণার হত্যার বিচারের দাবিতে বিভিন স্থানে মানববন্ধন হয়েছে। তবে আমি বিচার চাই না। কারণ আমি জানি, চেয়ে কোনো লাভ নেই, বিচার হবে না। বাংলাদেশে সাংবাদিক মারলে কিছু হয় না, এটা সবাই জানে। গত ৬ আগস্ট ধানমন্ডি এলাকায় দায়িত্ব পালনের সময় দুর্বৃত্তদের হামলায় ১২ সাংবাদিক আহত হন। দিনে দুপুরে পুলিশের সামনেই হামলা চালানো হয়েছিল। হামলাকারীদের চেহারাও চেনা যাচ্ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রীসহ সরকারের প্রভাবশালীরা হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু ঘটনার ২৪ দিন পরও সাংবাদিকদের কঠোর কর্মসূচির হুমকি দিতে হয়। কিন্তু হামলাকারীরা গ্রেপ্তার হয় না। তাই মফস্বলের এক নারী সাংবাদিকের খুনের বিচার হবে, এমন ভরসা নেই। সুবর্ণা সাংবাদিক না হয়ে সাধারন মানুষ হলে হয়তো বিচার হতো।

সুবর্ণার হত্যার সঙ্গে পেশাগত বিরোধ নাকি পারিবারিক বিরোধ জড়িত জানি না। পুলিশ তদন্ত করছে। ইতিমধ্যে সুবর্ণার মা মামলা করেছেন। মামলায় সুবর্ণার সাবেক স্বামী রাজিব ও সাবেক শ্বশুর আবুল হোসেনের নাম উল্লেখ করে কয়েকজনকে আসামী করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ইড্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পালিয়েছে রাজিব। যাক সাংবাদিক না হোক, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে বিবোচনা করে সুবর্ণা হত্যার বিচার হোক। একজন নারীকে রাতের বেলা ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে; এর বিচার তো চাইতেই পারি।

লেখক : হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ