রবিবার, ৭ই অক্টোবর, ২০১৮ ইং ২২শে আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

নতুন মাহি

বিনোদন প্রতিবেদক : এ মাসেই মাহিয়া মাহি অভিনীত দুটি ছবি মুক্তি পাবে। একটি পবিত্র ভালোবাসা আরেকটি অন্ধকার জগৎ। প্রথমটি আগামীকাল (আজ) ৫ অক্টোবর, দ্বিতীয়টি ১৯ অক্টোবর মুক্তির কথা রয়েছে। এসব খবরের পাশাপাশি নতুন তথ্য দিলেন এই অভিনেত্রী। মেয়েদের পোশাক নিয়ে চালু করছেন ফ্যাশন হাউস। এ ছাড়া চলচ্চিত্রজীবনের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ঢালিউডের এই নায়িকা। লিখেছেন শফিক আল মামুন

মুঠোফোনে মাহিয়া মাহি জানিয়েছিলেন বেলা ৩টার মধ্যেই প্রথম আলো কার্যালয়ে পৌঁছাবেন। সেখান থেকে মেকআপ নিয়ে বিএফডিসিতে হবে ফটোসেশন। দিনটি ৩০ সেপ্টেম্বর। ঠিক সময়েই হাজির হলেন প্রথম আলো কার্যালয়ে। গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে হাঁটতে মাহি বললেন, ‘আমার জীবনে অনেক সময়ই কাকতালীয় ব্যাপার ঘটে। আজ কাকতালীয়ভাবে রাস্তায় কোনো জ্যাম নেই। আবার আমি যে চলচ্চিত্রের নায়িকা হয়েছি, তা–ও কাকতালীয়। এই কাকতালীয় ঘটনাগুলো উপভোগ করি আমি।’

এবার মেকআপ শেষে গাড়ি ছুটে চলল বিএফডিসির পথে। মূল ফটকে ঢুকেই চিত্কার মাহির। ‘দেখেন দেখেন আমার কত ছবি।’ মূল ফটক থেকে শুরু করে পুরো এফডিসিতেই মুক্তি প্রতীক্ষিত ছবি দুটির ব্যানার, ফেস্টুনে মাহির বড় বড় ছবি শোভা পাচ্ছে। গাড়ি গিয়ে থামে মান্না ডিজিটাল কমপ্লেক্সের সামনে।

ফটোসেশন শেষে পোশাক পরিবর্তন নিয়ে দারুণ মনোযোগ দেখা গেল মাহিকে। রং-বেরঙের একের পর এক পোশাক পরে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন মাহি। ব্যাপার কী? হাসতে হাসতে নতুন তথ্য দিলেন মাহি। জানালেন, এ পোশাকগুলো তাঁর ফ্যাশন হাউসের। ‘ভারা’ নামে একটি ফ্যাশন হাউস খুলবেন শিগগিরই। তার জন্য এসব পোশাক তৈরি করা হয়েছে।

মাহি বলেন, ‘এটি আমার স্বপ্নের প্রজেক্ট।’ এই স্বপ্নের পেছনের গল্পও আছে। জানালেন, মাস তিনেক আগে অসচ্ছল বেশ কয়েকজন মহিলাকে কিছু সেলাই মেশিন কিনে দিয়েছিলেন। কিন্তু মহিলারা পোশাক তৈরি করে তা বিক্রি করতে পারছিলেন না। তখন নতুন ভাবনা আসে মাহির মাথায়। নিজেই তাঁদের কাছ থেকে পোশাক কিনে নেবেন। কথামতোই কাজ। চূড়ান্ত করলেন ফ্যাশন হাউস, নাম দিলেন ভারা।

মাহি বলেন, উত্তরায় একটি বাসা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। ফ্যাশন হাউসের সাজসজ্জাও শেষ। যেকোনো সময়ই চালু হয়ে যাবে ভারা।

ভারা নিয়ে আরও বড় পরিকল্পনা আছে বলে জানান বড় পর্দার এই অভিনেত্রী। তাঁর কথা, শোরুম তো থাকবেই, ভ্রাম্যমাণ ফ্যাশন হাউস করারও ইচ্ছা তাঁর। গাড়িতে করে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি হবে পোশাক।

মাহি আরও বলেন, ভারাতে কোনো পুরুষকর্মী থাকবে না। এখানে শুধুই সুবিধাবঞ্চিত মেয়েরা কাজ করবে।

ততক্ষণে শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে পৌঁছে গেছে মাহির গল্প। গরম চায়ের চুমুকে সেই গল্পের প্রসঙ্গ পাল্টাই। ফিরে আসি মূল আড্ডায়।

৫ তারিখে পবিত্র ভালোবাসা এবং ১৯ অক্টোবর অন্ধকার জগৎ ছবি দুটির মুক্তি। প্রত্যাশা কেমন ছবি দুটি নিয়ে? ঢাকাই ছবির এই নায়িকা বলেন, দুটি ছবির পরিচালকের গ্রহণযোগ্যতা আছে। আলোচিত খায়রুন সুন্দরীর পরিচালক এ কে সোহেল পবিত্র ভালোবাসা নির্মাণ করেছেন। অন্ধকার জগৎ বানিয়েছেন গুণী পরিচালক বদিউল আলম।

ছবি মুক্তির আগে প্রচারণা নিয়ে ছবির নায়ক–নায়িকার বিরুদ্ধে প্রযোজক–পরিচালকের প্রায়ই অভিযোগ প্রায় শোনা যায়। আপনি কী বলবেন? এমন প্রশ্ন শুনে মাহির চেহারায় খানিকটা বিরক্তির ভাব মনে হলো! একটু দম নিয়ে মাহি বলেন, ‘অভিযোগ দিলে তো হবে না। আয়নাবাজি, ঢাকা অ্যাটাক কিংবা স্বপ্নজাল ছবির প্রচারণার মতো পরিকল্পনা করে প্রচারণা করতে হবে। এখন যেভাবে দেবী ছবির প্রচারণা করা হচ্ছে। কিন্তু অনেক সময় আমাদের পরিচালকেরা হুট করেই ছবি মুক্তির দু-এক দিন আগে ছবির প্রচারণার কথা বলেন। দেখা গেল তখন ওই ছবির নায়ক–নায়িকা ঢাকাতেই নেই। এভাবে হবে না। প্রচারণাটা ছবির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটা অবশ্যই সময় নিয়ে, পরিকল্পনা করে করতে হবে।’

কথায় কথায় মাহির মুখ থেকে জানা গেল, বেশ কিছুদিন ধরে কোনো শুটিংয়ে অংশ নেননি এই নায়িকা। শুধু মাহি নন, চলচ্চিত্রপাড়ার মানুষজনের কথা, হাতে গোনা দু-একজন ছাড়া অনেক নায়িকা-নায়িকার হাতেই নতুন ছবি নেই। মাহি সেই তালিকায় আছেন কি না? প্রশ্ন শুনে মাহি বিচলিত না হয়ে সোজাসাপ্টা করে বলেন, ‘দেখুন, সিনেমাই তো কম তৈরি হচ্ছে। অন্যদের কথা আমি বলব না। আমি কাজ করছি। হয়তো বেশি বেশি না। এই তো আগামী সপ্তাহে আনন্দ অশ্রু ছবির শুটিং শুরু করব।’

২০১২ সালে চলচ্চিত্রে অভিষেক হওয়ার পর থেকে যৌথ প্রযোজনা, দেশি মিলে প্রায় দুই ডজন ছবিতে অভিনয় করে ফেলেছেন মাহি। বেশির ভাগ ছবিই ব্যবসাসফল হয়েছে। এর মধ্যে কোন তিনটি ছবিকে এক থেকে তিনের পর্যায়ে রাখবেন? এবার আর উত্তর দিতে সময় নিলেন না মাহি। ঝটপট তিনি বলেন, অগ্নি, পোড়ামন এবং অনেক সাধের ময়না।

তবে অভিষেকেই আলোচিত ছবি ভালোবাসার রং ছবিটিকে ভালো লাগার তালিকায় রাখলেন তিনি। মাহি বলেন, ‘এই ছবিটি আমার চলচ্চিত্রজীবনে দুটি দিক বহন করে। প্রথমত, এটি আমার প্রথম ছবি। দ্বিতীয়ত, এটি বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল ছবি। এই ছবির ইতিহাসের সঙ্গে আমি জড়িত থাকব সারা জীবন।’

ততক্ষণে আড্ডা শেষ হয়, মাহি বেরিয়ে পড়েন তাঁর গন্তব্যে। সূত্র: প্রথম আলো