খারাপ কাজ না করায় চাবুক দিয়ে মারে, সৌদি থেকে ফিরে বললেন গৃহবধূ
আগৈলঝাড়া প্রতিনিধি: ভাগ্য ফেরাতে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার কল্পনা বিশ্বাস (ছদ্মনাম) নামের এক নারী। কিন্তু সেখানে নিয়ে গিয়ে তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
দেশে ফিরে আসা কল্পনার অভিযোগ, ‘আলসামি সার্ভিস ইন্টার ন্যাশনালের’ মাধ্যমে সৌদি আরব যান তিনি। সেখানে যাওয়ার পর তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এরপর দেওয়া হয় খারাপ কাজের প্রস্তাব। সেই কাজ করতে না চাইলে শুরু হয় মারধর।
কল্পনা বলেন, সৌদি নাগরিক আবু মোহাম্মাদ বাংলাদেশে বসে হানিফ চৌধুরী ও জহির নামের দালালদের মাধ্যমে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে দরিদ্র নারীদের সৌদি আরব পাঠানোর কথা বলে বিক্রি করে দেন। হানিফ চৌধুরী ও জহিরের মাধ্যমে গত ১ জুন রাতে সৌদি আরব যান কল্পনা। সেখানে হোসাইন নামের এক লোক তাকে বাসায় নিয়ে যান। বাসায় গিয়ে তিনি দেখেন, হোসাইনের স্ত্রী সাহেদা ও আট মাসের শিশু সন্তান খালেদকে। দুদিন ভালোই কাটে সেখানে, তৃতীয় দিন থেকে খারাপ প্রস্তাব দিতে থাকেন হোসাইন। তার প্রস্তাবে বাজি না হওয়ায় প্রতিনিয়ত মাধর করতে শুরু করে ও খাবার দেওয়া বন্ধ করে দেয়। মাঝে-মধ্যে দিনে এক বেলা খাবার দিতেন আবার কোনো দিন দিতেন না। এভাবে চলে ১৬ জুন পর্যন্ত।
কল্পনা বিশ্বাস বলেন, ‘সৌদি আরবে ঈদের দিন (১৬ জুন) আমাকে জানানো হয়, “হোসাইনের বন্ধুরা আসবে, তাদের সঙ্গে খারাপ কাজ করতে হবে।” এ কথায় রাজি না হওয়ায় আমাকে চাবুক দিয়ে পিটিয়ে আহত করে এবং বলে, “তোকে ১২ লাখ রিয়াল দিয়ে কিনেছি।” এক সময় চাবুকের মার খেতে খেতে অজ্ঞান হয়ে যাই। জ্ঞান ফিললে আমাকে ওই বাড়ির তৃতীয় তালায় একটা রুমে নিয়ে আটকে রাখে। সেখানে আরও ১৬ জন বাংলাদেশি নারী ছিল।’
কল্পনার বলেন, ‘ওইখানে বসে বাংলাদেশে আমার স্বামী সুশান্ত সরকারকে ফোন করে সব কিছু জানাই। সে আমাকে জানায়, যেভাবে হোক ওইখান থেকে পালিয়ে পুলিশের সহায়তা নিয়ে দেশে ফেরার কথা বলে। রাতে তাদের সাথে কথা বলে ১৭ তারিখ ওখানে থাকা রেশমা নামের এক মেয়েকে জানালায় রশি বেঁধে নিচে নামিয়ে ‘পুলিশ পুলিশ’ বলে চিৎকার করতে বলি। সে রাস্তা দিয়ে পুলিশ পুলিশ বলে চিৎকার করে। আমরাও তৃতীয় তলায় বসে চিৎকার করি। পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।’
কল্পনা বলেন, ‘১৯ জুন বিকেল ৩টার দিকে সৌদি আরবের থানা থেকে হোসাইন আমাকে ছাড়িয়ে রিয়াদে আবু মোহাম্মাদের বাসায় দেওয়ার কথা বলে রিয়াদের বিমানে উঠিয়ে দেন। সেখানে বাংলাদেশি শাহজাহান নামের এক লোক তাকে বিমানবন্দর থেকে নিয়ে যায়। তার কাছ থেকে আবু আবদুল্লাহ রিয়াদ ও তার স্ত্রী আরবি নামের দুজন এসে বাংলাদেশের অফিসে নেওয়ার কথা বলে মেলাজ নামক জায়গায় তার বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে গিয়েও বিপাকে পরতে হয়। রিয়াদ নামের ওই লোক প্রতিদিন মারধর করে ভয়-ভীতি দেখিয়ে দেহ ব্যবসা করানোর চেষ্টা করে। দেহ ব্যবসা না করলে তাকে দশ লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানায়।’
ওই নারী আরও বলেন, ‘এদিকে আমার স্বামী ঢাকায় গিয়ে সৌদিয়ান আবু মোহাম্মাদ ও বাংলাদেশের দালাল হানিফ চৌধুরী ও জহির কাছে যান এবং আমাকে দেশে ফিরিয়ে আনার কথা বলেন। আবু মোহাম্মাদ, হানিফ ও জহির আমার স্বামীর কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করে। পরে ৯০ হাজার টাকায় তারা রাজি হয়। ২৮ জুন বিকেলে ৯০ হাজার টাকা প্রদান করলে ২ জুলাই সকাল ৬টায় সৌদি আরব থেকে বিমানে তুলে দেয়। দুপুর ১টায় এসে ভারতের দিল্লিতে আসি। ওইখানে এক রাত থাকার পরে ৩ জুলাই সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটের বিমানে এসে বাংলাদেশে দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটের সময় বাংলাদেশ এয়ারপোর্টে পৌঁছাই।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশি দালাল হানিফ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কল্পনার স্বামীর সাথে সমাধান হয়েছে। তিনি আমাদের ৯০ হাজার টাকা দিয়েছেন, আমরা তার স্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে এনেছি।’
এ বিষয়ে জানতে আলসামি সার্ভিস ইন্টার ন্যাশনালের মালিক সৌদিয়ান আবু মোহাম্মাদের মুঠোফোনে ফোন করা হয়। তবে সহকারী মাসুম বিল্লাহ ফোন ধরে বলেন, ‘স্যারে অফিসে নাই, কখন আসবে বলা যায় না, এ ব্যাপারে অফিসে এসে কথা বলেন।’