দেশে মাদকাসক্ত ৩৭ লাখ
নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মাদকসেবীর সংখ্যা ৩৪ লাখ ৩৬ হাজার ৬৯৮। এ ছাড়া ১৮ বছরের নিচে অর্থাৎ শিশুদের মধ্যে মাদকসেবীর সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার। সে হিসাবে দেশে ৩৭ লাখ ১৬ হাজার ৬৯৮ জন মাদকসেবী রয়েছেন।
প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে মাদকসেবী ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী মাদক ব্যবহারকারী ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। মাদকাসক্তের হার বেশি ঢাকা বিভাগে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালিত এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ১৮ বছরের বেশি মানুষের মধ্যে মানসিক রোগের প্রকোপ ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ১৮ বছরের নিচে শিশু-কিশোরদের মধ্যে মানসিক রোগের প্রকোপ ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ। সমীক্ষা টিমের সদস্য ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রমণ রোগ নিয়ন্ত্রণ (এনসিডিসি) শাখার আর্থিক সহায়তায় ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত এই সমীক্ষা কার্যক্রম চালানো হয়।
বাংলাদেশে মাদক ব্যবহারের প্রকোপ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় নিয়ে ৭ বছরের বেশি বয়সী দেশের ৭টি বিভাগের ১৯ হাজার ৬৬২ জনের ওপর সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়। এই টিমের প্রধান গবেষক জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো ফারুক আলমসহ পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসি শাখার পরিচালক ডা. নূর মোহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশে মাদক ব্যবহারের প্রকোপ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিষষের ওপর একটি সমীক্ষা সম্পন্ন করে অধ্যাপক ডা. ফারুক আলমের নেতৃত্বাধীন একটি টিম। সমীক্ষা প্রতিবেদন এখনো আমাদের দপ্তরে জমা দেওয়া হয়নি। আগামী ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। আশা করছি ওইদিন সমীক্ষা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হবে।
সমীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সাত বছরের বেশি বয়সী সারা দেশ থেকে ১৯ হাজার ৬৬২ জন নির্বাচিত মানুষের ওপর সমীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের মাদক ব্যবহারকারীর মধ্যে ১৮ বছরের বেশি বয়সী হচ্ছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ; ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী হচ্ছে শূন্য ৮ শতাংশ এবং ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। কৌতূহল, অসৎসঙ্গ, মাদকের সহজলভ্যতা, অভিভাবকের নজরদারির অভাব ও ত্রুটিপূর্ণ সন্তান লালন-পালন মাদকাসক্তির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জন। সে হিসাবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মাদকসেবী হচ্ছে ৩৪ লাখ ৩৬ হাজার ৬৯৮। এ ছাড়া ১৮ বছরের নিচে শিশুর সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি ৫৮ লাখ ৫৭ হাজার। শিশুদের মধ্যে মাদকসেবীর সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার।
সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাদকদ্রব্যের মধ্যে সব থেকে বেশি ৮২ দশমিক ৯০ শতাংশ ব্যবহৃত হয় ক্যানবিচ (গাঁজা)। এ ছাড়া এলকোহল ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, এমফিটামিন (ইয়াবা) ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ, অপিয়ড ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং ঘুমের ওষুধ ৩ দশমিক ৯৮০ শতাংশ ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া ৭ বছরের উর্ধ্বে ধূমপান, গুল, অন্যান্য উপায়ে তামাক গ্রহণকারীর হার হচ্ছে ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
এলকোহল গ্রহণের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। চট্টগ্রাম বিভাগে ৬০ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ৪৫ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ২৮ দশমিক ২ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ, ঢাকা বিভাগে ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ, সিলেট বিভাগে ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ এলকোহল গ্রহণ করে থাকে।
বিভাগ অনুযায়ী মাদক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৩৬ দশমিক ৮০ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ১৩ দশমিক ৯০ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ৭ দশমিক ১ শতাংশ, সিলেট বিভাগে ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৬ দশমিক ২০ শতাংশ এবং বরিশালে ৪ দশমিক ১০ শতাংশ।
সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেশার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ হচ্ছে শ্রমিক। এর পরই মাদক ব্যবহারকারী হচ্ছে বেকার ৫ দশমিক ৭ শতাংশ, ব্যবসায়ী ৪ দশমিক ৩ শতাংশ, কৃষক ৩ দশমিক ৮ শতাংশ, এবং চাকরিজীবী ৩ দশমিক ৫ শতাংশ রয়েছে।
অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাসিক সাড়ে ৭ হাজার টাকার নিচে খরচকারীদের মধ্যে মাদক ব্যবহারকারী ৩ দশমিক ২ শতাংশ, সাড়ে ৭ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচকারীদের মধ্যে মাদক ব্যবহারকারী ২ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ১৫ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে খরচকারীদের মধ্যে মাদক ব্যবহারকারী ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। দৈ.আমাদের সময়