বৃহস্পতিবার, ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ইং ১২ই আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

স্বামী বা প্রেমিক মানসিক নির্যাতন করছে? মিলিয়ে নিন ৭ লক্ষণ

নির্যাতন মানেই কেবল গায়ে হাত তোলা কিংবা গালাগাল করা নয়। সকলের চোখের সামনেই দিনের পর দিন চলতে পারে অসহনীয় মানসিক নির্যাতন, অথচ প্রমাণ করার কোন উপায় থাকে না!

জীবনের জন্য সম্পর্ক, সম্পর্কের জন্য জীবন নয়!- এই সহজ সত্যটি অনেক নারীই অনুধাবন করে উঠতে পারেন না জীবনে। পুরুষেরা যেভাবে সম্পর্ক বিষয়টিকে দেখেন, নারীদের দেখার ভঙ্গিটি কিন্তু সেটার চাইতে বেশ খানিকটা ভিন্ন। নারী যখন কোন সম্পর্কের ক্ষেত্রে মন থেকে জড়িয়ে যান, তখন চেষ্টা করেন যে কোন মুল্যে সম্পর্কটি ধরে রাখতে। অন্যদিকে অনেক নারীই স্বামী বা প্রেমিকের পাশে আজও নিজেকে সমান সমান মনে করেন না। ফলে বুঝে উঠতে পারেন না যে প্রেমিক বা স্বামী দ্বারা প্রতিনিয়ত মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে চলেছেন!

শারীরিক নির্যাতনের চাইতে অনেক বেশি ভয়াবহ সেই মানসিক নির্যাতন। তাই উপস্থাপন করা হচ্ছে ৭টি লক্ষণ। এগুলো কি মিলে যাচ্ছে আপনার জীবনের সাথে? তাহলে সময় হয়েছে নিজেকে ও নিজের সম্পর্কগুলো নিয়ে নতুন করে ভেবে দেখার।

১. আপনি ও আপনার শরীর

তিনি আপনার শরীর কিংবা শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে অহেতুক রসিকতা করেন বা আপনাকে অপমানের চেষ্টা করেন। আপনার ওজন বেড়ে যাওয়া নিয়ে খোঁটা দেন বা অন্যের সামনেও আপনাকে কথা শোনান প্রায়ই। তার মন্তব্যগুলো এতটাই তীক্ষ্ণ হয় যে আপনি বিষণ্ণ বোধ করেন এবং হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করেন। কিন্তু তাতে তার কোন ভাবান্তর হয় না। তিনি মনে করেন স্ত্রীর শারীরিক সৌন্দর্যটাই সব।

২. অপমান ও রসিকতার মাঝে পার্থক্য আছে

স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকার মাঝে রসিকতার সম্পর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু সেটি হবে অবশ্যই দুই পক্ষ থেকেই। কারো মনে কষ্ট না দিয়ে রসিকতা এক জিনিস, আর রসিকতার ছলে কাউকে অপমান করা সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। একটু লক্ষ্য করে দেখুন, আপনি প্রায়ই তার কথায় অপমানিত বোধ করেন কিনা। বিশেষ করে আত্মীয়-স্বজন বা মেহমানদের সামনে আপনাকে অপমান করার চেষ্টা তার ইচ্ছাকৃতভাবেই থাকে কিনা।

৩. আপনার কোন সিদ্ধান্তই গুরুত্বপূর্ণ নয়

সম্পর্কে বা সংসারে দুজনেরই মতামত জরুরী। সবকিছুই হতে হবে দুজনের ইচ্ছা অনুযায়ী। আমাদের সমাজে প্রচলিত ধারণা হচ্ছে যেহেতু পুরুষ উপার্জন করেন, সেহেতু পুরুষের সব কথাই শিরোধার্য। এটি অত্যন্ত ভুল ধারণা। প্রথমত , নারী উপার্জন করুক বা না করুক, সঙ্গীর কাজ সর্বদা তাঁকে সম্মান ও ভালোবাসা দেয়া। একজন গৃহবধূও ততটাই সম্মানের দাবীদার, যতটা একজন পেশাদার নারী। বিষয় যদি এমন হয়ে থাকে যে শেষ সিদ্ধান্ত সর্বদা আপনার স্বামী বা প্রেমিকই নিচ্ছেন, তার ইচ্ছাই শেষ কথা, তাহলে জানবেন এই সম্পর্কের মাঝে আপনার জন্যে কোন সম্মান নেই।

৪. দোষ তার হলেও ভোগান্তি আপনার

সম্পর্কে ঝামেলা, ঝগড়াঝাঁটি থাকবেই। দিনশেষে সেটা ঠিক হয়ে যাবে যার দোষ তার স্যরি বলার মাধ্যমে। যদি সবকিছুতেই কেবল আপনাকেই দোষ দেয়া হয়, দোষ যারই হোক সর্বদা যদি আপনাকেই স্যরি বলে সবকিছু ঠিক করতে হয়, তাহলে সেটা স্রেফ মানসিক নির্যাতন। সঙ্গী আপনাকে মানসিক চাপে ফেলেই বারবার মাথা নত করতে বাধ্য করছেন।

৫. আপনার কথা গুরুত্বহীন

আপনার বেশীরভাগ কথাই তিনি মন দিয়ে শোনেন না। আপনি কী চান, কী ভালোবাসেন, আপনার দিন কেমন গেল, আপনার মন খারাপ বা কষ্টের কথা, কিছু নিয়েই তার বিশেষ আগ্রহ নেই। বরং আপনার কোথায় তিনি বিরক্ত হয়ে থাকেন এবং আপনাকে অবজ্ঞা করে থাকেন।

৬. আপনি নির্বোধ, ক্ষুদ্র, মুল্যহীন

তিনি প্রায়ই এমন আচরণ করেন বা এমন কথা বলেন যার ফলে নিজেকে আপনার খুবু অকিঞ্চিৎকর মনে হয়। আপনি নিজেকে অসুন্দর, অযোগ্য, নির্বোধ ইত্যাদি আরও অনেক কিছুই ভাবতে শুরু করে দেন। যদিও পরিস্থিতি হবার কথা ছিল সম্পূর্ণ উল্টো। আপনাকে তার বিশেষ ও দারুণ অনুভব করাবার কথা।

৭. আপনার পিতা-মাতা, বন্ধু ও পরিবার

আপনার সকল প্রিয়জনেদের নিয়ে তিনি বিরূপ মন্তব্য করেন। আপনার পরিবার বা বন্ধুদেরকে তার ভালো লাগে না, তিনি কটু মন্তব্য করতেও দ্বিধা করেন না। সকলেরই কিছু না কিছু দোষ তিনি খুঁজে বের করেন এবং আপনাকে প্রায়ই বাঁধা দেন অনেকের সাথে মেলামেশা করতে।

মনে রাখবেন, নির্যাতন সবসময়ে লোক দেখিয়ে হয় না। নির্যাতন মানেই সবসময়ে গায়ে হাত তোলা কিংবা গালাগাল করা না। নিচুস্বরে, নীরবে, কেবল ক্রূর মন্তব্য বা কাজের মাঝ দিয়েও একজন মানুষকে দিনের পর দিন নির্যাতন করা যায়। যদি এই পরিস্থিতির পরিবর্তন চান, তাহলে উদ্যোগ নিতে হবে নিজেকেই। আপনি নিজে যদি নিজের পাশে দাঁড়াতে না পারেন, তাহলে অন্য কেউ পারবে না।

তথ্যসূত্র:ইয়োর ট্যাংগো